সম্মান: আনিসুজ্জামানের হাতে ১৪২৩ বঙ্গাব্দের আনন্দ পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। পাশে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও দেশ পত্রিকার সম্পাদক হর্ষ দত্ত। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
ওখানে নিশ্চয় সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান ইত্যাদি হরেক বিষয়ের বই!
মঞ্চের পিছনে জল-রঙে আঁকা ছবির এক কোণে বইয়ের র্যাক। পুরোভাগে বিভিন্ন ভঙ্গিতে বিভিন্ন অবয়ব। কেউ বই পড়ছে চেয়ারে বসে, কেউ সোফায়, কেউ বা শুয়ে। রবীন্দ্রসঙ্গীত ধরেছেন রাশিদ খান, ‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রাণেশ হে।’ মাত্র ১৩ বছর বয়সে যাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়, ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন কৈশোরে, এমনকী পরে ব্রিটেনের লাইব্রেরির এক কোণে ডাঁই করা, অবহেলিত কাগজ থেকে বের করেন ব্রিটিশ আমলে নীলকুঠির চিঠিপত্র, সেগুলি যথাযোগ্য মর্যাদায় ক্যাটালগিং করে দেন ব্রিটিশ লাইব্রেরির জন্য, সেই গবেষক, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে সম্মান জানানোর জন্য আর কোন ছবিই বা ভাবা যেত?
শনিবার সন্ধ্যায় এই রকম মনোজ্ঞ পরিবেশেই ‘বিপুলা পৃথিবী’ বইয়ের জন্য আনিসুজ্জামানের হাতে ১৪২৩ সালের আনন্দ সম্মান তুলে দিলেন শঙ্খ ঘোষ। বই ভাবা, বই খাওয়া, বই ঘুমোনোর জল-রং ছবির সামনে তখন দুই নিরহং শিল্পী। অনুষ্ঠানের মূল সুর বাঁধা পড়েছিল ওই নিরুচ্চার মুহূর্তে।
তার আগে অভিজ্ঞানপত্র পড়ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়: ‘কী ভাবে ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার উত্তরণ ঘটানো যায় বৃহত্তর সাধনা-সন্ধানে। কী ভাবে দীর্ঘপ্রবাহী রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসকে একটি তিন দশকের খণ্ড-সময়ের সাংস্কৃতিক তথা সারস্বত কর্মকাণ্ডের বিচ্ছুরকে ব্যাখ্যা করা যায়…’
আরও পড়ুন:ছকভাঙা রবীন্দ্রগান প্রাণ ঢালল আনন্দ সন্ধ্যায়
পুরস্কার গ্রহণের বক্তৃতায় লেখক প্রথমেই জানালেন সাহিত্যপাঠের উপযোগিতা। অপরকে কী ভাবে চেনা যায়, কী ভাবে তার সম্পর্কে সন্দেহ ও ঘৃণামুক্ত হতে পারা যায়, তার উপায় সাহিত্যপাঠ। উম্বের্তো একোও তো একদা প্রায় একই কথা জানিয়েছিলেন!
আনিসুজ্জামান তার পর স্মৃতির সন্ধানে তুলে ধরলেন ১৯৯৪ সালে প্রথম বার তাঁর এই পুরস্কার পাওয়ার কথা। সে বার তাঁর সঙ্গে শামসুর রাহমান, অন্নদাশঙ্কর রায়, নরেন বিশ্বাসও সম্মানিত হয়েছিলেন। পাঁচতারা হোটেলের বলরুম জানে, ওই তিন জনেই আজ স্মৃতির গম্বুজ!
তার পরেই এল সেই বিশেষ মুহূর্ত। ‘বিশ্বের যেখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা যাঁরা করছেন, তাঁদের সকলের জন্য এই একটিমাত্র পুরস্কারই আজ উন্মুক্ত রয়েছে,’ বললেন আনিসুজ্জামান। বলরুম ভরে গেল করতালিতে। দর্শকাসনে বসে তখন কৃষ্ণা বসু, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, সেলিনা হোসেন। ওঁরাই যে এ বারের নতুন আনন্দ পুরস্কারের বিচারকমণ্ডলী, সে কথা প্রারম্ভেই জানিয়ে দিয়েছেন দেশ পত্রিকার সম্পাদক হর্ষ দত্ত।
গান, ছবি এবং কাঁটাতারের বেড়া লঙ্ঘন করে অক্ষয়তৃতীয়ার সন্ধ্যায় মনস্বী প্রাবন্ধিকের সম্মান। হীরক জয়ন্তীতে আনন্দ পুরস্কার সন্ধ্যার সারাৎসার এটাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy