আবর্জনার স্তূপে সামিরুল। —নিজস্ব চিত্র।
শিশু দিবসের কথা জানে না সে। জানে না চাচা নেহরুর নামও।
ভোর থেকে প্লাস্টিকের বোতল কুড়োয় আট বছরের ছেলেটি। ১০টায় স্কুল। মিড-ডে মিলে ভাত, সয়াবিন। কখনও আধখানা ডিম। দিন শেষে কুড়োনো বোতল বেচলে জোটে রাতের খাবার। এর মধ্যে যেটুকু সময় মেলে, তাতেই সেরে নেয় স্কুলের পড়া।
উলুবেড়িয়ার বাণীতলা ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কাছে ঝুপড়িতে থাকে গোপালচন্দ্র ঘোষ প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া সামিরুল শা। ঘুম থেকে উঠেই বস্তা নিয়ে বেরিয়ে প়ড়ে। বলে, ‘‘সকালবেলা নোংরা ফেলার গাড়ি আসে। তখন অনেক বোতল, প্লাস্টিক, টিন, ভাঙা লোহা পাওয়া যায়। অনেকেই কুড়োয়। আমিও কুড়োই।’’ স্কুল থেকে ফিরে আবার ৪ টে পর্যন্ত আবর্জনা কুড়োয় ছোট্ট ছেলেটা।
‘‘তখন অনেক বোঝা হয়ে যায়, মাথায় করে বইতে পারি না। বিকালে একটা ট্রলি করে নিয়ে গিয়ে দোকানে দিয়ে আসি’’ জানায় বালক। সে সব বিক্রি করে পাওয়া যায় ৬০-৮০ টাকা। ২০ টাকা দিতে হয় ট্রলি ভাড়া। বাকিটা লাগে সংসারে। গত দেড় বছর ধরে এটাই সামিরুলের রোজনামচা।
বাবা-মা রামরাজাতলায় কাপড় ফেরি করতেন। চার বছর আগে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দু’জনের। লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে যাওয়া বাবা-মায়ের স্মৃতি একেবারেই নেই সমিরুলের। তিন দাদা ছিল। তাঁরা যে যাঁর সংসারে ব্যস্ত। দূর সম্পর্কের এক মাসির কাছেই থাকে সামিরুল। কিন্তু সেখানেও খাওয়া জোটে না বিনা পয়সায়।
মাসি জাহানারা বেগম বলছেন, ‘‘স্বামী আমাকে দেখেন না। নিজের ছোট ছেলে রয়েছে। লোকের বাড়ি কাজ করে মাসে ৭০০ টাকা রোজগার করি। তা দিয়ে এতগুলো পেট চালানো সম্ভব নয়।’’ ফলে কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করতেই হয় সামিরুলকে। কিন্তু পড়তে তাকে হবেই। সামিরুলের কাছে মাসি খুব ভাল। সে বলে, ‘‘আগে দেখতাম কত ছেলে স্কুলের জামা পরে যায়। স্কুলে যাওয়ার বায়না করেছিলাম, তাই মাসি ভর্তি করে দিয়েছে।’’
স্কুলের জামা সামিরুলও পেয়েছে স্কুল থেকেই। তার মেধা নিয়ে সংশয় নেই কারও, জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকারা। প্রধান শিক্ষিকা ভারতী প্রামাণিক বলেন, ‘‘পড়াশোনায় ও খুব ভাল। স্কুল ছুটির পর বাচ্চারা যখন খেলার জন্য দৌড়োয় ও তখন নোংরা ঘেঁটে রোজগার করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy