Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Raju Jha

রাজুর রাজনীতি-যোগ, তরজায় বিজেপি-তৃণমূল

শিল্পাঞ্চলে চর্চা আছে, রাজুর কয়লা কারবারে হাতেখড়ি বাম আমলে। তবে তাঁর সঙ্গে রাজনীতির প্রকাশ্য যোগাযোগ দেখা যায় ২০২০-র ডিসেম্বরে, গত বিধানসভা ভোটের আগে।

raju jha.

রাজু ঝা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
 কলকাতা ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪৫
Share: Save:

পশ্চিম বর্ধমানের কয়লা কারবারের একদা ‘বেতাজ বাদশা’ রাজেশ ওরফে রাজু ঝা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যেতেই তাঁর রাজনৈতিক রং নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি তরজা। কার্যত সম্মুখ-সমরে নেমেছেন একদা বিজেপি সাংসদ তথা বর্তমানে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এরই মধ্যে রাজুকে ‘ছোট ভাই’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিজেপির টিকিটে জেতা সাংসদ তথা বর্তমানে তৃণমূল নেতা অর্জুন সিংহ।

শিল্পাঞ্চলে চর্চা আছে, রাজুর কয়লা কারবারে হাতেখড়ি বাম আমলে। তবে তাঁর সঙ্গে রাজনীতির প্রকাশ্য যোগাযোগ দেখা যায় ২০২০-র ডিসেম্বরে, গত বিধানসভা ভোটের আগে। রাজু দুর্গাপুরে বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ, তৎকালীন বিজেপি সাংসদ অর্জুন, বিজেপির বর্তমান বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের উপস্থিতিতে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন।

রাজু শনিবার নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাবুল টুইটে তাঁর বিজেপি-পর্ব এবং রাজুর বিজেপির যোগদানের প্রসঙ্গ টেনে তোপ দাগেন, ‘‘এই রাজু ঝা’কে নিয়েই আমার সঙ্গে রাজ্য বিজেপির যারা আজ বড় বড় কথা বলছেন, তাদের চূড়ান্ত মতবিরোধ হয়। রাজুকে ঘটা করে বিজেপিতে যোগদান করায় দিলীপ ঘোষ এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এ বার এঁরা বলবেন ‘চিনি না’!’’ বাবুলের দাবি, রাজুর হোটেলে বিজেপি নেতাদের যাতায়াত ছিল। সেই সঙ্গে, ‘দুষ্টু লক্ষ্মণ’ এই কয়লা ‘মাফিয়াদের’ বিজেপিতে যোগ দেওয়ানোর সূত্র হিসেবেও কাজ করেন বলে তোপ বাবুলের। পাশাপাশি, মধ্যপ্রদেশের বিজেপির মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্রের সঙ্গে রাজুর এক মঞ্চে থাকা একটি ছবিও পোস্ট করেন বাবুল।

পাল্টা সরব হন দিলীপ। তিনি রবিবার বলেন, “চিনি না, বলছি না তো! সে সময়ে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে রাজুও ছিলেন। কে চোর, কে ডাকাত সব সময়ে তার খোঁজ রাখা যায় না। কিন্তু অপরাধ করার জন্য কাউকে বিজেপিতে আশ্রয় দেওয়া হয়নি।’’ টুইটারে বাবুল এ দিন ফের ‘কয়লা মাফিয়াদের’ বিজেপিতে যোগদান, তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি-র সক্রিয় না হওয়ার অভিযোগ তুলে সরব হন। সাংসদ থাকাকালীন বাবুল তৎকালীন কয়লামন্ত্রীদের কাছে অনেক তথ্যই দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। দিলীপ এর পাল্টা দাবি করেছেন, রাজুকেও সিবিআই অতীতে তলব করেছিল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিবিআই বা ইডি কাকে ডাকবে, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু কয়লার তদন্তে হয়তো বড় কোনও নাম উনি বলে দিয়েছিলেন। সেই জন্যই কি ওঁকে সরিয়ে দেওয়া হল?’’ আর বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণের বক্তব্য, “উনি (বাবুল) কী বললেন, কিছু যায় আসে না। এ সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা।”

এমন তরজার আবহে বিতর্ক বাড়িয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ তথা বর্তমানে তৃণমূল নেতা অর্জুন। তিনি বলেছেন, “ও (রাজু) এক সময় কী করেছে, জানি না। তবে এখন ও ভাল ব্যবসা করত। ওঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। বহু পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গেও ওঁর ভাল সম্পর্ক ছিল। তাঁরা ওঁকে ভালবাসতেন! এখন হয়তো তাঁরা স্বীকার করবেন না। কিন্তু আমি স্বীকার করছি, ও আমার ছোট ভাই ছিল।”

এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল ও বিজেপিকে এক পঙ্‌ক্তিতে বসিয়ে সরব হয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। হাওড়ার জনসভা থেকে তাঁর অভিযোগ, “রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপি এক হয়ে গিয়েছে। শক্তিগড়ে কয়লা পাচার, গরু পাচার মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল। এই রাজু ঝা-কে সরিয়ে বিনয় মিশ্রকে মনোনীত করেছিল তৃণমূল যুব কংগ্রেস। সে বিদেশে নাগরিকত্ব নেওয়ার পরে পুলিশ আধিকারিকেরা দায়িত্ব নিয়ে নিরাপত্তা দিয়ে ওই টাকা কালীঘাটে পৌঁছে দিয়ে এসেছে।” তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন অবশ্য বলেন, ‘‘অস্তিত্বহীন হয়ে গিয়ে সেলিমেরা এ সব ভুলভাল বলছেন! সাগরদিঘি উপনির্বাচন থেকে দেখছি, রাজ্যে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস একাকার হয়ে গিয়ে শুধু আমাদের নেতা-নেত্রীদের সম্পর্কে বিষোদ্গার করছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Raju Jha TMC BJP coal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy