ফাইল চিত্র।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে উত্তপ্ত হয়ে রইল বহরমপুর। গত কয়েক দিন ধরে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বহরমপুরে শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরির অভিযোগ তুলছিল কংগ্রেস। সেই আবহে শুক্রবার কংগ্রেসের দুই প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে শাসক দলে ভিড়েছেন। তার পরে শনিবার বহরমপুরের বাকি ২৬টি ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে মিছিল করে পুলিশ সুপারের অফিস পৌঁছন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। অধীর বলেন, ‘‘যাঁরা কংগ্রেসের প্রার্থী হতে চান, তাঁদের অপহরণ করা হচ্ছে, মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি ভীতি প্রদর্শন থেকে শুরু করে গুলি বোমা চালানো হচ্ছে। ফোনে ধমক দেওয়া হচ্ছে।’’ এক কংগ্রেস প্রার্থীর সই জাল করে প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও সেই প্রার্থী ও অধীর অভিযোগ করেছেন। যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনী সিংহ রায় বলেন, ‘‘ভোটের ময়দানে, খবরে কাগজে টিকে থাকতে দিল্লি থেকে তড়িঘড়ি ছুটে এসে মিথ্যা অভিযোগ করছেন অধীর।’’ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি মতো পুলিশ সব ব্যবস্থাই নিচ্ছে।’’ এই জেলারই ধুলিয়ানে কংগ্রেস প্রার্থীদের দিনভর লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। জঙ্গিপুরে এক কংগ্রেস প্রার্থীর এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, কংগ্রেস হারবে জেনে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
আলিপুরদুয়ার পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলরের বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে বলে অভিযোগ। তিনি নির্দল প্রার্থী। প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দিনহাটা পুরসভার তিনটি ওয়ার্ড থেকে বিজেপি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে। এখানেও সন্ত্রাসের অভিযোগে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি পুরসভার বিজেপি, কংগ্রেসের একাধিক প্রার্থী ঘরছাড়া। তাঁদেরও মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরেও প্রকাশ্য অশান্তি না হলেও, চাপের মুখে মনোনয়ন প্রত্যাহারের অভিযোগ রয়েছে। কাঁথি পুরসভার ২১টির মধ্যে ১০টি ওয়ার্ডে দশ জন নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এক জন বাম সমর্থিত প্রার্থী ছাড়া বাকিরা সকলেই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। শেষ দিনে শুধু ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ মোস্তফা আলি মনোনয়ন তুলেছেন। তমলুক পুরসভাতেও ‘নির্দল কাঁটা’ পুরোপুরি তুলতে পারেনি তৃণমূল।
ঝাড়গ্রামে এ দিন দু’জন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও তিন জন প্রাক্তন কাউন্সিলর নির্দল হিসেবে লড়ছেন। মেদিনীপুরেও শেষ বেলায় ৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। খড়্গপুরে তিন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন ঘাটালে তৃণমূলের এক গোঁজ প্রার্থী। শেষ মুহূর্তে ঘাটাল ও রামজীবনপুরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন বিজেপির দুই গোঁজও।
বিরোধীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের হিড়িকে বীরভূমের সাঁইথিয়া, সিউড়ি-র মতো দুবরাজপুরেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল বোর্ড গঠন করবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ১৬ ওয়ার্ডের পুরসভায় ১১ আসনে লড়াই হবে। এ দিকে রামপুরহাট পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি ওয়ার্ডে লড়াই থেকে ছিটকে গেল বিজেপি। ৯টি ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন তুলে নেন, একটিতে স্ক্রুটিনিতে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। পুর নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে এ দিন সিউড়িতে জেলাশাসকের কার্যালয়ে বিক্ষোভও দেখায় বিজেপি।
নদিয়ার গয়েশপুরে কিছু নির্দল প্রার্থী বাদে পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী মনোনয়ন তুলে নিয়েছেন। তার কারণ অবশ্য স্পষ্ট নয়। শান্তিপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থীও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তবে কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, বীরনগর, তাহেরপুরে শাসক দলের গোঁজ প্রার্থীরা রয়ে গিয়েছেন।
যেমন, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল বা অন্য দলের টিকিটে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতা। তাঁদের অনেকেও প্রার্থিপদে অনড় রইলেন। পূর্ব বর্ধমান জেলায় কাটোয়া, দাঁইহাটে ও গুসকরা পুরসভায় কংগ্রেসের মোট সাত জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। বর্ধমান ও গুসকরায় দু’জন বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। বর্ধমানে তৃণমূলের ‘গোঁজ’ বলে পরিচিত এক নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন তুলে নিয়েছেন। বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস ও হুমকি’র জন্যেই ওই সব প্রার্থীরা মনোনয়ন তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, “বিরোধীরা প্রার্থীই দিতে পারেনি! যেখান নিশ্চিত ভাবে তৃণমূলের প্রার্থীরা জিতবেন, সেখানে কেউ হুমকি দেয়? সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে মিথ্যা অপবাদ রটাচ্ছে বিরোধীরা।’’
উলুবেড়িয়া পুরসভায় শনিবার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সানিয়া খাতুন সরে দাঁড়ালেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী কাজী মানোয়ারাও। তিনি বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। উত্তর ২৪ পরগনার টাকি পুরসভার ৫টি ওয়ার্ডে লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালেন বাম প্রার্থীরা। ২টি ওয়ার্ডে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বিজেপি প্রার্থী। কয়েকটি আসনে
মনোনয়ন জমা দেয়নি বিরোধীরা। সব মিলিয়ে ১৬ আসনের পুরসভায় ৭টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। বসিরহাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় আগেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। হুমকির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন একই অভিযোগে বাদুড়িয়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি এবং সিপিএম প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র তুলে নিলেন। বিজেপি, সিপিএম দাবি করে, তৃণমূলের হুমকিতেই এই অবস্থা। বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব ওয়ার্ড প্রার্থী জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে বিজেপি এবং সিপিএম আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। আমাদের পক্ষে তো আর বিরোধী দলের প্রার্থী জোগাড় করে দেওয়া সম্ভব নয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy