Advertisement
E-Paper

কট্টর ফাঁসি-বিরোধী ইন্দিরা! জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন আইনজীবীর বাক্যে বিদ্ধ হন স্বয়ং প্রধান বিচারপতিও

ইন্দিরা সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবীদের মধ্যে অন্যতম। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সওয়াল করেছেন তিনি। ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল নিযুক্ত হন তিনি।

ইন্দিরা জয়সিংহ।

ইন্দিরা জয়সিংহ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০১
Share
Save

ইন্দিরা জয়সিংহকে নিজেদের আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর-মামলার শুনানিতে এই প্রবীণ আইনজীবীকেই সওয়াল করতে দেখা যাবে। কিন্তু কে এই ইন্দিরা, তা নিয়ে আইনজীবী মহলে মোটামুটি একটি স্পষ্ট ধারণা থাকলেও জনমানসে তাঁকে নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত দিনের শুনানিতে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের’ হয়ে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী গীতা লুথরা। মঙ্গলবার তাদের হয়ে সওয়াল করবেন ইন্দিরা। আর চিকিৎসকদের আর এক সংগঠন, ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর হয়ে সওয়াল করবেন আইনজীবী করুণা নন্দী এবং সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। এই সংগঠনও ওই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

ইন্দিরা সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবীদের মধ্যে অন্যতম। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল নিযুক্ত হন তিনি। দেশের প্রথম মহিলা হিসাবে সেই প্রথম কেউ ওই পদে বসেছিলেন। আইনজীবী হিসাবে নিজের কর্মজীবনে তো বটেই, আদালতের বাইরেও তাঁকে বহু বার মেয়েদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে। যে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট শিশুর স্বাভাবিক অভিভাবক হিসাবে পিতার পাশাপাশি মায়ের ভূমিকাকেও স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাতেও সওয়াল করেছিলেন ইন্দিরা। তা ছাড়া তিস্তা শেতলবাদের বিরুদ্ধে যখন আর্থিক তছরুপের অভিযোগ ওঠে, তখনও এই মহিলা সমাজকর্মীর হয়ে আদালতে সওয়াল করেছিলেন ইন্দিরা।

সম্প্রতি আরজি কর-কাণ্ডের আবহে ফের ধর্ষকদের ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন দেশের বহু মানুষ। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে যিনি সওয়াল করবেন সেই ইন্দিরা অবশ্য ফাঁসির কট্টর বিরোধী। দিল্লিতে চলন্ত বাসে তরুণীকে গণধর্ষণ করার ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ। সেই সময়েই ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছিলেন বহু মানুষ। মেয়ের ধর্ষকদের ফাঁসি চেয়েছিলেন নির্যাতিতার মা আশাদেবীও। সেই সময় ইন্দিরা সনিয়া গান্ধীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আশাদেবীর উদ্দেশে জানিয়েছিলেন, স্বামী রাজীব গান্ধীর হত্যাকারী নলিনী মুরুগানকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন সনিয়া। এ ক্ষেত্রে সনিয়াকে অনুসরণ করার জন্য আশাদেবীকে অনুরোধ করেছিলেন ইন্দিরা। তিনি বলেছিলেন, “আমি আশাদেবীর যন্ত্রণা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তাঁকে অনুরোধ করছি যে, যে ভাবে সনিয়া গান্ধী নলিনীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, তিনি মৃত্যুদণ্ড চান না, সে ভাবেই আপনি ক্ষমা করে দিন। আমরা আপনার সঙ্গে আছি। কিন্তু আমরা মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে।”

সম্প্রতি দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে সমালোচনায় বিদ্ধ করে সংবাদ শিরোনামে আসেন ইন্দিরা। গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে গণেশপুজোর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সস্ত্রীক প্রধান বিচারপতির পাশে দাঁড়িয়ে আরতি করছেন প্রধানমন্ত্রী, এই ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তার পরেই সমাজমাধ্যমে ওই ছবি শেয়ার করে ইন্দিরা লেখেন, “প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের মধ্যে যে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি, ভারতের প্রধান বিচারপতি তার সঙ্গে আপস করেছেন। প্রধান বিচারপতির প্রতি যে আস্থা, তা নষ্ট হয়েছে।” এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের বার কাউন্সিলকে প্রকাশ্যে নিন্দা জানানোর আর্জিও জানান ইন্দিরা। নিজের পোস্টে তিনি ট্যাগ করেন আর এক প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বলকে। ঘটনাচক্রে, গত দিনের শুনানির মতো মঙ্গলবারও রাজ্যের হয়ে সওয়াল করবেন সিব্বল। অর্থাৎ, পেশাজগতের সতীর্থ সিব্বলের সঙ্গেই তর্ক এবং যুক্তির যুদ্ধে নামতে হবে ইন্দিরাকে। আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির এজলাসে দুই প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ আইনজীবীর আইনি লড়াইয়ে সরগরম হবে আদালতকক্ষ।

ইন্দিরা মানবাধিকার রক্ষা নিয়েও বার বার সরব হয়েছেন। ভোপালে গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে সওয়াল করেছিলেন তিনি। মানবাধিকার রক্ষা এবং বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত নাগরিকদের কাছে আইনি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮১ সালে স্বামী তথা প্রখ্যাত আইনজীবী আনন্দ গ্রোভারের সঙ্গে ‘লইয়ারস কালেকটিভ’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করেছিলেন ইন্দিরা। বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংস্থাটির লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। যদিও বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

আরও একটি কারণে ইন্দিরার ভূমিকার কথা স্বীকার করেন দেশের আইনজীবীদের অনেকে। সুপ্রিম কোর্টের শুনানি যাতে ‘লাইভ স্ট্রিমিংয়ের’ মাধ্যমে সাধারণ মানুষও দেখতে পারেন, তার জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন ইন্দিরা। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালার বেঞ্চ ইন্দিরার আর্জিকে মান্যতা দেওয়ার কথা জানায়। বর্তমানে ‘লাইভ স্ট্রিমিংয়ের’ মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কিছু মামলার শুনানি ঘরে বসেই দেখতে পারেন সাধারণ মানুষ। আরজি করের ঘটনা নিয়ে শীর্ষ আদালত যে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে, তার শুনানিও সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ বিতর্কেই বার বার ভেস্তে যাচ্ছে রাজ্যের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক। শনিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে বসার আগে জুনিয়র ডাক্তারেরা ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ বা সরাসরি সম্প্রচারের দাবি তোলেন। শেষমেশ ওই সরাসরি সম্প্রচার সংক্রান্ত শর্তের গেরোতেই ভেস্তে যায় বৈঠক। ‘লাইভ স্ট্রিমিংয়ের’ দাবিতে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকদের হয়ে মঙ্গলবার সওয়াল করতে দেখা যাবে ইন্দিরাকে।

Indira Jaising Supreme Court Junior Doctor CJI DY Chandrachud Kapil Sibal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।