মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন। —নিজস্ব চিত্র।
জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্টের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে গত শনিবার আত্মপ্রকাশ করেছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন। ওই সংগঠন আপাত ভাবে ‘অরাজনৈতিক’ হলেও নেপথ্যে যে তৃণমূল রয়েছে তা নিয়ে বিশেষ লুকোছাপা নেই। তার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের আরও একটি সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন’ ময়দানে নেমে মঙ্গলবার দাবি করল, তারাই ‘আসল সরকারপন্থী’ সংগঠন। শুধু এই দাবি করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। তাদের এ-ও বক্তব্য, গত শনিবার যে সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছিল, তাদের মাথারাই ‘থ্রেট কালচার’-এর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত। ফলে তিন সংগঠনের লড়াইয়ে সব মিলিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জল আরও ঘোলা হয়ে উঠল বলে মনে করছেন অনেকে।
প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন আদতে তৃণমূলের চিকিৎসক সেল। তাদেরই জুনিয়র ডাক্তারদের শাখা এই প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন। কৌতূহলের বিষয়, শনিবার জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন আত্মপ্রকাশ করার পরে মঙ্গলবার প্রোগ্রেসিভ অ্যাসোসিয়েশনকে মাঠে নামানোর নেপথ্যে কারা রয়েছেন? সূত্রের খবর, এই সংগঠনের মধ্যে রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেনের প্রভাব রয়েছে। তিনিই নতুন করে প্রোগ্রেসিভ জুনিয়রদের ময়দানে নামিয়েছেন। যদিও শান্তনু তা অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’’
উল্লেখ্য, আরজি কর পর্বের গোড়া থেকে প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন শান্তনু। ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা আরজি করের রোগীকল্যাণ সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায়ের বিরুদ্ধেও। যার জেরে শান্তনুকে দলের মুখপাত্র পদ থেকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল। মাঝে শান্তনু ‘স্বাস্থ্য রাজনীতি’ থেকে নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে রাখলেও মঙ্গলবারের খবর, তিনি আইএমএ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই ময়দানে নামল ‘আসল সরকারপন্থী’ বলে দাবি করা প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন।
মঙ্গলবার ময়দানে নামা সংগঠনটি দাবি করেছে, গত ২০১৩ সাল থেকে তাদের সংগঠন চলছে। বর্তমানে যে কমিটি সংগঠন পরিচালনা করছে, তা তৈরি হয় ২০২৩ সালে। এই সংগঠন জানিয়েছে, শীঘ্রই শহরের প্রাণকেন্দ্রে বড় কর্মসূচি তারা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে এই সংগঠন দাবি জানিয়েছে, যারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষতি করছে তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
নতুন করে ‘পুরনো’ সংগঠন ময়দানে নামতেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গত শনিবার আত্মপ্রকাশ করা সংগঠনটি। জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম আহ্বায়ক ডাক্তার শ্রীশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা যখন ফ্রন্টের মুখোশ খুলে দিতে নেমেছি, তখন কি প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের ‘বিটিম’ হয়ে মাঠে নামল?’’
পাল্টা জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘কে ময়দানে নামছে আমাদের দেখার দরকার নেই। আমাদের লক্ষ্য একটাই, নির্যাতিতার জন্য বিচার। সেই লক্ষ্যে আমাদের লড়াই চলবে।’’
আরজি কর-পর্বেই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রভাবের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছিল। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যুক্ত এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অনেকের বক্তব্য, গত শনিবার যে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করেছিল, তাদের মধ্যে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রভাব রয়েছে। আবার প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন ময়দানে নেমে সেই প্রবাভকেই খণ্ডন করতে চাইছে।
গত ৯ অগস্টের পর থেকে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টই ছিল আন্দোলনের নেতৃত্বে। বলা ভাল, দেবাশিস, অনিকেত মাহাতো, রুমেলিকা কুমারেরাই হয়ে উঠেছিলেন মুখ। তাঁদের ডাকেই নাগরিক আন্দোলন নজিরবিহীন চেহারা নিয়েছিল। কিন্তু পুজোর আগে থেকেই সেই নাগরিক আন্দোলন স্তিমিত হচ্ছিল। আমরণ অনশন প্রত্যাহারের পরে সেই উদ্দীপনা আরও খানিকটা নেমে যায়। তার পর দেখা গেল পুজো মিটতেই আন্দোলনের পারদ সে ভাবে এখনও না চড়লেও ময়দানে জুনিয়র ডাক্তারদের আরও দু’টি সংগঠন হাজির হয়ে গেল। অনেকের মতে, জুনিয়র জাক্তারদের মধ্যে যে ‘ঐক্য’ গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে দেখা গিয়েছিল, সেই সম্পর্কেও ভিন্ন ধারণা তৈরি হতে বাধ্য জনমানসে। কোন সংগঠনের নেপথ্যে কারা, সেই প্রশ্ন উঠতেও শুরু করে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy