Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

পুরীতে যাত্রা শুরু, নীলকণ্ঠ বার্তা দেয় মাহেশে

শ্রী জগন্নাথ সবার ঈশ্বর! জাতধর্ম নির্বিশেষে সব ভক্তের কাছে পৌঁছতেই বছরে একটি বার মন্দিরের অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে রথে সবার মাঝে প্রকট হন তিনি। তবু তাঁর লীলা চাক্ষুষ করতেও বলে-বীর্যে দড় হওয়া চাই।

রথযাত্রা উপলক্ষে সেজে উঠেছে পুরীর মন্দির। নিজস্ব চিত্র

রথযাত্রা উপলক্ষে সেজে উঠেছে পুরীর মন্দির। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৭
Share: Save:

রথের পুরী যিনি দেখেছেন, রথ এলেই পুরীর শ্রীমন্দিরের আশপাশের ছাদগুলোর ছবি তাঁর চোখে ভাসবেই!

শ্রী জগন্নাথ সবার ঈশ্বর! জাতধর্ম নির্বিশেষে সব ভক্তের কাছে পৌঁছতেই বছরে একটি বার মন্দিরের অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে রথে সবার মাঝে প্রকট হন তিনি। তবু তাঁর লীলা চাক্ষুষ করতেও বলে-বীর্যে দড় হওয়া চাই। রথে জগন্নাথদেবের যাত্রাপথের লাগোয়া হোটেল-সরকারি অফিস-ব্যাঙ্কের ছাদ মায় কোনও সিঁড়ির চাতালে ঠাঁই পেতেও কয়েক হাজার টাকা গুনতে হবে।

বাঙালি অস্মিতা অনেক কিছু নিয়ে অন্য ভাষাভাষীদের সঙ্গে টক্কর দিতে পারে ঠিকই, তবে রথযাত্রায় পড়শি রাজ্যের মহিমার সামনে নতজানু। দ্বাদশ শতকীয় জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠার কয়েকশো বছরের মধ্যে ৬৩২ বছর আগে বাংলার মাহেশেও জগন্নাথ বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। প্রাচীনত্বে পুরীর পরেই মাহেশের রথ। তবু মাহেশের সেবায়েত তমালকৃষ্ণ অধিকারীও মানেন, রথযাত্রার দিনে পুরীর রথ ছাড়ার আগে কিন্তু মাহেশের রথ এক চুলও এগোবে না। ফোন-যুগের কল্পনারও বহু আগে আবহমান কাল ধরে এটাই হয়ে আসছে। কী ভাবে? মাহেশের রথের ধ্বজে বসে এক নীলকণ্ঠ পাখি কোত্থেকে ঠিক সঙ্কেত পায়, পুরীর রথ যাত্রা শুরু করেছে। সেই নীলকণ্ঠ উড়ে গেলেই মাহেশের রথও চলতে শুরু করবে। মাহেশের সেবায়েতের ব্যাখ্যা, ‘‘এ নীলকণ্ঠকে মনের চোখেই দেখা যায়! দেখব বলে হাঁ করে রথের চুড়োর দিকে চেয়ে থাকলেই দেখা মিলবে না।’’ পুরীর রথকে ঘিরে এই বিশ্বাসের সংস্কার বহমান দেশবাসীর ধমনীতে। ‘‘পুরী তো চার ধামের অন্যতম। তাই পুরীর রথের মহিমা এগিয়ে থাকবেই,’’ বলছেন ভুবনেশ্বরের জগন্নাথ-বিশেষজ্ঞ সুরেন্দ্র মহাপাত্র।

পুরাণ-ইতিহাসের উপাদানগুলি মিশে গিয়েও পুরীর জগন্নাথের মধ্যে জাতবর্ণ নির্বিশেষে সব ভারতীয়ের এক প্রতিনিধির সন্ধান করে। প্রাচীন উপকথা বলছে, মালবের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন বিষ্ণুর একটি রূপ নীলমাধবের খোঁজে শামিল হতেই জগন্নাথের সন্ধান মেলে। ইন্দ্রদ্যুম্নের ব্রাহ্মণ পুরোহিত বিদ্যাপতি শবররাজ বিশ্বাবসুর বাড়িতে থাকাকালীনই জানতে পারেন, শবরেরা সেই দেবতার পুজো করেন। ইতিহাসবিদেরাও বলেন, শবরজাতির দেবতা নীলমাধবকেই পরে জগন্নাথ রূপে আত্তীকরণ করেছিল ব্রাহ্মণ্যবাদ। জগন্নাথ সেবাতেও তাই দয়িতাপতি বলে পরিচিত এক শ্রেণির শবর বংশোদ্ভূতদের অধিকার বহাল রয়েছে। জার্মান ভারততত্ত্ববিদ এরমান কুলকে এবং কলকাতার জগন্নাথ-গবেষক শেখ মকবুল ইসলাম জগন্নাথ-সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। ২০১৫ সালে ওড়িশা সরকারের নবকলেবর পুরস্কারও পান মকবুল সাহেব।

কারও কারও মত, জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরে অহিন্দুদের প্রবেশে নিষেধের নেপথ্যে কিছু রাজনৈতিক কারণ বা পুরনো ঐতিহাসিক সংঘাতের ভূমিকা রয়েছে। তবে ভক্তের চোখে জগন্নাথের রথযাত্রা, ঈশ্বরের মানবলীলার প্রতীক। মন্দিরে বদ্ধ না-থেকে সবার মাঝে ঈশ্বরের পথ চলার মধ্যেও তাঁর সর্বজনীন হতে চাওয়ার তাগিদ। আর উৎকলের জগন্নাথ কার্যত রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। উৎকলবাসীরা মানেন তিনি শুধু ইষ্টদেবতা নন, রাষ্ট্রদেবতাও বটে। কোনও দেবতার এমন দাপট ভূভারতে দুর্লভ।

অন্য বিষয়গুলি:

Puri Mahesh Rath Yatra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy