Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ফল বেরোতেই শুরু হামলা, ভাঙচুর

যেন ভোটের ফল প্রকাশের অপেক্ষাটুকুই ছিল। জনতার রায় সামনে আসার কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক হানাহানি। কাজে এল না তৃণমূল নেত্রী বা বিরোধী দলনেতার শান্তি বজায় রাখা এবং সংযত থাকার আবেদন। বৃহস্পতিবার, ভোটের ফল প্রকাশের রাতেই পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতে এক বৃদ্ধ তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

সড়বড়ি জোনাল অফিসে বাসুদেব আচারিয়া।—নিজস্ব চিত্র

সড়বড়ি জোনাল অফিসে বাসুদেব আচারিয়া।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০১:৪৩
Share: Save:

যেন ভোটের ফল প্রকাশের অপেক্ষাটুকুই ছিল। জনতার রায় সামনে আসার কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক হানাহানি। কাজে এল না তৃণমূল নেত্রী বা বিরোধী দলনেতার শান্তি বজায় রাখা এবং সংযত থাকার আবেদন।

বৃহস্পতিবার, ভোটের ফল প্রকাশের রাতেই পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতে এক বৃদ্ধ তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, দুই জেলার একাধিক এলাকায় আক্রান্ত হলেন বাম বিশেষ করে সিপিএম নেতা-কর্মীরা। হামলা হল সিপিএমের অনেক পার্টি অফিসে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।

বৃহস্পতিবার রাতেই পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ায় সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা ও দলীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। নিতুড়িয়ার সড়বড়ি মোড়ের ওই জোনাল অফিসে শুক্রবার সকালে গিয়ে সিপিএমের স্থানীয় কর্মীরা দেখতে পান, অফিসের সামনে টাঙানো দলীয় পতাকাটি নেই। সিপিএমের অভিযোগ, গভীর রাত পর্যন্ত অনেক তাদের কর্মী ওই পার্টি অফিসেই ছিলেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পরে তৃণমূলের লোকজন অফিসের সামনে মাটিতে পোঁতা লোহার পতাকার খুঁটি উপড়ে সেই খুঁটির এক প্রান্তে কাপড় জড়িয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে অফিসের ভিতরেও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেছিল। অফিসের ফ্যান ও বিদ্যুতের তারও পোড়ানো হয়েছে বলে দাবি সিপিএমের। পার্টি অফিসের সামনে ধান ও তুষ ছড়িয়ে তাতে আগুন লাগানো হয়েছিল। সেই আগুনে লোহার গেটের নীচের দিকটা পুড়েছে।

খবর পেয়ে এ দিন জোনাল কার্যালয়ে যান সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া, দলের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ রায়। তাঁদের উপস্থিতিতে কর্মীরা দরজার সামনের পোড়া তুষ ও ধান পরিষ্কার করেন। ফের পতাকার খুঁটি পোঁতা হয়। বাসুদেববাবু দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘ভোটে জেতার পরে তৃণমূলের লোকজনই এখানে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল। পুলিশকে সব জানানো হয়েছে।’’

অভিযোগ অস্বীকার করে সড়বড়িরই বাসিন্দা তথা রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে সিপিএম। ফল প্রকাশের পরেই আমরা বিরোধী দলের কার্যালয় বা কর্মীদের উপরে হামলা করা চলবে না, এই মর্মে কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। ভোটে হেরে সিপিএম নিজেরাই এই কাণ্ড ঘটিয়ে প্রচার পেতে চাইছে।”

পাড়া থানার উদয়পুর গ্রামেও তাদের পার্টি অফিসে তৃণমূলের লোকজন ভাঙচুর করে দলীয় কাগজপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম। এই অফিস খোলা নিয়ে ভোটে আগেও সিপিএমের উপরে হামলা হয়েছিল। এ দিন সকালে গ্রামের সিপিএম কর্মীরা দেখতে পান, পার্টি অফিসের সাইনবোর্ড চুন দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। বাইরে ছড়িয়ে রয়েছে দলের কাগজপত্র। তার মধ্যে কিছু কাগজ আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। এমনকী কার্যালয়ের মধ্যে থাকা চেয়ার, টেবিল, চাদর, শতরঞ্চিও হাওয়া। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধার অভিযোগ, ‘‘গণনা মিটতেই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে তৃণমূল। উদয়পুরে আমাদের অফিস দখলের চেষ্টা করছে তারা।’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের নেতারা।

রাজনৈতিক হামলা শুরু হয়েছে বাঁকুড়াতেও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বড়জোড়া বিধানসভা কেন্দ্রের পখন্না অঞ্চলের তাজপুরে সিপিএম কর্মী হানিফ মণ্ডল-সহ কিছু বাম কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো ও লুঠপাটের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার বড়জোড়া থানায় তৃণমূলের ছ’জনের নামে লিখিত অভিযোগ করেন হানিফ। তিনি জানান, সন্ধ্যাবেলায় তৃণমূলের বিজয় মিছিল বেরিয়েছিল গ্রামে। সেই মিছিল থেকেই জনা ষাটেক তৃণমূল কর্মী তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়ে। হামলাকারীদের হাতে টাঙি, রড, লাঠি ছিল। হানিফ বলেন, “বাড়িতে ঢুকে আমার ট্রাক্টর, সাইকেল ও মোটরবাইক ভাঙচুর করে ওরা। বাক্স ভেঙে সোনার গয়না ও নগদ কয়েক হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয়।’’ গ্রামের আরও কয়েকজন সিপিএম কর্মীর বাড়িতেও হামলা হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। বড়জোড়ার তৃণমূল নেতা অলক মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “ফল বেরনোর পরে ব্লকের কোনও এলাকা থেকেই রাজনৈতিক সংঘর্ষের অভিযোগ ওঠেনি। কোনও হামলার সঙ্গে তৃণমূল জড়িত নয়।’’

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ইন্দাস থানার বিভিন্ন গ্রামেও সিপিএম নেতা-কর্মীদের মারধর, বাড়ি ভাঙচুর ও পার্টি অফিসে হামলার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের ইন্দাস জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম দাসের অভিযোগ, ভোট গণনার পর থেকেই তৃণমূলের লোকেরা তাঁদের দলের উপরে হামলা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সোমসার গ্রামে জোনাল কমিটির সদস্য ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় ও রোলের বাসিন্দা বাদল মল্লিকের বাড়িতে হামলা হয়। ইন্দ্রাণীদেবীর বাড়িতে বোমা ছোড়া হয়। করিশুন্ডা গ্রামেও এক সিপিএম কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ দিন দুপুরে দীঘলগ্রামে এক সিপিএম কর্মীকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। রোল লোকাল কমিটির কার্যালয়ে তালা ভেঙে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় তৃণমূল বলেও অভিযোগ। ইন্দ্রাণীদেবীর অভিযোগ, “ভোটে দলের হয়ে কাজ করেছি বলে তৃণমূল আমার পরিবারকে টার্গেট করেছে। ভোটে জেতার পরেই ওরা বাড়ির পাঁচিল টপকে একটা বোমা ছুড়েছিল। যদিও তা ফাটেনি।’’ অভিযোগ মানতে চাননি ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটে। তাঁর দাবি, “ভোটে জেতার আনন্দে কেউ হয়তো বাজি ফাটিয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু কারও বাড়ির ভিতরে ছুড়ে দেয়নি। সাধারণ মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছেন। সিপিএম হেরে গিয়ে এখন আমাদের দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কোন ঘটনারই অভিযোগ হয়নি।

ও দিকে, কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জয়পুর থানার ময়নাপুর গ্রামের তৃণমূল পার্টি অফিসে হামলার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। কোতুলপুরের বিধায়ক শ্যামল সাঁতরার দাবি, বেশ কয়েক জন দলীয় কর্মী জখম হয়েছেন। সিপিএমের জয়পুর জোনাল কমিটির সম্পাদক বিশ্বনাথ দে অবশ্য দাবি করেছেন, অভিযোগ মিথ্যা। তৃণমূলের লোকেরাই হেতিয়া পার্টি অফিসে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE