বেলেঘাটায় বাড়ি থেকে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য তৈরি হয়েছিল বৃহস্পতিবার। শুক্রবার রাতে সেই ঘটনাতেই খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করল বেলেঘাটা থানা। পুলিশ সূত্রের খবর, এই মৃত্যু আত্মহত্যার ঘটনা কিনা, প্রথমে তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মৃতদেহে এমন আঘাতের চিহ্ন মিলেছে, যা নিজের পক্ষে করা সম্ভব নয় বলেই পুলিশের দাবি। ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে চিকিৎসকেরাও সেই কথাই জানানোর পরে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। যদিও এই খুনের কারণ কী, কারা করেছে, সে ব্যাপারে শনিবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছুই জানাতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, বছর সাতাশের ওই যুবকের নাম রোহন মণ্ডল। বেলেঘাটার কালিমুদ্দিন সরকার লেনে তিনি থাকতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেখানকার একটি চারতলা বাড়ি থেকে রোহনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দেহটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। প্রথমে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়। কিন্তু ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকেরা মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন দেখে এটি খুনের ঘটনাও হতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন। এর পরেই পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।
শনিবার কালিমুদ্দিন সরকার লেনে গিয়ে জানা যায়, যে বাড়ি থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার হয়েছে, সেই বাড়ির তেতলায় থাকতেন রোহন। দোতলায় তাঁর দাদা অভিজিৎ থাকেন। ওই বাড়িতেই রয়েছেন অন্য আত্মীয়েরা। তাঁদের দাবি, রোহনের মা মারা গিয়েছেন বছর দশেক আগে। বাবা বর্তমানে অন্যত্র থাকেন। বছরখানেক আগে বেলেঘাটারই বাসিন্দা এক তরুণীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রোহনের। কিন্তু কয়েক মাস আগে সেই স্ত্রী আলাদা থাকতে শুরু করেন। তাঁর দাদা বিয়ে করেননি। কিন্তু সেই দাদার সঙ্গেও বিশেষ সখ্য ছিল না রোহনের। তাঁর এক প্রতিবেশী জানান, প্রায়ই সকালে বেরিয়ে গিয়ে রাতে বাড়ি ফিরতেন রোহন। বেশির ভাগ সময়েই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকতেন তিনি। কয়েক মাস আগেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন রোহন। এই সমস্ত বয়ানের ভিত্তিতেই প্রথমে পুলিশের ধারণা হয়, ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তে তারা জেনেছে, বুধবার বিকেলে কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে ঘরে বসে মদ্যপান করছিলেন রোহন। এর পরে সন্ধ্যায় রোহনের এক কাকা তাঁর ঘরে গিয়ে দেখেন, মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন রোহন। তাঁর পিঠে গভীর ক্ষত। ওই কাকাই এর পরে রোহনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আনেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এক
প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘ঘরের ভিতরে ভাঙা মদের বোতল পড়ে ছিল। সেই ভাঙা কাচেই রোহন কোনও ভাবে আহত হয়ে থাকতে পারেন বলে মনে হয়েছিল আমাদের। কিন্তু তার পরে কী হয়েছে, জানি না।’’ এর পরে নিজের ঘরেই শুয়ে পড়েন রোহন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে খেতে আসার জন্য ডাকতে যান রোহনের এক ঠাকুরমা। কিন্তু রোহন ঘুমোচ্ছেন ভেবে ফিরে আসেন তিনি। এর পরে সন্ধ্যায় তাঁকে ডাকতে গিয়ে এক আত্মীয় দেখেন, রোহনের
শরীরে প্রাণের লক্ষণ নেই। তখনই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের বন্ধু কয়েক জনকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মৃতের আত্মীয়দের সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)