নিষ্ক্রিয়তার দায়ে আবারও হাইকোর্টে বিচারপতির তোপের মুখে পড়ল রাজ্য পুলিশ।
প্রায় তিন মাস ধরে নিখোঁজ এক কিশোরীকে খুঁজে এনে আদালতে হাজির করাতে না-পারলে পুলিশ কর্মীদেরই জেলে পোরা হবে বলে মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া।
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলাগুলি এত দিন শুনতেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। রুটিনমাফিক তাঁর বেঞ্চ বদল হয়েছে। সোমবার থেকে মামলাগুলি শুনছেন বিচারপতি পাথেরিয়া। বিচারপতি দত্ত এর আগে পাড়ুই মামলা, তাপস পাল-মামলা, লাভপুর মামলা, মধ্যমগ্রাম ধর্ষণ মামলার শুনানিতে পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন। পুলিশকে নিয়ে তাঁর কড়া মন্তব্যের জেরে পাড়ুই এবং তাপস পাল-মামলায় রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পর্যন্ত করেছে।
পাড়ুই মামলা বর্তমানে বিচারপতি হরিশ টন্ডনের এজলাসে রয়েছে। সেখানেও পুলিশকে একই রকম তিরস্কৃত হতে হয়েছে। এ বার অন্য মামলাগুলিতেও বিচারপতি বদল হল বটে, কিন্তু কড়া কথা পুলিশের পিছু ছাড়ল না। বিচারপতি দত্তের পরে বিচারপতি পাথেরিয়ার এজলাসেও পুলিশ তোপের মুখে পড়ল।
এ দিনের মামলাটি কী?
কলকাতার পাতিপুকুর এলাকার বাসিন্দা রীতু সিংহ (১৬) মুর্শিদাবাদের কান্দিতে তার মামা প্রশান্ত দলুইয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। প্রশান্তবাবুর বক্তব্য, গত ৬ মে বিকেল তিনটে নাগাদ রীতুকে শেষ বারের মতো তাঁর প্রতিবেশী অসীম দলুইয়ের বাড়িতে দেখা যায়। তার পর থেকে আর কোনও খোঁজ নেই। ওই রাতেই তিনি কান্দি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
তার পরে বহরমপুর থানায় প্রতিবেশী অসীম দলুই, সন্তু দাস, পরেশ দলুই ও অজয় দলুইয়ের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় অসীম, সন্তু এবং পরেশকে। অজয়কে অবশ্য ধরা যায়নি। কিন্তু কিশোরীর কোনও খোঁজ মেলেনি। অভিযুক্তরা নিম্ন আদালতে জামিন পেয়ে যায়।
এখন পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা করেছেন প্রশান্তবাবু। তাঁর আইনজীবী সোমনাথ অধিকারী এ দিন আদালতে দাবি করেন, কিশোরী নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ মূল অভিযুক্ত অজয়কে গ্রেফতার করেনি। সেই কারণেই কিশোরীর খোঁজ মিলছে না।
বিচারপতি সরকারি আইনজীবী সুমন সেনগুপ্তর কাছে জানতে চান, কিশোরীর হদিস পেতে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে। সরকারি আইনজীবী পুলিশের একটি রিপোর্ট বিচারপতিকে দেখানোর তোড়জোড় করছিলেন। বিচারপতি রাগত স্বরে বলেন, “ওই রিপোর্টে কী রয়েছে আমি জানি। ওই রিপোর্ট গঙ্গায় ফেলে দেওয়া উচিত।”
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ বিচারপতির পরের মন্তব্য, “আমি আমার মেয়েকে ফিরে পেতে চাই। তা না-হলে উঁচু থেকে নিচু তলার সব পুলিশ কর্মীকে আমি জেলে পুরবো!”
মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপারকে বিচারপতির নির্দেশ, ওই কিশোরীকে যে ভাবে হোক খুঁজে বার করে ১৩ অগস্টের মধ্যে তাঁর সামনে হাজির করাতে হবে। এসপি হুমায়ুন কবীরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশ না দেখে কিছু বলব না।”
এ দিনই অন্য মামলায় রাজারহাটের বিডিও অমলেন্দু সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতেও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি পাথেরিয়া। রাজারহাটের আড়বেড়িয়া মৌজার এক বর্গাদারকে উচ্ছেদের চেষ্টা-মারধর, তাঁর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি, তাঁর প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে ওই বিডিও-র বিরুদ্ধে। গোবিন্দবাবুর আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, কোনও তদন্ত না করেই পুলিশ নিম্ন আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
সরকারি আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বলেন, গোবিন্দ ঢালি নামে ওই বর্গাদারের অভিযোগ সত্য নয়। তিনি ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধেই জানুয়ারি মাসে বিডিও-কে নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই কারণে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতারও করে। ঘটনার দশ দিন পরে তিনি বিডিও-র বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন।
বিচারপতি পাথেরিয়া দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে রাজারহাট থানার আইসি-কে নির্দেশ দিয়েছেন, যাবতীয় অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে। দ্রুত তদন্ত শেষ করে নিম্ন আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy