(বাঁ দিকে) আর জি কর কাণ্ড নিয়ে কলকাতায় ‘অঙ্গীকার মিছিল’ এবং ‘পথের দাবি’ শীর্ষক প্রতিবাদে সুচেতন ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
নবান্ন অভিযান ও বাংলা বন্ধ ঘিরে অশান্তি, রাজনৈতিক চাপানউতোরের জেরে প্রশ্ন উঠছিল নানা মহলে। বিচারের দাবি কি তবে পিছনে চলে যাবে? রাজনৈতিক ও নাগরিক মিছিলে ভরা বৃহস্পতিবারের ‘পথের দাবি’ ফের মনে করিয়ে দিল, আর জি কর-কাণ্ডে বিচার চেয়ে জনতা এখনও নাছোড়।
একই দিনে কলেজ স্কোয়ার থেকে একাধিক মিছিলের ডাক ছিল। তার মধ্যে ছিল প্রদেশ কংগ্রেসের মিছিল। ছিল কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবসে ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা’, কবির এই পঙ্ক্তিকে সামনে রেখে নারী সমাজের একাংশের ডাকে ‘অঙ্গীকার মিছিল’। এই দুই মিছিলেরই গন্তব্য ছিল শ্যামবাজার। কলেজ স্ট্রিট থেকেই ধর্মতলার অভিমুখে তিন প্রধান মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিংয়ের সমর্থকদের সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন নানা রাজনৈতিক ও অ-রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীরা। যে প্রতিবাদের নাম হয়েছিল ‘পথের দাবি’। সে প্রতিবাদে সংস্কৃতি জগতের ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি দেখা গিয়েছে বামপন্থী মহিলা সংগঠনের নেতৃত্ব ও কর্মীদের, দেখা গিয়েছে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্যকেও। সব মিছিলেই ভিড় ছিল বিপুল, তার মধ্যে মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
আর জি কর-কাণ্ডে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগর মূর্তির পাদদেশ থেকে শ্যামবাজারে নেতাজি মূর্তি ‘অঙ্গীকার যাত্রা’য় যোগ দিয়েছিলেন মৈত্রেয়ী বর্ধন রায়, শতরূপা সান্যাল, নূপুর বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়, শাশ্বতী ঘোষ, অনিতা রায়, দেবযানী সেনগুপ্ত-সহ সমাজের নানা ক্ষেত্রের মহিলারা। মিছিল থেকে ‘তিলোত্তমা দিচ্ছে ডাক, আমরা বিচার চাই’, এমন নানা প্ল্যাকার্ড নিয়ে সরব হয়েছিলেন মহিলারা।
সেই পথেই গিয়েছে অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেসের মিছিল। এই প্রতিবাদে রাজনীতির ঊর্ধ্বে নাগরিক প্রতিবাদ যে বড় চেহারা নিয়েছে, খোলাখুলি সে কথা মেনে নিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। শ্যামবাজারে মিছিল শেষে তিনি বলেছেন, ‘‘বিচারের দাবিতে বাংলার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। বাংলার এই মানুষ আমাদের গর্ব, তাঁরাই পথ দেখাবেন। আমরা এখানে ধান্ধাবাজির জন্য আসিনি, কর্তৃত্ব করতেও আসিনি। নাগরিক প্রতিবাদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দলের পতাকা ছাড়া রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে আসা একটু সমস্যা। কিন্তু তার বাইরেও সর্বত্র প্রতিবাদ হোক। আমাদের ক্ষমতা সীমিত। তবে রামচন্দ্রের সেতুবন্ধনে কাঠবিড়ালির আনা বালিরও ভূমিকা ছিল।’’ সাংসদ ইশা খান চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য, নেপাল মাহাতো, কৃষ্ণা দেবনাথ, মহম্মদ মুক্তার, প্রীতম ঘোষ-সহ কংগ্রেসের রাজ্য ও জেলা স্তরের বহু নেতাই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন।
কলেজ স্কোয়ারেও এ দিন পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে নীরব জমায়েত হয়েছে। রাজ্যের ৩৯টি সরকারি স্কুলের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করে ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ দাবি তুলেছেন। সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর বক্তব্য, ‘‘কলকাতা থেকে দূরবর্তী যে সমস্ত সরকারি স্কুলের শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষকেরা এখানে আসতে পারেননি, তাঁরা নিজের নিজের স্কুলে নীরব জমায়েতের আয়োজন করছেন।’’ সারা দেশে নারী নির্যাতন বন্ধ ও সামাজিক সাম্যের দাবিতে শিয়ালদহ থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিলে সন্দেশখালির মহিলাদের পাশাপাশি শামিল হয়েছিলেন সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ, অধ্যাপক সৌম্য শাহীন, নওফেল মহম্মদ সফিউল্লা, মৃন্ময় সেনগুপ্ত প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy