বিয়ের পরেই মেয়েকে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল জামাই। তার দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে খোঁজ মেলেনি। ভাল করে খোঁজখবর না-করেই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আফশোসে দিন কাটাচ্ছিলেন বাঁকুড়া সদর থানার মুগড়া গ্রামের এক দম্পতি। দু’বছর পরে জামাইয়ের খোঁজ মিলতেই খবর দেন পুলিশে। জেরায় জানা যায়, উত্তরপ্রদেশে ১০ হাজার টাকায় স্ত্রীকে বিক্রি করে দিয়েছে জামাই। পুলিশ সেখান থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। আজ শনিবার ধৃতদের বাঁকুড়া আদালতে তোলা হবে। ওই তরুণীও বিচারকের সামনে হাজির হবে।
অভিযুক্ত জিয়ারুদ্দিন খান বীরভূমের ইলামবাজার থানার ইসলামপুরের বাসিন্দা। ওই তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জিয়ারুদ্দিন তাঁদের গ্রামে চাদর, কম্বল ফেরি করতে এসে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ভাব জমিয়েছিল। সে জানিয়েছিল, তার নাম সঞ্জীব রায়, বাড়ি বর্ধমানের সেহারাবাজারে। মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার সাত দিন পরেই জামাই জানায়, নতুন চাকরি পেয়ে সে স্ত্রীকে নিয়ে উত্তর প্রদেশ যাবে। তারপর থেকেই সে বেপাত্তা, মেয়েরও খোঁজ নেই। সেহারাবাজারে খোঁজ করতে গিয়ে ওই পরিচয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তরুণীর বাবা জানান, ১৫ জুলাই এক পরিচিত ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে জানান, গঙ্গাজলঘাটির বিহারজুড়ি গ্রামে তিনি জাহিরুদ্দিন ওরফে সঞ্জীবকে দেখেছেন। “সঙ্গে সঙ্গে আমি সেখানে যাই। তাকে দেখেই চিনতে পারি। কিন্তু ও না চেনার ভান করছিল। পুলিশে খবর দেওয়া হয়।”
পুলিশের দাবি, জিয়ারুদ্দিনকে চেপে ধরতেই সে সব কবুল করেছে। স্ত্রীকে নিয়ে সে গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের আমরুহা জেলার ছাইমিলখ গ্রামে। সেখানে মেয়ে পাচারকারী চক্রের অন্যতম পান্ডা আশা দেবীর মাধ্যমে সম্বল জেলার শিবপুরি এলাকার ভূদেব শর্মার কাছে স্ত্রীকে বিক্রি করে দেয়।
জিয়ারুদ্দিন ও ওই তরুণীর বাবাকে নিয়ে বাঁকুড়া পুলিশের একটি দল উত্তরপ্রদেশে যায়। আশা দেবী ও ভূদেবকে গ্রেফতার করে আনা হয়। ভূদেবের বাড়িতেই ওই তরুণীকে পাওয়া গিয়েছে। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শবরী রাজকুমার কে বলেন, “ওই তরুণীকে ১০ হাজার টাকায় কিনে তাকে বিয়ে করেছিল ভূদেব। তিনদিনের ট্রানজিট রিমান্ডে শুক্রবার উত্তরপ্রদেশ থেকে তাদের দু’জনকে আনা হয়েছে।”
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, জিয়ারুদ্দিন আগেও বাঁকুড়া জেলারই পাত্রসায়রে একই ভাবে বিয়ে করে এক তরুণীকে পাচার করে দিয়েছিল। সেই ঘটনায় পরে পুলিশ জিয়ারুদ্দিন ও আশা দেবীকে গ্রেফতারও করেছিল। জামিন পেয়ে ফের তারা কারবারে নেমেছিল।
তরুণীর বাবা আক্ষেপ করে বলেন, “না জেনে মেয়েকে নারী পাচারকারীর হাতে তুলে দিয়েছিলাম। বিয়ের আগে খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy