Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
হাসানের কথায় থ পুলিশ

সেলে বসে মোবাইলে সদা হাজির আফতাব

মারাত্মক এক অপরাধের সঙ্গে দু’জনেরই নাম জড়িয়ে। এক জন ফেরার হয়ে বিহারের ঔরঙ্গাবাদে ডেরা বেঁধেছিল, ছোট ব্যবসায়ীর ভেক ধরে। অন্য জন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। অথচ তাদের মধ্যে নিয়মিত যখন-তখন মোবাইলে কথাবার্তা হতো! যা জেনে গোয়েন্দাদের চোখ কপালে তো বটেই, তাঁরা রীতিমতো প্রমাদ গুনছেন।

আফতাব আনসারি

আফতাব আনসারি

সুরবেক বিশ্বাস ও মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

মারাত্মক এক অপরাধের সঙ্গে দু’জনেরই নাম জড়িয়ে। এক জন ফেরার হয়ে বিহারের ঔরঙ্গাবাদে ডেরা বেঁধেছিল, ছোট ব্যবসায়ীর ভেক ধরে। অন্য জন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। অথচ তাদের মধ্যে নিয়মিত যখন-তখন মোবাইলে কথাবার্তা হতো! যা জেনে গোয়েন্দাদের চোখ কপালে তো বটেই, তাঁরা রীতিমতো প্রমাদ গুনছেন।

প্রথম ব্যক্তি হাসান ইমাম। দ্বিতীয় জন আফতাব আনসারি। চোদ্দো বছর আগে কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হানার মামলায় দোষী সাব্যস্ত আফতাবের আমৃত্যু কারাবাসের হুকুম হয়েছে। একই মামলায় অন্যতম চক্রী হিসেবে অভিযুক্ত হাসান শনিবার ধরা পড়েছে ঔরঙ্গাবাদে। তার কাছেই জানা গিয়েছে ফেরার থাকাকালীন বন্দি আফতাবের সঙ্গে ফোনালাপের সংবাদ।

কিন্তু এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এত বড় একটা ব্যাপার কী ভাবে পুলিশের নজর এড়িয়ে রইল, তা ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছেন না লালবাজারের তাবড় মাথারা। ‘‘এটা যে কত বড় বিপদের কথা, তা বলার নয়।’’— আক্ষেপ এক পদস্থ অফিসারের। ওঁরা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন, শুধু পাকিস্তানবাসী পরিজনদের সঙ্গে নয়, আফতাব জেল থেকে তার পুরোনো গ্যাং (আসিফ রেজা কম্যান্ডো ফোর্স)-এর অন্যতম সদস্য হাসানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেই গিয়েছে। যার কোনও আঁচ গোয়েন্দারা পাননি। অথচ জেল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আফতাবের উপরে নিয়মিত গোয়েন্দা-নজরদারিও থাকার কথা।

অর্থাৎ, চরম গাফিলতির নিদর্শন। হাসানের সঙ্গে আফতাবের কী নিয়ে কথা হতো?

গোয়েন্দা-সূত্রের দাবি: হাসানকে আরও জেরা না-করলে এটা স্পষ্ট হবে না। এটুকু জানা যাচ্ছে যে, হাসান মারফত আফতাব পুরনো কিছু সাঙ্গোপাঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল। যাদের কেউ কেউ আমেরিকান সেন্টার হামলার ষড়যন্ত্রেও জড়িত থাকতে পারে। আর একটি বিপজ্জনক সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তদন্তকারীদের বক্তব্য: কিছু দিন যাবৎ বিভিন্ন সূত্রে খবর আসছিল, আফতাব জেল ভাঙার ছক কষছে। সেই চক্রান্তে হাসানের কোনও ভূমিকা আছে কিনা, সে সম্পর্কে লালবাজার একশো শতাংশ নিশ্চিত হতে চাইছে।

এ দিকে গুজরাত পুলিশ সূত্রের খবর: ২০০২-এর ২২ জানুয়ারি আমেরিকান সেন্টারে হানাদারির পরে হাসান এত দিন নাম ভাঁড়িয়ে লুকিয়ে থাকলেও জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে সরাসরি সংস্রব এড়িয়ে চলেছে। লালবাজারের এক গোয়েন্দা-কর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘আমেরিকান সেন্টারেও হাসান সরাসরি হামলা চালায়নি। হামলাকারীদের থাকা-খাওয়া, মোটরসাইকেলের বন্দোবস্ত ইত্যাদি কাজের ভার ছিল ওর উপরে। দেখতে হবে, আবার তেমনই কোনও ভূমিকা নেওয়ার মতলব তার ছিল কিনা।’’

প্রাথমিক জেরার ভিত্তিতে লালবাজারের খবর: কলকাতা-হামলার পরে প্রথম পাঁচ বছর হাসান বারাণসী-সহ নানা জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে থাকে। ২০০৮-এর গোড়ায় নাম ভাঁড়িয়ে গয়ায় বাড়ি ভাড়া নেয়। তার পরে যায় ঔরঙ্গাবাদে। গুজরাতের
এক মামলায় ওই রাজ্যের পুলিশ শনিবার ভুল করে তাকে পাকড়াও করে। আমদাবাদে নিয়ে গিয়ে তাদের ভুল ভাঙে। জানা যায়, ধৃত ব্যক্তি আরও বড় মামলার চোদ্দো বছরের ফেরার আসামি!

আমদাবাদ থেকে হাসানকে নিয়ে লালবাজারের টিম সোমবার মাঝ রাতে কলকাতা পৌঁছায়। মঙ্গলবার দুপুরে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হলে হাসানের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের হুকুম হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

conversation phone calls terrorist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE