মালাবদল: চিন্ময় ও লক্ষ্মীর বিয়ে। ছবি: পাপন চৌধুরী
বাবা-মাকে হারিয়ে ‘ঘরছাড়া’ হয়েছিলেন যখন, তখন বয়স মাত্র চার। সতেরো বছর পরে রবিবার আবার ‘বাড়ি’র পথে পা বাড়ালেন লক্ষ্মী সাউ। গায়ে লাল বেনারসি। মাথায় সিঁদুর। অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া লক্ষ্মীকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে এলেন আসানসোলের সূর্য সেন পার্কের বাসিন্দা চিন্ময় মুখোপাধ্যায়।
কিন্তু হঠাৎ করে শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা হিসেবে অনাথ আশ্রমই কেন? পেশায় একটি বেসরকারি সংস্থার আধিকারিক, বছর একত্রিশের চিন্ময় জানান, বাড়িতে বিয়ের জন্য দেখাশোনা চলছিল। এমন সময়ে মনে হয়, অনাথ আশ্রমের কোনও মেয়েকেই যদি ঘরের বউ করে আনা যায়! চিন্ময়ের কথায়, ‘‘ভাবলাম, আশ্রমে বড় হওয়া মেয়েরা তো ছোট থেকেই পরিবার পায় না। তেমনই কোনও যদি পাত্রী হয়, তা হলে বাবা, মা আর আমার ভালবাসায় বাড়ি পাবে, পরিবারও।’’
এর পরে এক দিন অফিস-আড্ডায় নিজের ভাবনার কথা চিন্ময় জানান সহকর্মী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাপসই খোঁজ দেন ইসমাইল এলাকার ওই আশ্রমটির। যোগাযোগ করা হয় আশ্রমের আধিকারিক সাহানা মণ্ডলের সঙ্গে। বছর একুশের লক্ষ্মীর সঙ্গে চিন্ময়ের দেখাশোনা সেখানেই। সাহানাদেবী জানান, পাত্রের বিষয়ে খোঁজখবর করে বিয়ের দিন ঠিক করা হয়। ছেলের পছন্দে সম্মতি জানান বাবা নীহারবাবু ও মা অনিতাদেবীও।
বিয়ের তোড়জোড় থেকে অতিথি আপ্যায়ন, যাবতীয় খরচ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে আশ্রমে, তখনই বিষয়টি জেনে এগিয়ে আসে ডিপোপাড়া দক্ষিণা কালীমন্দির কমিটি। কমিটির তরফে মলয় মজুমদার বলেন, ‘‘এমন বিয়েতে পাশে থাকব, এটাই তো স্বাভাবিক।’’ পাত্রীর জন্য গয়না জোগাড় করেন সাহানাদেবী।
দিন পনেরোর প্রস্তুতি শেষে এল সেই দিনটা। এ দিন সকাল থেকেই চিন্ময়ের বাড়িতে ব্যস্ততা। টাঙানো হচ্ছে রঙিন আলো। নাগাড়ে বাজছে বিসমিল্লার সানাই। সকাল সকাল হয়ে গেল বিয়ের রেজিস্ট্রি। লক্ষ্মীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন আশ্রমেরই এক জন। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ডিপোপাড়া কালীমন্দিরের মণ্ডপেই শুরু হল সামাজিক অনুষ্ঠান। বউমার কথা বলতেই অনিতাদেবীর বক্তব্য, ‘‘ছেলের পছন্দে আমরা ভীষণ খুশি। মেয়ে বাড়িতে এল।’’ লক্ষ্মীর কথায়, ‘‘এমন হতে পারে স্বপ্নেও ভাবিনি। চেষ্টা করব, বাড়ির সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে।’’
বিয়ে শেষে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়ায় পরিবেশনের ভূমিকা নিল আশ্রমের খুদে আবাসিকেরা। সাহানাদেবী নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করে বললেন, ‘‘বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে লক্ষ্মী যখন আশ্রমে এসেছিল, তখন ওর বয়স চার। এখন আবার বাড়ি যাচ্ছে। আমরা সবাই খুশি।’’ লক্ষ্মী বলে ওঠেন, ‘‘মাঝেমাঝে যাব কিন্তু আশ্রমে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy