বিজেপির মিছিল আটকাতে এ দিন তৎপর ছিল পুলিশ। ছবি পিটিআই।
ধর্মঘটের আবহে যখন শহর সচল রাখতে ব্যস্ত কলকাতা পুলিশ, তখন আচমকাই অন্য ইস্যু নিয়ে আসরে হাজির বিজেপি। মাঝেরহাট সেতু দ্রুত খোলার দাবিতে বিজেপি-র সেই মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমারের সাক্ষী হল বেহালার তারাতলা এলাকা। ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনে বলপ্রয়োগের অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। পাল্টা সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘শুধু ছবি তোলার জন্য পুলিশের বাসে উঠে নাটক করছে।’’ রেলের ‘অসহযোগিতা’র কারণেই মাঝেরহাট সেতুর কাজ পিছিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তিনি। সন্ধ্যায় পাল্টা মিছিলও হল তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে।
২০১৮ সালে ভেঙে পড়েছিল মাঝেরহাট সেতু। দু’বছরেরও বেশি সময় কেটে যাওয়া সত্ত্বেও কেন এখনও নতুন সেতুর কাজ শেষ হল না? এই প্রশ্ন তুলেই বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেছিল বিজেপি। ভোটের মুখে গিয়ে উদ্বোধনের পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল, তাই ইচ্ছা করে দেরি করা হচ্ছে— বিজেপি-র তরফে এই অভিযোগই তোলা হয়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কৈলাস হাজির হওয়ায় সে মিছিল অন্য মাত্রা পায়।
বিজেপির মিছিল আটকাতে এ দিন তৎপর ছিল পুলিশ। গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকানো হয়েছিল। কিন্তু বিজেপি-র কর্মীরা গার্ডরেল ফেলে দিয়ে এগোতে থাকেন। তার পরেই বলপ্রয়োগের রাস্তায় হাঁটে পুলিশ। লাঠি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করা হয় বিক্ষোভকারীদের। বিজেপি-র কিছু কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতারও করা হয়।
মাঝেরহাট সেতু দ্রুত খোলার দাবিতে বিজেপি-র বিক্ষোভ। ছবি পিটিআই।
বিজেপি-র অবশ্য দাবি, বিনা প্ররোচনায় লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। বিক্ষোভ ঘিরে কোনও অশান্তি না-থাকা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করা হয় বলে তাঁদের অভিযোগ। কৈলাসকেও পুলিশের বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। বাংলায় মমতার ‘স্বৈরাচারী’ শাসন চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে এই আক্রমণের জবাব দিতে তৃণমূল দেরি করেনি। সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপি-কে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ শুরু করেন রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
আরও পড়ুন: এইচআরবিসি ছাড়লেন শুভেন্দু, তীব্র মন্ত্রিত্ব ও দলত্যাগ জল্পনা
মাঝেরহাট সেতু যে হেতু ট্রেন লাইনের উপর দিয়ে গিয়েছে, সে হেতু রেলের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করতে হয়েছে রাজ্যের পূর্ত দফতরকে। নতুন সেতুর নকশা অনুমোদন করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে রেল বার বার কাজে বিলম্ব ঘটিয়েছে বলে অরূপ দাবি করেন। রেলের ‘অসহযোগিতা’র কারণে মাঝেরহাট সেতু তৈরির কাজ ৯ মাস পিছিয়ে গিয়েছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: কলকাতা সচল রইল সারাদিন, রাস্তায় নেমে বন্ধ ব্যর্থ জনতার
তবে এর চেয়েও তীব্র আক্রমণ অপেক্ষায় ছিল বিজেপি-র জন্য। অরূপের সাংবাদিক বৈঠকের কিছু ক্ষণ পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি কৈলাসের নাম না করেই তাঁকে তীব্র কটাক্ষে বেঁধেন। কৈলাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিজেপি-র তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল। পুলিশের বাসে কৈলাসের ছবি টুইট করে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতারাও একে একে টুইট করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু মমতা জানান, কৈলাসকে গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি ‘ছবি তোলানোর জন্য নিজেই বাসে উঠে নাটক করেছেন’ বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন।
‘৯ মাস যখন রেল অনুমতি দেয়নি, তখন কি বিজেপি ঘুমোচ্ছিল? নাকি নাক ডেকে হুঁকো টানছিল,’— কটাক্ষের ভঙ্গিতে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। রেল বিভিন্ন ভাবে কাজে দেরি করিয়েছেন বলে মাঝেরহাট সেতু এখনও খোলা যায়নি বলে মুখ্যমন্ত্রী বার বার দাবি করেন। কৈলাসের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মজার নাটক চলছে রোজ। পুলিশের গাড়িতে উঠে বলছে, আমাকে গ্রেফতার করুন। শুধু ছবি তোলানোর জন্য এত নাটক।’’ নাম না করলেও বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের ফের ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলায় বহিরাগতদের স্থান নেই, নেই, নেই। ভোটের সময়ে যারা বাইরে থেকে গুন্ডামি করতে আসে, তারা বহিরাগতই।’’
মুখ্যমন্ত্রী এবং পূর্তমন্ত্রীর আক্রমণেই কিন্তু শেষ নয়। তৃণমূলের তরফে থেকে সন্ধ্যায় পথে নামেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থ বেহালার বিধায়কও। তাঁর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাল্টা মিছিল হয়। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নকে স্তব্ধ করতে চাইছে, মিথ্যা প্রচার চালিয়ে রাজ্য সরকারকে বদনাম করতে চাইছে, অভিযোগ পার্থর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy