Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

অভিযান! জানাই ছিল না কর্তাদের

পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করার করার পরে বৃহস্পতিবার রাতেই ডায়মন্ড হারবার থানায় এসে এ কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন এসএসবি-র পদস্থ কর্তারা। তার পরেও শুক্রবার সকালে মাঝ রাস্তায় পুলিশের গাড়ি আটকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় তোলপাড় জেলা পুলিশের অন্দরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৬
Share: Save:

নোটের বেআইনি কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা নয় কেন্দ্রীয় সংস্থা এসএসবি-র। এই কাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও অনুমতিও নেননি দুই অভিযুক্ত জওয়ান দীপককুমার সিংহ এবং অমিতাভ প্রামাণিক। পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করার করার পরে বৃহস্পতিবার রাতেই ডায়মন্ড হারবার থানায় এসে এ কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন এসএসবি-র পদস্থ কর্তারা। তার পরেও শুক্রবার সকালে মাঝ রাস্তায় পুলিশের গাড়ি আটকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় তোলপাড় জেলা পুলিশের অন্দরে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী তো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েইছেন। রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মাও বলেন, ‘‘যাঁরা এই কাজে যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এসএসবি-র আইজি (শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ার) শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আমরা এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করব না। আইন আইনের পথে চলবে। তা ছাড়া, যে জওয়ানেরা ওই সময়ে দীপকের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ পরে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, পুলিশকে মারধর-সহ একাধিক অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে দীপকের সহকর্মীদের বিরুদ্ধে। ডায়মন্ড হারবার আদালতের বিচারক দীপক ও অমিতাভকে জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তাঁদের ২৬ ফেব্রুয়ারি ফের আদালতে তোলা হবে। এক সময়ে বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের নেতা মোজাম্মেলকে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কী ঘটেছিল প্রিন্স মার্কেটে? পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় দীপক জানিয়েছেন, তিনি ২ লক্ষ টাকার নতুন নোটের বিনিময়ে ৯ লক্ষ টাকার পুরনো নোট নিতে চেয়ে ‘টোপ’ দিয়েছিলেন। আলতাফ সেই ‘টোপ’ গেলায় সাদা পোশাকে অমিতাভকে নিয়ে হাজির হন তিনি। কিন্তু নোট-কারবারিদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি বাধে। আলতাফ তার উপরে হামলা চালায়। তখন আত্মরক্ষার জন্যই তিনি গুলি চালান।

ধুন্ধুমার

১৭ ফেব্রুয়ারি

• ডায়মন্ড হারবার থানায় দীপককুমার সিংহ চিঠি দিয়ে জানান, এলাকায় পুরনো নোট বদল হচ্ছে। থানার সাহায্য চান

২২ফেব্রুয়ারি

• বেলা সাড়ে ১১টা: থানায় ফের চিঠি। দীপক জানান, এলাকা চিহ্নিত হয়েছে। আজ তল্লাশি হবে

• বেলা ১টা: দীপকের ফোন থানায়। জানান, আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালিয়েছেন। দ্রুত পুলিশ পাঠাতে বলেন

• বেলা ২টা: পুলিশ গিয়ে দেখে, একটি মৃতদেহ পড়ে। দীপকের কপাল থেকে রক্ত ঝরছে

• বেলা ৩টা: থানায় আনা হয় দীপক, সঙ্গী জওয়ানকে। আটক বাড়ির মালিকও

• রাত ৯টা: বাহিনীর কর্তারা থানায় আসেন। জিজ্ঞাসাবাদ চলে

২৩ ফেব্রুয়ারি

• সকাল ৮টা: খুনের অভিযোগে গ্রেফতার দীপক-সহ তিনজন

• বেলা ১১টা: জওয়ানরা ছিনতাই করে দীপককে

• বেলা ১২টা: ফের থানায় আসেন বাহিনীর কর্তারা

• বেলা ১টা: আত্মসমর্পণ দীপকের

• বেলা ৩টা: খুনের মামলা দায়ের

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে দীপকের আগ্নেয়াস্ত্র-সহ আরও একটি আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। কিছু নথিপত্র, পুরনো নোটও মিলেছে। দীপক যে ২ লক্ষ

টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন, বাজেয়াপ্ত হয়েছে তা-ও।

কিন্তু প্রশ্ন হল, দুষ্কৃতীদের ধরতে এসএসবি শুধু তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে বলে পুলিশকে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিলেন দীপক। তা হলে তিনি নিজেই টাকা নিয়ে গেলেন কেন? তা ছাড়া, কোনও উচ্চপদস্থ কর্তার কাছ থেকে এ জন্য সম্মতি নেননি তিনি। ফৌজদারি আইনের ৪৫ ধারায় কোনও সশস্ত্র বাহিনীর কাউকে কর্মরত অবস্থায় গ্রেফতার না করার কথা বলা আছে। কিন্তু শ্রীকুমারবাবু বলেন, ‘‘দীপকরা আমাদের না জানিয়েই নিজেদের এলাকার বাইরে গিয়ে অভিযান চালিয়েছেন। তাই এই ক্ষেত্রে এই রক্ষাকবচ প্রযোজ্য নয়।’’

যদিও এ দিন আদালতের পথে দীপকের মন্তব্য, ‘‘যে কাজের জন্য মেডেল পাওয়া উচিত তার জন্যই আমাকে জেলে পাঠানো হচ্ছে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

SSB Fake Currency Trafficking Raid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE