Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫

সব চেষ্টা জলে, ইস্তফা দিলেন অধ্যক্ষ, সুপার

এনআরএস সূত্রের খবর, কোন পথে অচলাবস্থা কাটানো যায় তা নিয়ে বুধবার সকাল থেকে একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যভবনের বিবৃতি সেই প্রক্রিয়ায় সহায়ক হয়নি।

আন্দোলনরত ডাক্তারদের সঙ্গে ‘বহিরাগতদের’ ধস্তাধস্তি। বৃহস্পতিবার এনআরএস হাসপাতালের গেটে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

আন্দোলনরত ডাক্তারদের সঙ্গে ‘বহিরাগতদের’ ধস্তাধস্তি। বৃহস্পতিবার এনআরএস হাসপাতালের গেটে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০৩:০৬
Share: Save:

বৃহস্পতিবার দুপুরেই রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় অচলাবস্থা নিয়ে এসএসকেএমে নিজের অবস্থান প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ায় আফসোস করছেন এনআরএস-এর প্রাক্তনী, প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, প্রশাসনিক আধিকারিক-সহ স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারার দায় স্বীকার করে ইস্তফা দিয়েছেন এনআরএস-এর অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায় এবং সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায়।

এনআরএস সূত্রের খবর, কোন পথে অচলাবস্থা কাটানো যায় তা নিয়ে বুধবার সকাল থেকে একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যভবনের বিবৃতি সেই প্রক্রিয়ায় সহায়ক হয়নি। আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা কিন্তু তার পরেও স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু করতে রাজি ছিলেন। বদলে দু’টি জিনিস চেয়েছিলেন। জখম চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী একবার দেখে আসবেন আর অবস্থান-মঞ্চে না এলেও চিকিৎসকদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে একটি বিবৃতি দেবেন।

এ দিন এনআরএসে সকালে রোগীর পরিজনেরাও চিকিৎসকদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে অবস্থান মঞ্চে বসেন। নিউ কোচবিহারের বাসিন্দা বাবন বিশ্বাস যেমন ১৮ মাসের শিশুকন্যা প্রীতি বিশ্বাসকে নিয়ে ধর্না মঞ্চে বসে পড়েন। যত দ্রুত সম্ভব প্রীতির হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার জরুরি। বাবন বলেন, ‘‘ডাক্তারদের সঙ্গে যা হয়েছে ঠিক হয়নি। সেই জন্য সকালে পথ অবরোধও করতে গিয়েছিলাম। পুলিশ করতে দেয়নি। মুখ্যমন্ত্রী একবার এলেই তো পারেন। তা হলে তো পরিষেবা পাই।’’ চাকদহের বাসিন্দা সাদিজা মণ্ডল জানান, তাঁর বোনপো আমনাথ মণ্ডলের জন্য এ দিন মেডিক্যাল বোর্ড বসার কথা ছিল। সাদিজা বলেন, ‘‘আমাদের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। পরিষেবা না পাওয়ার জন্য আমাদের যাবতীয় অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে।’’ এ ধরনের বক্তব্য যত সামনে এসেছে, অবস্থান মঞ্চে স্লোগান উঠেছে, ‘‘সাধারণ মানুষ পাশে আছে, মুখ্যমন্ত্রী কোথায় আছেন!’’

এরই মধ্যে হাসপাতালের মধ্যে একটি বৈঠক ডাকা হয়। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পাশাপাশি প্রাক্তনী এবং বিভিন্ন বিভাগের ‘স্যরে’রাও তাতে ছিলেন। সভা চলাকালীনই মুখ্যমন্ত্রীর এসএসকেএমে কী বলছেন, তা সকলকে শোনানো হয়। সভা তার পর শুধু ভন্ডুলই হয়ে যায়নি, উল্টে আন্দোলন আরও অনড় হয়। সাংবাদিক বৈঠকে যৌথ মঞ্চের মুখপাত্র অরিন্দম দত্ত বলেন, ‘‘হাসপাতালের পরিস্থিতি কী ভাবে স্বাভাবিক করা যায়, তা নিয়ে বৈঠক করছিলাম। কর্মবিরতির পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে কী করে আউটডোর, জরুরি বিভাগ চালু করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। মুখ্যমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম!’’

এর পরেই নতুন করে ঘোরালো হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় সভাপতি-ইলেক্ট চিকিৎসক রাজেন শর্মা-সহ সর্বভারতীয় চিকিৎসক সংগঠনের অনুরোধও সেই জট কাটাতে পারেনি। আজ, শুক্রবার দেশ জুড়ে কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ এবং রাজ্য শাখাগুলি ধর্নায় বসবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। যৌথ মঞ্চের একটি প্রতিনিধিদল রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গেও দেখা করেন। রাজভবন থেকে বেরিয়ে তাঁরা জানান, রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।

ঘটনাচক্রে আইএমএ-র প্রতিনিধিরা এ দিন হাসপাতাল চত্বর ছাড়তেই সাড়ে চারটে নাগাদ জরুরি বিভাগের সামনের গেট দিয়ে রোগীর পরিজন পরিচয় দিয়ে একদল লোক হাসপাতালে ঢোকার চেষ্টা করে। জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি এমনই হয় যে, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সৌম্যদীপ মজুমদার চোট পান। এরই মধ্যে বোতল এবং আধলা নিয়ে কিছু বহিরাগত প্রবেশ করেছে, এই খবর পেয়ে হাসপাতালের আরও একটি গেট থেকে জুনিয়র চিকিৎসকরা উদ্‌ভ্রান্তের মতো দৌড়তে থাকেন। বস্তুত মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের পর থেকেই বলপ্রয়োগ করে ধর্না মঞ্চ তুলে দেওয়া হতে পারে, এই আশঙ্কায় ভুগছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। বিকেল থেকেই হস্টেল ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে। চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ পাশে দাঁড়িয়ে বলেছে, আক্রমণ হলে পূর্ণ কর্মবিরতির পথে যাবেন তাঁরাও।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, সার্বিক সঙ্কটের এই আবহেই অধ্যক্ষ এবং সুপারের পদত্যাগ খবর এসেছে। দু’জনের কেউই ফোন ধরেননি। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘ইস্তফার কথা আমিও শুনেছি। তবে এখনও পদত্যাগপত্র হাতে পাইনি।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, সন্ধের দিকে যখন সুপারের ঘরে প্রিন্সিপাল এবং ডেপুটি সুপার ছিলেন, সেই সময় আন্দোলনকারীদের একাংশ গেট আটকে বিক্ষোভ দেখায়। তার পরেই ওঁরা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। চিঠিতে অধ্যক্ষ এবং সুপার লিখেছেন, ‘‘১০ই জুন সন্ধ্যা থেকে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতে না পেরে পদত্যাগ করছি। দায়িত্ব থেকে দ্রুত অব্যাহতি পেলে বাধিত থাকব।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

NRS Doctors Strike IMA Resignation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy