দূষণ সংক্রান্ত মামলায় দু’দুবার আদালতের নোটিস পাঠানোর পরেও নিরুত্তর থেকেছেন কর্তৃপক্ষ। তার জেরে জাতীয় পরিবেশ আদালতের রোষানলে পড়ল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
কেন কর্তৃপক্ষ নিরুত্তর থেকেছেন, অভিযোগের ব্যাখ্যা কী— আগামী ১০ মে বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রারকে আদালতে উপস্থিত থেকে তার জবাব দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে পরিবেশ আদালত। বৃহস্পতিবার কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার দুই বিচারপতি এস ওয়াংডি এবং পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ ওই নির্দেশ দেন।
গত ডিসেম্বরে পৌষ মেলায় এসে মেলায় যথেচ্ছ বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ এবং বিশ্বভারতীর মতো একটি প্লাস্টিক বর্জিত এলাকায় ঢালাও প্লাস্টিকের ব্যবহার দেখে ক্ষুব্ধ হন পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত। কী ভাবে দূষণ, তার প্রমাণ স্বরূপ খান পঞ্চাশেক ছবি তুলে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেন সুভাষবাবু। ৫ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপকুমার রায় এবং পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ মেলায় কেন দূষণ হয়েছে তা জানিয়ে ১৫ মার্চের মধ্যে অভিযোগের জাবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, ১৫ মার্চের মধ্যে কোনও জবাব কর্তৃপক্ষ দেননি। উল্টে সুভাষবাবু মেলা দূষণ ছাড়াও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ‘‘মেলার মাঠে দূষণ তো রয়েইছে! তা ছাড়া বিশ্বভারতীর নিজস্ব কোনও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই নেই। বর্জ্য পদার্থ নষ্ট করতে তাঁরা আমারকুটির ও চিপকুঠির মধ্যবর্তী জঙ্গলকেই বেছে নিয়েছেন। সেখানেই আবর্জনা পুড়িয়ে ফের পরিবেশ দূষণ করছেন।’’ একটি সূত্রের খবর, স্বশাসিত সংস্থা হওয়ার কারণে পুরসভার সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোনও চুক্তি হয়নি বিশ্বভারতীর।
সুভাষবাবু আদালতে প্রশ্ন তোলেন, একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সাড়ে ছয় হাজার পডুয়া পাঠ নেন, যেখানে একাধিক ছাত্রাবাস ও চারটি অতিথি নিবাস রয়েছে; শিক্ষক, কর্মী-পড়ুয়া এবং সহ এত সংখ্যক মানুষের বসবাস সেখানে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা ‘সলিড অ্যান্ড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কেন থাকাবে না? কেন নিকাশি ব্যবস্থা থাকবে না?
তখনই পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেয় দু’টি অভিযোগের ব্যাখ্যা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে ২১ এপ্রিল। পাশাপাশি কোথায়, কী ভাবে দূষণ হচ্ছে সে ব্যাপারটি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীকে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেন পরিবেশ আদালতের দুই বিচারপতি। নির্দেশের প্রতিলিপি বিশ্বভারতীর উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারকে পাঠানো হয়। নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকায় রিপোর্ট তৈরি করেতে পারেননি। আরও দশ দিন সময় তাঁকে দেওয়া হোক। আইনজীবী বিকাশ করগুপ্তের মাধ্যমে ২১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার পরিবেশ আদালতে আবেদন জানান জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। কিন্তু, বিশ্বভারতীর তরফে এ দিনও কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের তরফেও কেউ উপস্থিত ছিলেন না!
গোটা ঘটনায় বিরক্ত হন পরিবেশ আদালতের দুই বিচারপতি। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘আদালতের নির্দেশকে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্যেই বিচারপতিরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তারপর যে নির্দেশ আদালত দিয়েছে তাতে আমি খুশি।’’
কী বলছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ? বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য স্বপন দত্ত বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ এখনও হাতে পাইনি। তা পেলে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’’ যাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন পরিবেশ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ, সেই রেজিস্ট্রার মণিমুকুট মিত্রের সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy