Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

মোদীর বাড়িতেই বড়দিন! ‘সংখ্যালঘু’ খ্রিস্টান ভোটে পদ্মের ঝুলি ভর্তি করতে বিজেপির দূত বাংলার বার্লা!

নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভায় একমাত্র সংখ্যালঘু খ্রিস্টান প্রতিনিধি বাংলার জন বার্লা। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বড়দিন পালনের অনুষ্ঠানে দেখা গেল তাঁকে। আবার বড়দিনে কলকাতার চার্চে গেলেন সুকান্ত মজুমদার।

সোমবার দিল্লিতে নিজের বাসভবনে বড়দিনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী।

সোমবার দিল্লিতে নিজের বাসভবনে বড়দিনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটাআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৪২
Share: Save:

বড়দিন মানে বিজেপির কাছে দলের প্রয়াত নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন পালন। তবে লোকসভা নির্বাচনের মুখে বাজপেয়ীর সঙ্গে জিশুর জন্মদিন পালনেও সক্রিয় হয়েছে তারা। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের বাড়িতেই ক্রিসমাস পালন করেছেন। হাজির ছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খ্রিস্টান প্রতিনিধিরা। সেই অনুষ্ঠানে মোদীর সঙ্গে প্রথম সারিতে রইলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একমাত্র খ্রিস্টান প্রতিনিধি তথা বাংলার সাংসদ জন বার্লা।

প্রতি বছরের মতোই বড়দিনের সকালে সমাজমাধ্যমে খ্রিস্টানদের উদ্দেশে ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জানান মোদী। গত বছর বড়দিন মাসের শেষ রবিবারে হওয়ায় নিজের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে যিশুর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এ বার নিজের সরকারি বাসভবন নয়াদিল্লির ৭ নম্বর লোককল্যাণ মার্গে পালিত হল ক্রিসমাস পরব।

আরএসএস বরাবরই মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিস্টানদেরও নিন্দা করে এসেছে। ধর্মান্তর নিয়ে অভিযোগ তুলে এসেছে। কিন্তু সেই সংগঠনের প্রাক্তন প্রচারক মোদী আচমকাই খ্রিস্টধর্মের গুণগান করলেন। যিশুর করুণার প্রশংসা করার পাশাপাশিই মোদী বলেন, সমাজের সকলের জন্য উন্নয়নের কাজ করার ক্ষেত্রে সকলকে সমান অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের কাছে যিশুর জীবন ‘পথপ্রদর্শক বর্তিকা’ হিসাবে কাজ করে।

কলকাতায় বিশপ পরিতোষ ক্যানিং-এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা।

কলকাতায় বিশপ পরিতোষ ক্যানিং-এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা। — নিজস্ব চিত্র।

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বড়দিনের উৎসবের সূত্রেই মনে করা হচ্ছে, সার্বিক ভাবেই বিজেপি এ বার খ্রিস্টান ভোট নিজেদের ঝুলিতে টানতে চাইছে। পশ্চিমবঙ্গের অনেক আসনেই উল্লেখযোগ্য হারে খ্রিস্টান ভোট রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই রয়েছে খ্রিস্টানদের উপস্থিতি। সেখানে বিজেপি ওই সম্প্রদায়ের ভোটও পায়। নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুরে বিজেপির খ্রিস্টান বিধায়ক রয়েছেন। মোদী সোমবার উল্লেখ করেন গুজরাতের যে বিধানসভা আসনে তিনি তিন বার জিতেছিলেন, সেই মণিনগরের কথা। সেখানেও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। তবে দেশে বেশি খ্রিস্টান দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে। পশ্চিমের গোয়াতেও। ওই সব এলাকায় লোকসভা নির্বাচনে দেশের একমাত্র খ্রিস্টান মন্ত্রী বাংলার বার্লাকে বিজেপি ব্যবহার করতে চায় লোকসভা নির্বাচনে। সরাসরি স্বীকার না করলেও কেন্দ্রের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বার্লা সোমবার বলেন, ‘‘দল যেখানে যেতে বলবে যাব। সম্প্রতি কেরলে গিয়েছিলাম। ভোটের সময়েও যাব।’’ তবে কি বিজেপি খ্রিস্টান ভোট বেশি করে ঝুলিতে টানতে চাইছে? বার্লা বলেন, ‘‘মোদী সরকার কোনও সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা করে কিছু করেনি। এই সরকার সব কা সাথ, সব কা বিকাশ মন্ত্র নিয়ে চলে। ফলে সবাই উপকৃত। এখানে কোনও ধর্ম নেই। ফলে খ্রিস্টান ভোট বলে ভাগ করার প্রয়োজন নেই, আমরা সবার ভোটই পাব।’’

বড়দিনে উত্তর কলকাতার ক্যাথিড্রাল চার্চে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

বড়দিনে উত্তর কলকাতার ক্যাথিড্রাল চার্চে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। — নিজস্ব চিত্র।

বড়দিনে তাঁর বাড়িতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা আসায় তিনি ‘আহ্লাদিত’ জানিয়ে মোদী বলেন, ‘‘এমন এক বিশেষ এবং পবিত্র দিনে সকলে বাড়িতে আসায় আমি খুশি।’’ যিশুর বাণী এবং জীবন স্মরণে রাখা দরকার জানিয়ে মোদী বলেন, ‘‘হিন্দুদের উপনিষদ এবং খ্রিস্টানদের বাইবেল একই দর্শনের কথা বলে।’’ একই সঙ্গে জানান, তিনি কয়েক বছর আগে ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই সাক্ষাৎ তাঁর কাছে অত্যন্ত স্মরণীয়। মোদীর কথায়, ‘‘আমি পোপের সঙ্গে বিশ্বে শান্তিস্থাপন, সামাজিক সম্প্রীতি, বিশ্বভ্রাতৃত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম।’’ তাঁর সরকারের স্লোগান ‘সব কা সাথ, সব কা বিশ্বাস, সব কা বিকাশ, সব কা প্রয়াস’ পোপ ফ্রান্সিসের একটি বক্তৃতার সঙ্গে খুবই মেলে বলেও উল্লেখ করেন মোদী।

বাংলা-সহ গোটা দেশেই সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের। ঐতিহাসিক ভাবেই সেই অংশের সমর্থন বিশেষ পায় না বিজেপি। সেই পরিস্থিতিতে খ্রিস্টান সম্প্রদায় যে বিজেপির লক্ষ্য, তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছে। মোদী মন্ত্রিসভায় কোনও মুসলমান প্রতিনিধিত্ব না থাকলেও রয়েছেন খ্রিস্টান বার্লা। মোদী জমানার শুরুতে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্বে নাজমা হেপতুল্লা বা মুখতার আব্বাস নকভি থাকলেও ২০২২ সালের জুলাইয়ে মন্ত্রী হন স্মৃতি ইরানি। বাংলাতেও বরাবর দলের সংখ্যলঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি পদে মুসলমান মুখ থাকলেও এখন সেই পদে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী চার্লস নন্দী। বড়দিনে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে নেতাদের যাওয়ার নতুন নজিরও তৈরি হয়েছে রাজ্যে। সোমবার মোদীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি যেতে হবে বলে রবিবার ক্রিসমাসের আগেরদিন বার্লা কলকাতায় বিশপ পরিতোষ ক্যানিংকে শুভেচ্ছা জানাতে যান। বড়দিনে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যান উত্তর কলকাতার পর্তুগিজ চার্চ স্ট্রিটের ক্যাথিড্রাল চার্চে।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi BJP Jesus Jesus christ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE