জখমদের চিকিৎসা চলছে রামপুরহাট হাসপাতালে। (ডান দিকে) বোমার আঘাতে জখম শিশু।—নিজস্ব চিত্র
তাস খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য বিবাদ। আর সেই বিবাদই রাজনৈতিক সংঘর্ষের চেহারা নিল। সোমবার সকালে মাড়গ্রাম থানার বামদেবপুরের ঘটনা। তৃণমূল-সিপিএম দু’পক্ষের বোমাবাজির ওই ঘটনায় পাঁচ জন জখম হয়েছেন। জখমদের মধ্যে দেড় বছরের এক শিশু ও তার মা-ও রয়েছেন। এক জন রামপুরহাট হাসপাতালে, বাকিরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সিপিএমের দাবি, তৃণমূলের ছোড়া বোমায় আহত হয়েই তাঁদের ওই কর্মী-সমর্থকদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ভজেন মাল নামে এক যুবকের আঘাত গুরুতর। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, সিপিএমের হামলায় তাঁদের কয়েক জন কর্মী-সমর্থকও আহত হয়েছেন। এসডিপিও (রামপুরহাট) কোটেশ্বর রাও বলেন, “পুলিশ দু’পক্ষের সঙ্গেই কথা বলছে। বোমাবাজির ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে।” দু’পক্ষের কেউ-ই রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নির্বাচনের পর থেকেই দখলবাটি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বামদেবপুর এলাকায় উত্তেজনা ছিল। ভোটের ফলাফলে সিপিএম পঞ্চায়েতটি দখল করে। ফলাফল ছিল, বামেরা ১০, তৃণমূল ৪ ও কংগ্রেস ৩। বামদেবপুরের নির্বাচিত সদস্যও সিপিএমের। কিন্তু ভোটের সময় থেকেই বামদেবপুরে সিপিএম ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নিত্য বিবাদ লেগেই ছিল। কয়েকটি বোমাবাজির ঘটনাও ঘটেছে। গত মে মাসে ফের বোমাবাজি হওয়ার পরে গ্রামের মালপাড়ায় এ বার কালীপুজো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। একপক্ষ কালীপুজো করতে চাইলেও আর এক পক্ষের তাতে আপত্তি ছিল। উত্তেজনা থাকায় পুলিশও পুজোর অনুমতি দেয়নি। সেই নিয়ে এলাকায় একটা চাপা টেনশন ছিলই। রবিবারের একটি ঘটনার পরে এ দিন তা বোমাবাজির রূপ নেয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভজেন মাল, মথেন মাল-সহ দেড় বছরের শিশু নিয়ে জখম শীলা মালদের অভিযোগ, তৃণমূল কর্মী প্রভাস মাল, পরীক্ষিৎ মাল, ফড়িং মাল, কিশোর মাল, গৌতম মাল, ঝুলা মালরা এ দিন এলাকায় বোমাবাজি করে। তাঁদের দাবি, “হামলাকারীদের নেতৃত্বে রয়েছেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থীর কাছে হেরে যাওয়া তৃণমূল নেতা পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল।” গুরুতর জখম ভজেন মাল বলেন, “আমি বাড়ি লাগোয়া ডাঙা ধরে বাড়ি যাচ্ছিলাম। তখনই গৌতম মাল এবং ঝুলা মাল আমাকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। আমি লুটিয়ে পড়ি।” অন্য দিকে, তমালীদেবী জানিয়েছেন, দু’দিন আগে গ্রামে সিপিএমের পক্ষ থেকে একটি জাঠা বেরিয়েছিল। তার পাল্টা হিসেবেই তৃণমূলের এই হামলা। তাঁর অভিযোগ, “জাঠা চলে যাওয়ার পরে সন্ধ্যায় গ্রামে পূর্ণচন্দ্রবাবু দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিটিং করেন। তখনই ওরা গ্রামে গণ্ডগোল পাকানোর পরিকল্পিত করে।” এ দিন সেই পরিকল্পনা মাফিকই তাস খেলাকে কেন্দ্র করে দু’দলকে লড়িয়ে দেওয়া হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ।
এ দিন সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা যায় প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এলাকা জুড়ে যথেচ্ছ বোমাবাজির চিহ্ন। বাসিন্দাদের দাবি, সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বোমাবাজি চলেছে। পরে রামপুরহাটের সিআই-এর নেতৃত্বে মাড়গ্রাম থানার পুলিশ এলাকায় পড়ে থাকা বেশ কিছু বোমা উদ্ধার করে। পাড়া পুরুষ-শূন্য, মহিলারা জটলা করছেন গ্রামের মোড়ে মোড়ে। অধিকাংশ টিনের ছাউনির বাড়ি বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত। সিপিএম সমর্থক নটু মালের বাড়ির আসবাবপত্র বোমার আঘাতে ভেঙে গিয়েছে। তৃণমূল সমর্থক পরীক্ষিৎ মালের বাড়ির টিনের ছাউনি বোমার আঘাতে কিছুটা উড়ে গিয়েছে। বোমা পড়েছে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের তমালী মালের বাড়িতেও। কম-বেশি দশটি বাড়ি বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত।
বাড়িতে গিয়ে অবশ্য তৃণমূল কর্মী প্রভাস মাল, পরীক্ষিৎ মাল, প্রসেন মালদের দেখা মেলেনি। প্রভাসবাবুর মা পুতুলদেবী দাবি করেন, “রবিবার সকালে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র লাগোয়া এলাকায় সকাল থেকে তাস খেলার নাম করে জুয়া খেলা চলছিল। তাতে ছেলে বাধা দেয়। সেই কারণেই প্রভাসকে মঙ্গল মাল-সহ অনেকে মারধর করে। এ দিন সকালে ওরা বাড়িতে বোমাও ছোড়ে।” পূর্ণচন্দ্রবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর দেখা মেলেনি। মোবাইলে ফোনও বন্ধ ছিল। তাঁর মেয়ে ইতি মণ্ডল বলেন, “বাবা কোথায় গিয়েছেন, জানি না।” ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার বা আটক করেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy