পোড়ামাটির টালি তৈরির ব্যস্ততা শিল্পীদের। ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র
কলকাতা থেকে মফস্সলের মণ্ডপে তালড্যাংরার পাঁচমুড়ার পোড়ামাটির কাজ বরাবর সমাদৃত হয়েছে। তাই পুজো এলেই পাঁচমুড়ার পোড়ামাটির শিল্পীদের ব্যস্ততা বাড়ে যায়। এ বারও তাই। মেদিনীপুরের আনন্দময়ী বাজারের মণ্ডপ সাজছে এ বার পোড়ামাটির টালিতে।
প্রতিমা থেকে মণ্ডপ সবেতেই পাঁচমুড়ার এই মৃৎশিল্পীদের ডাক পড়ে। তবে এ বার এখান থেকে মেদিনীপুরে ৪০০০ পোড়ামাটির টালি যাচ্ছে। তাই মৃৎশিল্পী কাঞ্চন কুম্ভকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল দাদা নাড়ুগোপাল ও মা বিনোদিনীদেবীকে নিয়ে তিনি টালি তৈরির কাজে ব্যস্ত। বাড়ির ভিতরে, উঠোনে এখন টেরাকোটা টালির ছড়াছড়ি। তাল তাল মাটি দুই ভাই ছাঁচে ফেলে গড়ছেন টেরাকোটার টালি। কিছুটা রোদে শুকিয়ে ভাটির আগুনে পোড়াচ্ছেন। এ ভাবে ছেলেদের সাহায্য করছেন বিনোদিনীদেবী। তাঁরা এখন দিন-রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন।
আর সময় নেই। কাজে হাত লাগিয়েছেন বৃদ্ধাও। —নিজস্ব চিত্র
কাঞ্চন বলেন, “মাস দেড়েক আগে এক জনের মাধ্যমে এই কাজের বরাত এসেছে। হাতে সময় কম। তার উপরে মেঘ-বৃষ্টিতে রয়েইছে। এখন কার্যত নাওয়া খাওয়া ভুলে তিনজনে কাজ করছি। ঠিক সময়ে জোগান দিতে হবে তো!” টালির কাজে ফুটে উঠছে বিষ্ণুপুরের মন্দিরের অনুপম টেরাকোটার কাজ। কোনওটির মাপ ৩ ইঞ্চি বাই ৩ ইঞ্চি, কোনওটি মাপে তার দ্বিগুণ। ছবিতে কীর্তন গানে কেউ মাতোয়ারা, কেউ বা নৃত্যরত ভঙ্গিমায়। আরও অনেক নক্শার কাজ রয়েছে। কাঞ্চন জানালেন, কাজ অবশ্য অনেকটাই তাঁরা সেরে ফেলেছেন। পুজোর ১০ দিন আগে সব দিয়ে দিতে হবে।
সারা বছর পোড়ামাটির হাতি-ঘোড়া, মনসার চালি থেকে ছাইদানি, পুজোর ঘট, দেওয়ালি প্রদীপ ও নানা রকম পুতুল তৈরি করেন এই শিল্পীরা। তারই মাঝে অপেক্ষায় থাকেন, কবে বড় কাজের বরাত আসবে। তখনই সুদিনের মুখ তাঁরা দেখেন। কিন্তু সে আর কতদিন! উমা শ্বশুর ঘরে ফিরলেই, পাঁচমুড়ার শিল্পীরা সেই আঁধারেই পড়ে থাকেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy