(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূলের বহু দিন ধরে অভিযোগ যে, রাজ্যের বকেয়া টাকা মেটাচ্ছে না কেন্দ্র। সেই অভিযোগ নবান্ন তথা রাজ্য সরকারেরও। উল্টো দিকে, বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, রাজ্য ‘যথাযথ’ হিসাব না দেওয়াতেই বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে আসার দিনই তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছিল, তিনি ওই বিষয়ে জবাব দেবেন কি না। দলের তরফে তো বটেই, নেতা-মন্ত্রীরাও ‘আয়ে হো তো বতাকে যাও’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। ১০০ দিনের কাজ থেকে আবাস যোজনার টাকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জবাব চাওয়া হয়েছে।
সে জবাব সরাসরি প্রধানমন্ত্রী দেননি। তবে ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন পাল্টা কিছু প্রশ্ন তুলে। সভার শেষে মোদী কলকাতায় আসেন। রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাঁর। সেখানে রাজ্যের পাওনা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না, তা জানা না গেলেও মমতাকে একটি ফাইল নিয়ে রাজভবনে ঢুকতে দেখা যায়। তবে সেই বৈঠকের আগে মোদী যা বলেছেন তা ‘ইঙ্গিতবহ’।
আরামবাগের সভায় মোদী সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে যেমন আক্রমণ শানিয়েছেন, তেমনই দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে অপরাধ এবং দুর্নীতিতে এক নতুন উদাহরণ তৈরি করেছে। তৃণমূল এখানে শিক্ষায় দুর্নীতি করেছে। তৃণমূল পুরসভায় দুর্নীতি করেছে। সরকারি জিনিস কেনায় দুর্নীতি করেছে, রেশনে দুর্নীতি করেছে। জমিদখল, চিট ফান্ড, বর্ডারে পশু স্মাগলিং করেছে। কোনও ক্ষেত্র ছাড়েনি।’’ সেই সঙ্গেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘এখানে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে রোখার জন্য নানা চেষ্টা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী অপরাধীকে বাঁচাতে ধর্না দিচ্ছেন। তৃণমূল কেন্দ্রীয় প্রকল্পেও দুর্নীতি করতে চায়। মোদী এটা হতে দেয়নি। তাই মোদীকে তৃণমূল এক নম্বর শত্রু মনে করে।’’
এর পরেই গ্রামীণ এলাকা আরামবাগের জমায়েতের দিকে প্রশ্ন ছোড়েন মোদী— ‘‘আপনারাই বলুন, আমি কি এটা হতে দিতে পারি? যদি আমি এদের বিরুদ্ধে লড়াই করি, সেটা ঠিক কি না?’’ অর্থাৎ, পাল্টা প্রশ্ন তুলে মোদী বোঝাতে চেয়েছেন, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, এমন ক্ষেত্রে অর্থ দেওয়া ঠিক নয়। বুঝিয়ে দিয়েছেন, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তাঁর সরকার তার বিরোধিতা করবেই।
এর পরেই আক্রমণাত্মক সুরে মোদী বলেন, ‘‘মোদীর গ্যারান্টি দিচ্ছি, এখন যারা লুট করছে, তাদের সব ফেরত দিতে হবে! মোদী এদের ছাড়বে না! মোদী এদের হামলা, গালাগালিকে ভয় পায় না। আমি বাংলার মহিলা, যুব, মানুষকে গ্যারান্টি দিচ্ছি। যারা গরিবকে লুটেছে তাদের সব ফেরত দিতে হবে।’’ পাশাপাশিই প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির শাস্তি পাচ্ছেন এখানকার গরিব এবং মধ্যবিত্তেরা।’’
রাজ্য সরকার বাংলার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রকে সহায়তা করছে না বলেও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন ঝরিয়া, রানিগঞ্জ কোলফিল্ড প্রজেক্ট ছ’বছর আগে শুরু হলেও রাজ্য সরকার সেটি এগোতে দিচ্ছে না। ১৮,০০০ কোটি টাকার হলদিয়া এবং বোকারো পাইপলাইন প্রজেক্ট চার বছর ধরে পড়ে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘তারকেশ্বর থেকে বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে। ১০০০ কোটির বেশি টাকার অনুমোদন কেন্দ্র দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের জন্য প্রকল্পের কাজ হচ্ছে না। এমনকি, বাড়িও হতে দিচ্ছে না।’’
লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্র না দিলেও ১০০ দিনের টাকা রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। আবাস যোজনার ক্ষেত্রেও রাজ্য বাড়ি বানিয়ে দেবে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে আবাস যোজনা নিয়ে মোদীর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘দেশ জুড়ে চার কোটির বেশি পাকা বাড়ি হয়েছে। সেই সব পাকা বাড়িতে দিওয়ালি-হোলি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৪৫ লাখ বাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৪২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলার রাজ্য সরকার ঘর বানাতে নানা ভাবে বাধা দিচ্ছে।’’ রাজ্য যে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ায় উদ্যোগী, তা উল্লেখ না করলেও মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল এগুলো বানাতে পারবে না। করলে বিজেপিই করবে। মোদীই করবে। সব বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছনোর কাজ করছি আমরা। চার বছরে ১১ কোটির বেশি নতুন বাড়িতে জলসংযোগ পৌঁছে গেছে। কিন্তু প্রতি বাড়িতে জল পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার কচ্ছপের গতিতে এগোচ্ছে।’’ এর পরেই ভোট প্রচারের সুরে চলে যান মোদী। বলেন, ‘‘যাঁরা আপনার বাড়িতে জল পৌঁছে দিচ্ছেন না, তাঁদের দানাপানি বন্ধ করা উচিত। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিলেও ওঁরা সেটা নিয়ে কাজ করছেন না। গরিবদের ভালর জন্য কাজ হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy