Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

রাজ্য জুড়ে দূষণ মাপার যন্ত্র

কলকাতা কিংবা তার দোসর হাওড়ার হাওয়া যে দূষিত, সে কথা প্রকাশ্যেই মেনে নিয়েছেন রাজ্য পরিবেশ দফতরের কর্তারা। কিন্তু জেলার বিভিন্ন শহরের বাতাস কতটা দূষিত, সে প্রশ্নে কিছুটা হলেও ধন্দে পড়ে যেতেন তাঁরা। কারণ, বাতাসে দূষণের পরিমাণ নিত্যদিন বাড়লেও এ রাজ্যের জেলাগুলিতে তা মাপার তেমন কোনও পরিকাঠামোই ছিল না।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৮:২৫
Share: Save:

কলকাতা কিংবা তার দোসর হাওড়ার হাওয়া যে দূষিত, সে কথা প্রকাশ্যেই মেনে নিয়েছেন রাজ্য পরিবেশ দফতরের কর্তারা। কিন্তু জেলার বিভিন্ন শহরের বাতাস কতটা দূষিত, সে প্রশ্নে কিছুটা হলেও ধন্দে পড়ে যেতেন তাঁরা। কারণ, বাতাসে দূষণের পরিমাণ নিত্যদিন বাড়লেও এ রাজ্যের জেলাগুলিতে তা মাপার তেমন কোনও পরিকাঠামোই ছিল না। পরিবেশবিদদের অনেকের মতে, এই পরিকাঠামো না থাকার সুবাদেই ক্রমাগত বিষিয়েছে আসানসোল, রানিগঞ্জ, আমতার বাতাস।

এই পরিকাঠামো যে ছিল না তা মেনে নিয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনেক কর্তাও। তবে তাঁরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিকে শোধরাতেই এ বার নতুন পথে হাঁটতে চাইছে পর্ষদ। রাজ্যের প্রায় সব জেলার একাধিক শহরে বাতাসে দূষণমাপক যন্ত্র বসানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত রাজ্যে মোট ২৩টি জায়গায় বাতাসে দূষণ মাপা হত। আজ, ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন থেকে বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, মেদিনীপুর, হাওড়া, মালদহ, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহারের বিভিন্ন জায়গায় আরও ৪৯টি যন্ত্র বসানো হচ্ছে। নতুন বছর থেকে সব মিলিয়ে রাজ্যের মোট ৭২টি জায়গায় এই দূষণ মাপা হবে। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন করে এই যন্ত্রগুলি চলবে বলে পর্ষদ জানিয়েছে।

পর্ষদের কর্তাদের ব্যাখ্যা, রাজ্যের দূষণ নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশকর্মীরা। আদালতেও বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। দূষণ বাড়লে জনজীবনে কী মারাত্মক পরিস্থিতি হতে পারে, তা-ও আঁচ করছেন পর্ষদের বিজ্ঞানীদের অনেকে। ‘‘কিন্তু দূষণ কমানোর আগে কতটা দূষণ হয়েছে, সেটা জানা দরকার। তাই রাজ্য জুড়ে এত যন্ত্র বসানো হচ্ছে,’’ মন্তব্য এক পর্ষদ-কর্তার।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, দেশের যে সব শহরের জনসংখ্যা ১০ লক্ষের চেয়ে বেশি, সে সব শহরের বাতাসের গুণগত মান পরীক্ষা করতে বলেছে। এর বাইরে কয়েকটি জায়গায় নাগাড়ে ২৪ ঘণ্টা ধরে বাতাস পরীক্ষা করার জন্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বসাতে বলেছে। কলকাতা, পরিবেশ দফতরের অন্দরের খবর, হাওড়া, আসানসোল এবং শিলিগুড়িতে শীঘ্রই তিনটি স্বয়ংক্রিয় বসানো হবে। এর জন্য টেন্ডারও ডাকা হয়ে গিয়েছে। এর বাইরে কলকাতা ও হাওড়ার ক্ষেত্রে আরও চারটি যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্য পরিবেশ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কলকাতা ও হাওড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম দিকেই ছিল। তাই এগুলির উপরে বিশেষ জোর দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় পর্ষদ।’’

যদিও রাজ্যের পরিবেশ-কর্তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় পর্ষদের কর্তারা ১০ লক্ষের বেশি জনসংখ্যার শহরের ক্ষেত্রে দূষণ মাপার কথা বললেও তাঁরা নিজে থেকেই জেলা শহরের দিকে নজর দিচ্ছেন। কারণ, অনেক জেলা শহরের জনসংখ্যা ১০ লক্ষের কম হলেও আগামী দিনে সেগুলির জনসংখ্যা বাড়বে। বাড়বে দূষণের মাত্রাও। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের কথায়, ‘‘নগরায়ণ বাড়লে দূষণ বাড়বেই। সেই দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য তথ্য থাকা জরুরি। তাই রাজ্য জুড়ে এত যন্ত্র বসানো হচ্ছে।’’

যদিও পরিবেশকর্মীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, শুধু নজরদারি করে কি দূষণ ঠেকানো সম্ভব? তাঁদের মতে, দূষণ ঠেকাতে গেলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থাও নিতে হবে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, এখন রাজ্যের হাতে দূষণের তেমন কোনও তথ্য নেই। ফলে এই যন্ত্র বসানোয় সেই তথ্য হাতে আসবে। ‘‘কিন্তু সেই তথ্য হাতে আসার পর কতটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটাই আসল পরীক্ষা। তা না হলে এই নজরদারির কোনও দাম থাকবে না,’’ বলছেন তিনি। নজরদারিটাই যে আসল, সে কথা মেনে নিচ্ছেন পর্ষদের অনেক কর্তাও। তাঁদেরই এক জন বলছেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকা তৈরি করা সোজা কিন্তু তা প্রয়োগ করাটাই কঠিন।’’

নজরদারির পরে সেই ‘কঠিন’ কাজটাই রাজ্যের কর্তারা পারেন কি না, সেটা দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

state news pollution measuring system pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy