দুর্জয় দেব
তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কাজিয়ায় এ বার সরতে হল বালুরঘাট আইন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে। বিক্ষোভকারীরা তাঁকে জোর করে ইস্তফাপত্র লিখিয়েছে বলে অভিযোগ কলেজের টিচার ইনচার্জ দুর্জয় দেবের। থানাতেও অভিযোগ করেছেন তিনি। অভিযুক্তদের একাংশ জেলা তৃণমূল সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ সুভাষ চাকির অনুগামী বলে জানা গিয়েছে। অধ্যক্ষের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলের অপসারিত জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের অনুগামী টিএমসিপির জেলা সভাপতি অতনু রায়।
নবম সেমেস্টারে ফেল করা ছাত্রদের পাশ করানো ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে ৫ ডিসেম্বর কলেজের মেন গেট ও টিচার্স রুমে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান আইন কলেজের ছাত্ররা। সে দিন অনুপস্থিত ছিলেন দুর্জয়বাবু। শনিবার তিনি কলেজে আসার পরেই ফের বিক্ষোভ শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক তাঁকে ঘেরাও করে রাখে ছাত্ররা। দুর্জয়বাবু অভিযোগ করেন, ‘‘রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এক দল ছাত্র তাদের পাশ করানোর দাবিতে আমাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। নানা ভাবে আমাকে হুমকি দেয়। আমি আতঙ্কে আছি। ওদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’’
বছর খানেক আগে টিএমসিপির ছাত্র সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরেও এই কলেজে তাদেরই প্রভাব রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শঙ্করবাবুর ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের শহর সভাপতি ও কলেজের পরিচালন কমিটির প্রাক্তন সদস্য সুভাষবাবুর অনুগামী হিসেবেই পরিচিত অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম। তিনি অবশ্য দাবি করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তাঁরা কোনও চাপ দেননি। তিনি বলেন, ‘‘দিন দিন আইন কলেজের পঠনপাঠন ও পরিচালন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তাই ছাত্রছাত্রীরা মিলিতভাবে প্রতিবাদে সরব হন। কলেজের বেহাল দশার পরিবর্তন চেয়ে আমরা যোগ্য অধ্যক্ষ বহালের দাবি জানিয়েছি।’’
আর সুভাষবাবু বলেন, ‘‘২০১৫ র জুলাই মাসের পর থেকে আর কলেজে যাইনি আমি। কাজেই এ ব্যাপারে মিথ্যেই আমার নাম জড়ানো হচ্ছে।’’ গত বছরই কলেজের পরিচালন সমিতি ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার প্রশাসক সনাতন দাসকেও গোটা ঘটনা জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন দুর্জয়বাবু।
এ দিন কলেজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিপ্লববাবুর অনুগামী টিএমসিপির জেলা সভাপতি অতনু রায় বলেন, ‘‘যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁরা কেউই টিএমসিপির নয়। প্রতিবার নিজেদের কলেজে পরীক্ষা হয়। এ বার সিট পড়েছিল মালদহে। ৪২ জন ছাত্রের মধ্যে মাত্র ১৫ জন পাশ করেছে। কেন এমন হল বুঝতে অসুবিধা হয় না।’’
যদিও ছাত্রদের দাবি, কলেজে পড়াশোনার মান খারাপ হওয়াতেই এমন ফল হয়েছে।
এই কলেজে যখন টিএমসিপির ছাত্র সংসদ ছিল তখনও বারবার বিপ্লব মিত্র ও শঙ্কর চক্রবর্তীর গোষ্ঠীর লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়েছে পরিবেশ। এখন কোনও ছাত্র সংসদ নেই। তবুও অন্তর্দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত রয়েই গিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy