Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

পরিবেশ নিয়ে কে ভাবে, আগে তো ‘পুণ্য’ হোক

পানীয় জল আর খাবার খাইয়ে পুণ্য লাভের জেরে রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে থাকে প্লাস্টিকের গ্লাস, বাটি, থার্মোকলের থালা। সঙ্গে রাস্তা জুড়ে পুণ্যার্থীদের ঢল নামায় দোসর হয় তীব্র যানজট।

অপরিষ্কার: বরাহনগরের বি টি রোডে পড়ে প্লেট-গ্লাস। নিজস্ব চিত্র

অপরিষ্কার: বরাহনগরের বি টি রোডে পড়ে প্লেট-গ্লাস। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
বিতান ভট্টাচার্য শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০০
Share: Save:

পুণ্যার্থীদের ‘আপ্যায়ন’-এর জেরে শিকেয় পরিবেশ বিধি!

গোটা শ্রাবণ মাসের শেষ সপ্তাহে এমন অভিযোগে বিদ্ধ শহরের দু’প্রান্তের দুই ব্যস্ত রাস্তা— বি টি রোড ও জি টি রোড। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পথচারীদের অভিযোগ, শ্রাবণ মাসের প্রতি শনি-রবিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত রাস্তা দু’টিতে শিব-ভক্তদের ঢল নামে। ‘ভোলে বাবা পার করে গা’ ধ্বনি তুলে বাঁক কাঁধে পুণ্যার্থীর দল হেঁটে চলেন তারকেশ্বরের পথে। আর

তাঁদের পানীয় জল আর খাবার খাইয়ে পুণ্য লাভের জেরে রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে থাকে প্লাস্টিকের গ্লাস, বাটি, থার্মোকলের থালা। সঙ্গে রাস্তা জুড়ে পুণ্যার্থীদের ঢল নামায় দোসর হয় তীব্র যানজট। অভিযোগ, তাতে ফেঁসে থাকতে হয় যাত্রীদের। এ বিষয়ে পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি ধর্মীয়, তাই তেমন কোনও অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তবে রাস্তা সচল রাখার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকে।’’

প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের প্রথম শনি ও রবিবার শুরু হয় পুণ্যার্থীদের তারকেশ্বর যাত্রা। কলকাতা-সহ আশপাশের জেলা থেকে বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও মহিলারা দল বেঁধে বেরিয়ে পড়েন শিবের মাথায় জল ঢালতে। কেউ বাসে চেপে উত্তর কলকাতায় এসে সেখানকার কোনও গঙ্গার ঘাট থেকে জল তুলে বি টি রোড ধরে, বালি ব্রিজ পার করে উত্তরপাড়ার জি টি রোড হয়ে তারকেশ্বরের দিকে যান। কেউ আবার হাওড়া স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরে পৌঁছন হুগলির ওই শৈবতীর্থে। তবে হাওড়ার দিক থেকে যাওয়া বেশির ভাগ পুণ্যার্থীই স্টেশন সংলগ্ন ঘাট থেকে গঙ্গার জল নিয়ে জি টি রোড ধরে হাঁটা শুরু করেন।

হাওড়া ও বরাহনগরের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই পুণ্যার্থীদের জন্য রাস্তায় কয়েক হাত অন্তর সামিয়ানা টাঙিয়ে চেয়ার-টেবিল পেতে শিবির খোলেন স্থানীয় যুবকেরা এবং বিভিন্ন সংগঠন। সেই শিবির থেকে পুণ্যার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় খিচুড়ি, লুচি, তরকারির প্লেট, শরবত, ঠান্ডা পানীয় জলের গ্লাস। রাস্তায় হাঁটার মধ্যেই কোনও মতে সেগুলি খেয়ে সেই প্লেট ও গ্লাস রাস্তাতেই ফেলে দেন পুণ্যার্থীরা।

অভিযোগ, উচ্ছিষ্ট খাবার ও জল রাস্তায় পড়ে কাদা প্যাচপ্যাচে অবস্থা তৈরি হয়। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি হয় আরও ভয়াবহ। পিছল রাস্তায় ঘটে দুর্ঘটনাও।

প্লাস্টিকের গ্লাস ও থার্মোকলের প্লেট রাস্তায় ছড়াছড়ি হয়ে তো পরিবেশ দূষিত হচ্ছে? বি টি রোডের উপরে এমনই একটি শিবিরের আয়োজক সংস্থার এক সদস্যের কথায়, ‘‘পরিবেশ দূষণ হয় ঠিকই। কিন্তু প্রতি শনি ও রবিবার কয়েক হাজার গ্লাস কিনতে হয়। প্রতি পিস প্লাস্টিকের গ্লাস পাওয়া যায় ১-২ টাকায়। সেখানে কাগজের গ্লাসের দাম অনেক বেশি।’’ অনেকটা একই দাবি জি টি রোডে বালিখালের কাছে থাকা শিবিরের সদস্যদেরও। তাঁদের কথায়, ‘‘ভক্তদের একটু জল খাইয়ে সেবা করা মানে পুণ্য অর্জন করা। তাই সকলেই প্রতি বছর ক্যাম্প করেন।’’

কিন্তু স্থানীয় পুর প্রশাসন কী ভাবে এই পরিবেশ দূষণ মেনে নিচ্ছে? বরাহনগরের চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দিলীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘অভিযোগ অস্বীকার করছি না। তবে ধর্মীয় বিষয় বলে বেশি কড়াকড়ি করা হয় না। আমরা প্রতিটি ক্যাম্পকেই অনুরোধ করি পরিবেশ রক্ষা করার।’’ তিনি আরও জানান, রবিবার ছুটির দিন হলেও রাস্তা থেকে প্লাস্টিকের গ্লাস ও প্লেট তুলে নেওয়ার জন্য ওই দিন এবং সোমবার সকালে অতিরিক্ত সাফাইকর্মীকে বি টি রোডে কাজে লাগানো হয়। সাফাইয়ের বিষয়ে একই যুক্তি দিয়েছেন হাওড়ার পুরকর্তারাও।

সব মিলিয়ে প্রতি বছরের শ্রাবণ মাসের শনি ও রবি শিব-ভক্তদের আতঙ্কে দিন কাটে নগরবাসীর।

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Pollution Traffic Pilgrim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy