(বাঁ দিক থেকে) শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। —গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সাফল্যের জন্য প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) সংস্থা আইপ্যাক-কে অনেকটাই কৃতিত্ব দেন শাসক শিবিরের নেতাদের একটি বড় অংশ। যে ‘সহায়তা’ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও নিচ্ছে শাসক তৃণমূল। তা অপ্রত্যাশিত নয়। যা চমকপ্রদ, রাজ্য বিজেপিও এ বার ভোটের লড়াইয়ে একটি পেশাদার সংস্থার হাত ধরছে।
অতীতেও বিভিন্ন রাজ্যে এমন সাহায্য নিয়েছে বিজেপি। বাংলাতেও সমীক্ষার ক্ষেত্রে পেশাদার সংস্থার ব্যবহার ছিল। কিন্তু এ বার নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের ‘হ্যাটট্রিক’ নিশ্চিত করতে এবং অমিত শাহের দেওয়া ৩৫ আসনের লক্ষ্যে লড়াই করতে পুরোপুরি পেশাদার সংস্থার সাহায্য নিতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। ইতিমধ্যেই কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় মুম্বইকেন্দ্রিক ভোট-কুশলী সংস্থা ‘জার্ভিস টেকনোলজি অ্যান্ড কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেড’ কাজ শুরু করে দিয়েছে। যদিও রাজ্য নেতৃত্ব এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই নির্বাচনী লড়াইয়ের নিজস্ব কৌশল থাকে। সেটা দলের একেবারে অভ্যন্তরীণ বিষয়। সংবাদমাধ্যমের কাছে বলার জন্য নয়।’’
নীলবাড়ির লড়াইয়ে দলের নেতাদের দেওয়া তথ্যে ভিত্তি করেই ভোট লড়েছিল বিজেপি। ক্ষমতায় আসা দূরে থাক, বাংলায় আশানুরূপ ফলও পায়নি তারা। পরে ভোট পর্যালোচনা করতে গিয়ে দলের সেই ‘ত্রুটি’ ধরা পড়ে। জানা যায়, জেলা থেকে রাজ্য হয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে যে তথ্য-পরিসংখ্যান পৌঁছেছিল, তার সঙ্গে বাস্তবের ফারাক ছিল অনেক। তার ফলে অনেক আসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যায়নি বলে দলেই আলোচনা হয়েছিল। এ বার তাই প্রথম থেকেই ‘নিরপেক্ষ’ সংস্থার তথ্যের উপর ভিত্তি করে আসনভিত্তিক পরিকল্পনা করতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি।
সংস্থাটি মূলত পরিসংখ্যান নিয়েই কাজ করে। বিজেপির জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিসংখ্যান দেওয়ার পাশাপাশি প্রচারে কোন এলাকায় কোন বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে তা-ও ঠিক করবে তারা। পাশাপাশিই জারভিস বিজেপির হয়ে ‘লাভার্থী’ খোঁজায় সহায়তা করবে। অর্থাৎ, প্রথম ও দ্বিতীয় মোদী সরকারের আমলে কারা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ‘লাভ’ পেয়েছেন, তার হিসাবও দেবে জার্ভিস। সেই সঙ্গে ঠিক করে দেবে কোন আসনে কেন্দ্রের কোন ‘সাফল্য’ প্রচার করলে নির্বাচনে সাফল্য আসবে।
ওই সংস্থার সঙ্গে অবশ্য রাজ্য বিজেপির কোনও চুক্তি হয়নি। হয়েছে কেন্দ্রীয় বিজেপির। সামগ্রিক ভাবে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে জার্ভিস বিজেপির লোকসভা নির্বাচনের ‘ব্যাক অফিস’ সামলাবে। দলের তরফে তার দায়িত্বে রয়েছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল। তিনি আবার বাংলারও দায়িত্বে। আর জার্ভিসের পক্ষে গোটা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন সংস্থার কর্তা দিগ্গজ মোগরা। বিজেপি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বাংলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দিগ্গজ। কলকাতায় তো বটেই, জেলায় জেলায় জার্ভিসের দফতর খোলার পরিকল্পনাও তৈরি হয়েছে।
রাজ্য বিজেপি প্রথম বার আলাদা কর্মী নিয়োগ করে ‘কল সেন্টার’ বানিয়েছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে। সেই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় গোটা বিষয়টি দেখতেন। মধ্য কলকাতার মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য দফতরের একেবারে উপরের তলায় সেই ‘কল সেন্টার’ চলত সকলের চোখের আড়ালে। ২০২১ সালে হেস্টিংসে যে বিশাল নির্বাচনী দফতর খোলা হয়েছিল, তার একটি তলা জুড়ে ছিল কল সেন্টার। সেখানেও সাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল না। তবে এ বার আরও বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেই বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।
মুরলীধর সেন লেনের দফতরের কিছুটা অংশ কলকাতা উত্তর জেলা ব্যবহার করবে। বেশি অংশ জুড়ে চলবে জার্ভিসের কাজ। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে বিজেপি যে নতুন রাজ্য দফতর করেছে, লোকসভা নির্বাচনে সেটিই হবে দলের প্রধান ‘ওয়ার রুম’। ওই পাঁচ তলা বাড়ির চারটি তলা নিয়ে প্রথমে বিজেপি দফতর বানায়। চার তলায় ছিল অন্য একটি সংস্থার অফিস। সম্প্রতি সেই তলাটিও বিজেপি নিয়ে নিয়েছে। ওই বাড়ির তিনতলায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়েই বিজেপি একটি কল সেন্টার বানিয়েছিল। সেটি থাকছে দলীয় কাজের জন্য। এখন চার তলায় জার্ভিসের দফতর হবে। এ ছাড়াও, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আপাতত ১৭টি দফতর হবে। সেখান থেকে পাশাপাশি জেলার কাজও দেখা হবে। পরবর্তীকালে ৪২টি লোকসভা আসনের জন্য আলাদা আলাদা দফতর খোলারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জার্ভিসের এক কর্তা। তবে এর বেশি কোনও পরিকল্পনা তিনি জানাতে রাজি হননি।
গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বিজেপির পক্ষে ‘কল সেন্টার’-এর দেখভাল করতেন রাজ্য নেতা দীপাঞ্জন গুহ। এখন সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের সহ-সভাপতি সঞ্জয় সিংহকে। তবে রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, গোটা বিষয়টি দেখবেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। সোমবার রাতেই কলকাতায় আসছেন শাহ। সঙ্গে আসার কথা সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডারও। সফরসূচি বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁদের ফিরে যাওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে দফায় দফায় রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন নড্ডা ও শাহ। সেখানে জার্ভিস কী কাজ করবে, কী ভাবে করবে সে বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
অতীতে অন্য রাজ্যে যে ভাবে এই ধরনের সংস্থা বিজেপির হয়ে কাজ করেছে, তেমন হলে প্রার্থীবাছাই থেকে প্রচার— সবকিছুতেই জার্ভিসের ভূমিকা থাকবে। প্রাথমিক ভাবে ওই সংস্থা রাজ্য জুড়ে সমীক্ষা করবে। যে কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। বুথ স্তরে বিজেপির ‘আসল’ শক্তি দেখার সঙ্গে সঙ্গে কোন এলাকায় দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে কেমন বিভাজন, কাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা-ও সমীক্ষা করে রিপোর্ট দেবে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বকে। জনবিন্যাস সমীক্ষা করে বিজেপির কোথায় কেমন প্রার্থী দেওয়া উচিত, সে পরামর্শও দিতে পারে জার্ভিস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy