আলোচনায় জয় গোস্বামী
কোভিডের কারণে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। তাই বলে বিনোদন বাদ যাবে কেন? এই সময়ে প্রত্যেক ব্যক্তির মুঠোফোনে পৌঁছে যেতে, আঞ্চলিক ভাষার কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আখর’। কলকাতায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দিকপালদের নিয়ে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠান খুব কম সময়েই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছে।
সম্প্রতি কবি জয় গোস্বামীকে নিয়ে প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন ও পূর্ব পশ্চিম নাট্যগোষ্ঠীর উদ্যোগে, আনন্দবাজার ডিজিটাল ও শ্রী সিমেন্টের সহায়তায় সন্ধ্যা ৭.৩০ টায় ভার্চুয়ালি আয়োজিত হয়েছিল আখর কলকাতার আরও একটি বিশেষ পর্ব। উত্তর-জীবনানন্দ পর্যায়ের বাংলা কবিদের মধ্যে অন্যতম ভাস্বর জ্যোতিষ্ক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বনামধন্য কবি জয় গোস্বামী। আলাপচারিতায় ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ পুরস্কারে সম্মানিত অধ্যাপক, কবি অভীক মজুমদার।
একটি কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন শ্রী সৌমিত্র মিত্র। প্রথমেই কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর রচিত কবিতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করেন অতিথি জয় গোস্বামী। অধ্যাপক অভীক মজুমদারের সঙ্গে কবির প্রাণবন্ত আলাপচারিতার মুখবন্ধে ছিল, কন্ঠসঙ্গীতের সুরবিস্তার এবং কবিতার চলন। কবি তাঁর সাহিত্যজীবনে গান ও কবিতার মধ্যে যোগসূত্র বিষয়ে বিশদে গবেষণা করেছেন। তাঁর রচিত ‘গানের হৃদয়’ বইটিতে আলি আকবর খাঁ, উস্তাদ বিলায়ৎ খাঁ, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, ওস্তাদ রশিদ খাঁ—এর মতো বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীদের অজানা দিক নতুন করে উন্মোচিত হয়েছে এই আলোচনায়।
কবি জয় গোস্বামীর বিশ্লেষণে চর্যাপদ বা চর্যাগীতি রচনার সময়েই কবিতা ও গানের মধ্যে সেতুবন্ধন হয়েছিল। কবির জীবনে সঙ্গীতের প্রবেশ সেই শৈশবেই। স্কুল জীবনের দীর্ঘ রোগভোগ থেকে মুক্তির আস্বাদ পেতে তিনি আশ্রয় নিতেন সঙ্গীতের কাছে। আলোচনা প্রসঙ্গে উঠে আসে দেশাখ রাগের প্রসঙ্গ, জীবনানন্দ দাশের আত্মনিমগ্নতার কথা, কিভাবে দেবব্রত বিশ্বাসের কন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীতের আলাদা অন্তর্নিহিত মর্মার্থ খুঁজে পান কবি।
পন্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের কাছে প্রাপ্ত সঙ্গীত বিষয়ক জ্ঞান ও তথ্য কবিকে শুধু সমৃদ্ধই করেনি, তাঁর কবিতায় সমাহিতও হয়েছে। কবির কবিতা নিয়ে তৈরি করা গদ্যাবলীতে ঘটেছে তার বিচ্ছুরণ। বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষের বর্ণনায় যিনি ভারতের সাম্প্রতিক কালের শ্রেষ্ঠ কবি। সেই জয় গোস্বামীই তাঁর সাহিত্যজীবনে প্রবেশের অনুপ্রেরণা পান বিষ্ণু দে’র রচনা পাঠ করে।
‘আখর’ এর এই অনুষ্ঠানে বহু গূঢ় তত্ত্ব প্রতিভাত হয়ে ওঠে কবি জয় গোস্বামীর সহজ সাবলীল ব্যাখ্যায়। ওস্তাদ আমির খাঁ সাহেবের দরবারি কানাড়া রাগের ‘বিলম্বিত লয়’ এবং জীবনানন্দ দাশের ‘ধূসর পান্ডুলিপির’ ছত্রে ছত্রে নিহিত মন্থরতা ও বিস্তারের মধ্যে বিস্ময়কর সাদৃশ্য আবিষ্কার করেছেন কবি।
বাংলার গন্ডি ছাড়িয়ে গণিত ও পদার্থবিদ্যারও ছায়া পড়েছে তাঁর কবিতায়। ‘পোয়েট্রি ও সায়েন্স’ বা ‘পোয়েট্রি ও পদার্থবিদ্যা’ অভিমুখের সূচনা করেন কবিতার ছন্দে। তাঁর ‘রানাঘাট লোকাল’ রচনায় উঠে এসেছে ‘হোয়াইট ডোয়ার্ফ’ এর প্রসঙ্গ। তাঁর জনপ্রিয় কাব্য উপন্যাস হল ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’।
অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে কবি পাঠ করেন, ‘হ্যাঁ’ এবং সেন্সরশিপ বিষয়ে রচিত তাঁর কবিতা ‘লাল পেন্সিল’। অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে সঞ্চালক সৌমিত্র মিত্র যথার্থই বলেন “কথা ও সুরের এক অমৃত আচ্ছাদনে ছিলাম আলাপচারিতা চলাকালীন”।
অধ্যাপক মানসরঞ্জন কুন্ডু জানান, প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন, পূর্ব পশ্চিম নাট্যগোষ্ঠী, আনন্দবাজার ডিজিটাল ও শ্রী সিমেন্টের সমবেত উদ্যোগে আয়োজিত এই সুন্দর অনুষ্ঠানের জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। কবিতা ও কাব্যভাবনায় সঙ্গীতের ভূমিকা প্রসঙ্গে আলোচনা সূত্রে এসেছে মহাকাশ, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীর কথা। বাংলা কবিতার ও জয় গোস্বামীর কবিতার পাঠকদের জন্য এই সাক্ষাৎকার অত্যন্ত মূল্যবান এবং সংরক্ষণযোগ্য। কবিতা আর সঙ্গীতকে জড়িয়ে জয় গোস্বামী যখন কথা বলেন তা শ্রোতার আনন্দ। শুধুমাত্র সাক্ষাৎকার নয় এটি ছিল এক আনন্দ সংলাপ।
এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে বলতে গিয়ে লেখিকা, সাংবাদিক ও ফিল্ম সমালোচক সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাঙালি খুবই পরিণতমনস্ক একটি জাতি। এর কোর মেধার যে আশ্রয়স্থলগুলি যে আছে তাঁর মধ্যে জয় গোস্বামী অন্যতম। তিনি নিঃসন্দেহে অতুলনীয় কবি এবং গদ্যকার। অন্যান্য গুণের মধ্যে বলা যায় তিনি অসম্ভব স্মৃতিধর। সঙ্গীত সম্পর্কে তাঁর অগাধ জ্ঞান আমরা অনুষ্ঠানে দেখতে পেলাম। তাঁর কথা শুনতে পাওয়া আমাদের কাছে সৌভাগ্যের বিষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy