ময়নার বাকচা ছেয়েছে পদ্ম-পতাকায়। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস হয়ে গোবরাদন বাজার পর্যন্ত রাস্তাটা কংক্রিটের। তার দু’পাশে এখন শুধুই পদ্ম-পতাকা। লোকের বাড়িতে, দোকানে, গাছের ডালেও। বাকচা গ্রামের বিভিন্ন পাড়াতেও ঢোকার মুখে ইংরেজিতে লেখা বিজেপির নাম। একই ছবি গোবরাদন, খিদিরপুর ও গোড়ামহল গ্রামের পাড়ায় পাড়ায়। তল্লাটজুটে ঘাসফুলের একটিও পতাকা চোখে পড়ল না।
অথচ মনোনয়ন মিটে গিয়েছে। তথ্য বলছে, বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৮টি আসনের সব ক’টিতেই প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে এই বাকচাতেই নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু প্রধান নির্বাচন ঘিরে দলের দুই গোষ্ঠীর বিরোধ বাধে। তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধ শিবির হাত মেলায় বিজেপির সঙ্গে। তার পর থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষ। এক বছর পরে ১৪ অক্টোবরে বাকচার বরুণা গ্রামের প্রাক্তন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য বসুদেব মণ্ডলকে কুপিয়ে খুন করা হয়। এর পরে আর অশান্তিতে দাঁড়ি পড়েনি।
গত ১ মে-ও বাকচার গোড়ামহল গ্রামে বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয় ভুঁইয়াকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে। আর এ বার পঞ্চায়েত ভোটে গোড়ামহলের একটি বুথে পদ্ম প্রার্থী হয়েছেন বিজয়ের স্ত্রী লক্ষ্মী ভুঁইয়া। গত বিধানসভা ভোটে ময়নায় বিজেপি প্রার্থী অশোক দিন্দার জয়েও বড় অবদান ছিল বাকচার। শুধু বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকেই ১১,৭০০ ভোটের লিড পেয়েছিলেন অশোক।
বিজেপি নেতা বিজয় খুনে তৃণমূলের ৩৪ জন অভিযুক্ত। পঞ্চায়েতের বিদায়ী তৃণমূল সদস্য মিলন ভৌমিক-সহ ৯ জন গ্রেফতারও হয়েছেন। বাকিরা পলাতক। শাসকদলের নেতাদের অনুপস্থিতিতেই বাকচায় গেরুয়া দাপট, জানালেন এলাকাবাসী। পূর্বপাড়া, বাকচা হাইস্কুল, বেসিক বাজার, করের ঘাট, গোবরাদন, ইজমালিক, খিদিরপুর ও গোড়ামহল গ্রামের লোকজন সন্ত্রস্তও। বাকচা হাইস্কুল ও গোড়ামহল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে কয়েক বছর ধরেই। তবু ভয় কাটেনি। বাকচা গ্রামের এক যুবক বললেন, ‘‘এলাকা দখলে দু’পক্ষই মরিয়া। কেন্দ্রীয় বাহিনী না এলে ভোট দিতে যাওয়া কঠিন।’’ বাকচা গ্রামের পূর্ব পাড়ার এক মাঝবয়সী মহিলারও বক্তব্য, ‘‘গত বিধানসভা ভোটের সময়ও খুব গোলমাল হয়েছিল। আবার ভোট আসছে। বোমাবাজি হচ্ছে। ভয় তো হচ্ছেই।’’
বৃদ্ধ আশুতোষ বর্মণ স্মৃতি হাতড়ে জানালেন, বাকচায় অশান্তির শুরু কিন্তু সেই বাম আমলেই। তখনও ভোট দিতে বাধা দেওয়া, হুমকি দেওয়া হত। বৃদ্ধের আক্ষেপ, ‘‘সরকার বদলালেও পরিস্থিতি বদলাল না।’’ তিনি তো বটেই, এলাকার অনেকেই জানালেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে শোনা যাচ্ছে, সেটাই একমাত্র ভরসা।
ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দার দাবি, “তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পঞ্চায়েত ভোটের আগে পুলিশের সহায়তায় ফের এলাকায় ঢুকেছে। ভয় দেখাচ্ছে। এ সবের জবাব মানুষ ব্যালটে দেবেন।” যদিও ময়নার প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা সংগ্রাম দোলাই বলছেন, “বিজেপি পতাকা, ফেস্টুন দিলেও ওদের সঙ্গে মানুষের সমর্থন নেই। বাকচার মানুষ আমাদের পক্ষেই রয়েছেন।”
প্রত্যয়ী যুযুধান। বাকচা অবশ্য শুধুই শান্তি প্রত্যাশী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy