রামুয়া খুনে ধৃত স্ত্রী ও ছেলে।—ফাইল চিত্র।
সৎ মা আর ছেলে মিলে ছক কষেছিল খুনের। সাহায্য নিয়েছিল ছেলের তিন বন্ধুর। আর সেই ছকের জেরে ঘুমের মধ্যেই নিজের পিস্তলের গুলিতেই খুন হয় হাওড়ার কুখ্যাত ডন রামমূর্তি দেবার ওরফে রামুয়া।
সন্দেহটা প্রথম দিন থেকেই ছিল পুলিশের। কারণ খুনের পর থেকেই রামুয়ার ছেলে সমীর এবং স্ত্রী কাজলের বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাক্রম মেলাতে পারছিলেন না তদন্তকারীরা। কিন্তু প্রাথমিক জেরায় নিজেদের বার বার নির্দোষ দাবি করেন ছেলে আর স্ত্রী।
এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলের ফরেন্সিক তদন্ত করেন। আর সেখান থেকেই রামুয়ার ছেলে-স্ত্রীকে চেপে ধরার হাতিয়ার পায় পুলিশ। ফরেন্সিক তদন্তেও ছেলে-স্ত্রীর দেওয়া বয়ান অনুসারে ঘরে সাত-আটজন দুষ্কৃতী হাজির হওয়ার কোনও প্রমাণ মেলেনি। অন্য দিকে, বিছানার কাছে ছেলে এবং স্ত্রীর উপস্থিতির প্রমাণ মেলে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর অভাব নেই, বর্ণময় ব্রিগেড থেকে বিজেপির কটাক্ষের জবাব মমতার
ফের তদন্তকারীরা শুরু করেন জেরা। এবার শেষ পর্যন্ত সমীর এবং কাজল স্বীকার করে নেয় যে তাঁরাই রামুয়া খুনের ছক কষেছিল।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি(ব্যারাকপুর জোন ২) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘সমীর দুর্গাপুরে নিজের এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে। সে আবার বিশাখাপত্তনমে যোগাযোগ করেতার আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে। তারা তিনজনেই ওই রাতে আসে। খুন করে সোজা পালিয়ে যায়।”
পুলিশ সূত্রে খবর, রামুয়ার ছেলে সমীরের ছোট বেলাকার বন্ধুপ্রশান্ত কুমার সিংহ। প্রশান্ত দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তাকে প্রথম খুনের ছকের কথা বলে সমীর। প্রশান্ত এর পর যোগাযোগ করে বিশাখাপত্তনমে তার দুই বন্ধু বিশাল মেনন এবং শ্যামসুন্দর রাওয়ের সঙ্গে।
গত রবিবার রাতের বিমানে বিশাখাপত্তনম থেকে তিনজন এসে পৌঁছয় কলকাতায়। সেখান থেকে অ্যাপ ক্যাব নিয়ে সোজা সোদপুরে রামুয়ার ফ্ল্যাটে। বড় রাস্তায় ক্যাবটি দাঁড় করিয়ে তারা ফোন করে সমীরকে। সমীর নীচে নেমে এসে কোলাপসিবল গেট খুলে দেয়। জেরায় সমীর জানিয়েছে পুলিশকে, তিনজন ফ্ল্যাটে যখন পৌঁছয় তখন মদ খেয়ে ঘুমে অচেতন রামুয়া। আগেই রামুয়ার পিস্তল জোগাড় করে রেখেছিল তার স্ত্রী। সেই পিস্তল তুলে দেওয়া হয় ওই তিনজনের হাতে। তারা ঘুমের মধ্যেই কানের পাশে রামুয়াকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালায়। গুলির আওয়াজ চাপতে বালিশের মধ্যে দিয়ে গুলি চালানো হয় বলে ধৃতরা জানিয়েছে পুলিশকে। এক রাউন্ড গুলিতেই রামুয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করে তিনজন চুপচাপ বেরিয়ে পড়ে। ওই ক্যাব ধরেই সোজা ফিরে যায় বিমানবন্দর। সেখান থেকে ভোরের বিমান ধরে চম্পট দেয়। ঠিক এই কারণেই গুলির কোনও আওয়াজ পাননি প্রতিবেশীরা।
আনন্দ রায় জানিয়েছেন,“সমীরকে জেরা করে প্রথমে প্রশান্তর হদিশ মেলে। তাকে দুর্গাপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।তার দুই বন্ধু বিশাল এবং শ্যামসুন্দরকে গ্রেফতার করা হয় জামশেদপুর থেকে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় খুনে ব্যবহৃত রামুয়ার পিস্তল এবং পাঁচটি বুলেট। সঙ্গে নগদ তিরিশ হাজার টাকা।”
আরও পড়ুন: জেএনইউ কাণ্ডে আদালতে তিরস্কৃত দিল্লি পুলিশ
খড়দহের আইসি মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল রামুয়ার স্ত্রী এবং ছেলে-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করলেও এখনও কয়েকটা বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। যেমন কে গুলি চালাল? রামুয়াকে আগের রাতে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল কি না? এবং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন খুনের মোটিভ নিয়ে।
পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় রামুয়ার স্ত্রী এবং ছেলে দাবি করেছে, দীর্ঘদিন ধরেই স্ত্রীর উপর অত্যাচার করত রামুয়া। একই ভাবে ছেলের সঙ্গেও চলত দুর্ব্যবহার। সর্বোপরি, রামুয়ার মামলা লড়তে লড়তে আর্থিক সমস্যায় বাড়ছিল। কিন্তু জামিন পেয়ে বাড়ি ফেরার পর থেকেই উল্টে স্ত্রীর কাছে টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকে। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় সমীর এবং কাজল জানিয়েছে, রামুয়ার উপর বীতশ্রদ্ধ হয়েই খুনের সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
তবে তদন্তকারীরা এখনই ওই মোটিভ পুরোপুরি বিশ্বাস করতে চাইছেন না। তাঁদের একজন বলেন,“ অন্য কোনও সমীকরণও থাকতে পারে খুনের পিছনে। আমরা সমীরের বন্ধুদের ট্রানসিট রিমান্ডে নিয়ে আসছি। সমীর এবং কাজলকে এ দিন আদালতে তোলা হয়। দশদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy