Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

হাসপাতালে তিন মাস তালাবন্দি মনোরোগিণী

বার্ন ইউনিটের একটি কেবিন। দরজার বাইরে ঝুলছে তালা। ভিতর থেকে কখনও ভেসে আসছে আর্তনাদ, কখনও গর্জন। জানলা দিয়ে উঁকি মারলে দেখা যায়, বিবস্ত্র অবস্থায় এক মহিলা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এক-দু’দিন নয়, প্রায় তিন মাস ধরে ওই ভাবে অন্ধকার ঘরে আটকে রয়েছেন তিনি। জানলা দিয়ে দেওয়া হয় খাবার। ঘরেই চলে মলমূত্র ত্যাগ।

—নিজস্ব চিত্র

—নিজস্ব চিত্র

নারায়ণ দে
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

বার্ন ইউনিটের একটি কেবিন। দরজার বাইরে ঝুলছে তালা। ভিতর থেকে কখনও ভেসে আসছে আর্তনাদ, কখনও গর্জন। জানলা দিয়ে উঁকি মারলে দেখা যায়, বিবস্ত্র অবস্থায় এক মহিলা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এক-দু’দিন নয়, প্রায় তিন মাস ধরে ওই ভাবে অন্ধকার ঘরে আটকে রয়েছেন তিনি। জানলা দিয়ে দেওয়া হয় খাবার। ঘরেই চলে মলমূত্র ত্যাগ।

এই কি চিকিৎসার পদ্ধতি? প্রশ্নের জবাবে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার রেজাউল মিনজের দাবি, “ওই মহিলাকে মাস তিনেক আগে জয়গাঁ থানা থেকে হাসপাতালে দিয়ে যায়। মাঝেমধ্যেই হিংস্র হয়ে ওঠেন, তাই ঘরে রাখা হয়েছে।’’ হাসপাতালের চিকিৎসক রাজা সাহা বলেন, “একদিন দেখি মহিলা ওয়ার্ডের সিঁড়ির জানলার উপরে উঠে গিয়েছেন। বাধ্য হয়ে আমি তাঁকে নামিয়ে আনি। উনি আমাকে আঁচড়ে দেন।” সুপারের বক্তব্য, ওঁকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে ১৪ মে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনও কিছু করেনি প্রশাসন।

জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ শর্মাও বলেন, ‘‘জেলা হাসপাতালে মনোরোগীদের জন্য পরিকাঠামো নেই, জানানো হয়েছে জেলাশাসককে।’’ ওই মহিলার যদি কোনও ক্ষতি হয়? ‘‘এর বেশি বলব না,’’ বলে ফোন কেটে দেন তিনি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথিও বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছুই বলব না।’’

কী বলছে জেলা প্রশাসন? আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক সমীরণ মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

চিকিৎসকদের একাংশ জানান, কোনও ভাবেই মানসিক রোগীকে বিনা চিকিৎসায় তালা বন্ধ করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা যায় না। জেলা হাসপাতালেও মানসিক রোগীদের ওয়ার্ড নেই কেন, প্রশ্ন তাঁদের। মনোরোগীদের নিয়ে কাজ করেন সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আর পাঁচটা রোগীকে যে ভাবে পরিচর্যা করা হয়, সে ভাবে মনোরোগীরও যত্ন করতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, মানসিক রোগীদের পরিচর্যা, চিকিৎসার গাইডলাইন নেই স্বাস্থ্য দফতরের। তাই এমন অমানবিক আচরণ করা চলে রোগীদের সঙ্গে।

আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু বলেন, “বারবার জানিয়েছি, হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় মনোরোগীদের রাখা হয়। মানসিক চিকিৎসক নিয়োগ করা দরকার।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE