ভারী বৃষ্টিতে ফুঁসছে দ্বারকেশ্বর। অস্থায়ী রাস্তা ভেসে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বিষ্ণুপুরের প্রকাশগ্রাম ও গোপালপুর। ছবি: শুভ্র মিত্র
কোথাও গাছ পড়ে বা বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে রাস্তা বন্ধ, কোথাও গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুৎহীন। কোথাও জলের তলায় কজ়ওয়ে, কোথাও আবার নদীতে ভাঙন। ঠেকানো যায়নি মৃত্যুও।
ভাদ্রের শুরুতেই নিম্নচাপের লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দক্ষিণবঙ্গের জনজীবন। শুক্রবার রাতভর বৃষ্টি হয়েছে বেশিরভাগ এলাকায়। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়াও। উপকূলে কোথাও কোথাও ঝড়ের গতিবেগ ছিল ৭০-৭৫ কিলোমিটার। দিঘা, মন্দারমণিতে তিন দিনের ছুটিতে বেড়াতে এসে হোটেলবন্দি হয়ে পড়েছেন পর্যটকরা। উত্তাল সমুদ্রে স্নানে নামা বারণ। মৎস্যজীবীদেরও সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমায় বেশ কয়েকটি নদীবাঁধে ফাটল দেখা দিলেও নোনা জল সে ভাবে ঢোকেনি। বাসিন্দাদের মতে, মরা কটাল থাকায় রক্ষা পেয়েছে বাঁধগুলি। তবে শনিবার উপকূলে বৃষ্টির মাত্রা ততটা ছিল না।
শুক্রবার রাতে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের শিবপুরে রাস্তায় ছিঁড়ে পড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম গণেশ শাসমল (৩২)। পেশায় মাইক ব্যবসায়ী গণেশ ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই গ্রামের পুজো কমিটির বৈঠকে যাচ্ছিলেন। তখনই ওই ঘটনা ঘটে। শুক্রবার মুহূর্তের ঝড়ে ক্যানিং ২ ও সন্দেশখালি ১ ব্লক এলাকায় বহু বাড়ি ও গাছ ভাঙে। প্রশাসনের তরফে দুর্গতদের ত্রিপল, শুকনো খাবার বিলি করা হয়েছে। অনেক পরিবারকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে আনা হয়েছে। খেজুরিতে সমুদ্রের বাঁধ ছাপানো জলে বসতি এলাকা ডুবেছে। খেজুরির নিচ কসবা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সমুদ্ভব দাস বলেন, ‘‘বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।’’
শুক্রবার রাতে দুর্যোগের মধ্যে বিপত্তি বাধে হলদিয়ায়। হলদি নদীতে ডুবে যায় একটি লঞ্চ। তবে কোনও যাত্রী না থাকায় বড় বিপদ হয়নি। লঞ্চের কর্মীরা ঝাঁপিয়ে বেঁচেছেন। রূপনারায়ণে তিনটি নৌকা উল্টে যায় শনিবার। তবে বিপদ হয়নি। খারাপ আবহাওয়ার কারণে হলদিয়া মহকুমায় এ দিন সব রুটের লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ রেখেছিল প্রশাসন।
হাওড়ার আমতায় রূপনারায়ণের পাড়ে প্রায় ২০০ ফুট ধস নেমেছে। জেলা সেচ দফতরের আধিকারিক চন্দ্রশেখর রপ্তান বলেন, ‘‘মেরামতের কাজ চলছে। আশঙ্কার কারণ নেই।’’ হুগলির বৈদ্যবাটী শহরের রাজবংশীপাড়া ঘাটের অনেকটা অংশও শুক্রবার গঙ্গার ভাঙনে তলিয়ে যায়। ১৫০-২০০ মৎস্যজীবী পরিবার আতঙ্কে। দ্বারকেশ্বর নদের ধস বেড়ে গোঘাটের মণ্ডলগাঁথি গ্রাম লাগোয়া রাস্তা তলিয়ে গিয়েছে।
ঝড়-বৃষ্টিতে তার ছিঁড়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, এগরা, মহিষাদল, সুতাহাটা, নন্দীগ্রামের বহু গ্রাম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। হাসপাতাল ও থানায় জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগের জেরে প্রায় তিন দিন বিদ্যুৎহীন হয়ে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ১ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বহু এলাকাও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগীদের। বিএমওএইচ বিশ্বরূপ সনগিরি বলেন, ‘‘জেনারেটর নেই। রাতে একটি নর্মাল প্রসবের সময় সমস্যায় পড়তে হয়। হাসপাতালে থাকা দু’-তিনটি চার্জার আলো, কয়েকটি টর্চ জ্বেলে প্রসব করানো হয়েছে।’’ শনিবার বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি। ফ্রিজের ওষুধ-সহ ভ্যাকসিন নষ্টের আশঙ্কা রয়েছে।
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার অনেক কজ়ওয়ে (নিচু সেতু) জলের তলায় চলে গিয়েছে। পুরুলিয়ার কিছু এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিমি-র বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বান্দোয়ান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গাছ ভেঙে প্রচুর পাখির মৃত্যু হয়। মেদিনীপুর শহরেও গাছ পড়ে বন্ধ হয় যান চলাচল। একাধিক জায়গায় তোরণও ভেঙে পড়ে। শুক্রবার রাতেই এলাকায় পৌঁছয় পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দল। গড়বেতা কলেজের সামনে রাজ্য সড়কে গাছ পড়ে বন্ধ হয়েছিল যান চলাচল। পরে গাছ কেটে সরানো হয়। গোয়ালতোড়ে অনেক গ্রামে মাটির বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy