Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ভাটপাড়ায় ফের আক্রান্ত পুলিশ, সিবিআই তদন্তের দাবি সাংসদ অর্জুনের

বৃহস্পতিবার গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল দুই নিরীহ ফুচকাওয়ালা—রামবাবু সাউ এবং ধর্মবীর সাউয়ের। ময়না তদন্তের পরে শুক্রবার বিকেলে দু’জনের দেহ এলাকায় ফিরতেই এ ভাবেই তেতে উঠল এলাকা। 

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের সামনে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের সামনে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ০৩:৫১
Share: Save:

পুলিশ আর র‌্যাফকে লক্ষ্য করে উড়ে আসছে ইট-পাথর। প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা খানাখন্দ, নর্দমা টপকে ছুটছেন। হোঁচট খেয়ে পড়েছেনও কেউ কেউ। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না জনতাকে। টানা ইটবৃষ্টির সঙ্গে চলছে গালিগালাজ। পুলিশকর্মীরা ঊর্ধ্বতন অফিসারদের কাছে গুলি ছোড়ার অনুমতি চেয়ে আর্জি জানাচ্ছেন প্রকাশ্যে।

শুক্রবার বিকেলের ছবি। উত্তর শহরতলির ভাটপাড়ার।

বৃহস্পতিবার গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল দুই নিরীহ ফুচকাওয়ালা—রামবাবু সাউ এবং ধর্মবীর সাউয়ের। ময়না তদন্তের পরে শুক্রবার বিকেলে দু’জনের দেহ এলাকায় ফিরতেই এ ভাবেই তেতে উঠল এলাকা।

কাঁকিনাড়ায় ইটবৃষ্টির মুখে পালাচ্ছে পুলিশ। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

তবে এ চিত্র শুধু এ দিনের নয়। গত এক মাস ধরেই পুলিশের দিকে ধেয়ে আসছে বোমা, গুলি, ইট, পাথর। প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। ১১ দিন আগে বোমার ঘায়ে মারা গিয়েছেন দুই নিরীহ বাসিন্দা মহম্মদ হালিম ও মহম্মদ মোক্তার। দোকান-পাট বন্ধ। আতঙ্কে গৃহবন্দি মানুষ। রবি প্রসাদ নামের এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এক মাস ধরেই ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া যেন মিনি কাশ্মীর হয়ে রয়েছে।’’

শুক্রবার রানি রাসমণি রোডে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ভাটপাড়ায় যা ঘটছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আশা করি, খুব দ্রুত এ সব বন্ধ হবে এবং প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করবে।’’

এ দিন বিকেলে পুলিশকর্তারা অবশ্য আর গুলি চালানোর অনুমতি দেননি। বরং হাত তুলে তাঁরা জনতার প্রতি শান্তির বার্তা দেন। পরে দু’টি দেহ নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশে বেরিয়ে যায় দু’টি শববাহী গাড়ি।

পুলিশ ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়ায় এ দিন বড় অশান্তি এড়ানো গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁদের প্রশ্ন এ ভাবে কত দিন চলবে? এলাকার বাজার বন্ধ। তাতে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনই রোজকার চাল-ডাল-আটা কিনতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সতীশ সাউ নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দার ক্ষোভ, “এই রুটে বাস-অটো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্য এলাকা থেকে বাজার করে আনতে হচ্ছে।” রবি প্রসাদ নামে এক ব্যবসায়ীর প্রশ্ন,

“ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া কি কাশ্মীর হয়ে গেল? আমরা দোকান খুলতে পারছি না। অনেকে কাজে যেতে পারছেন না। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। এটা কি রাজ্যের বিচ্ছিন্ন এলাকা?’’

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তা সত্ত্বেও শুক্রবার মোড়ে মোড়ে জনতার জটলা দেখা গিয়েছে। পুলিশ বাহিনী তেড়ে গেলে ভিড় সরে পড়েছে। বন্ধ ইন্টারনেট। সারি সারি দোকান বন্ধ। তার মধ্যে অনেক দোকানের শাটার ভাঙা। লুট হয়েছে মালপত্র।

স্থানীয় বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করুক। তা না করে তারা নিরীহ মানুষকে ধরছে। তৃণমূলকে জায়গা করে দেওয়ার জন্যই পুলিশ এটা করছে। তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি।’’

ভাটপাড়ার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি তিন সাংসদের দল গঠন করেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তাঁরা আজ, শনিবার ভাটপাড়া-সহ ব্যারাকপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখবেন। ওই দলে রয়েছেন এস এস অহলুওয়ালিয়া, সত্যপাল সিংহ ও বিডি রাম। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাছারি রোডের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৭টি তাজা বোমা। পুলিশ মনে করছে, বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর বোমার মশলা মজুত রয়েছে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Video Bhatpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy