Advertisement
E-Paper

পুজো দেওয়ার ভিড় নেই, কালীঘাটে উৎসাহ শুধু স্কাইওয়াক ঘিরে

স্কাইওয়াকের কোন রাস্তা কোথা দিয়ে নেমেছে, ঘুরে দেখছিলেন অনেকে। অনেকেই স্বীকার করলেন, স্কাইওয়াক তৈরি হওয়ায় বড় রাস্তা থেকে মন্দিরে পৌঁছে যাওয়া অনেক নির্ঝঞ্ঝাট হয়েছে।

ফ্রেমবন্দি: নববর্ষের সকালে মন্দিরে পুজো দিতে এসে কালীঘাট স্কাইওয়াকে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত তরুণীরা। মঙ্গলবার।

ফ্রেমবন্দি: নববর্ষের সকালে মন্দিরে পুজো দিতে এসে কালীঘাট স্কাইওয়াকে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত তরুণীরা। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:২২
Share
Save

বিগত কয়েক বছরের মতো এ বারও পয়লা বৈশাখে কালীঘাট মন্দিরে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেল না। যদিও নবনির্মিত এবং সদ্য উদ্বোধন হওয়া স্কাইওয়াক দেখার জন্য কিছু মানুষ এসেছিলেন।

মঙ্গলবার সকালে কালীঘাট স্কাইওয়াকে উঠে দেখা গেল নিজস্বী তোলার ধুম। দেওয়ালের মুরাল-সহ স্কাইওয়াকের বিভিন্ন অংশের ছবি তুলছেন অনেকেই। দর্শনার্থীদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্র মন্দির নয়, নতুন তৈরি হওয়া স্কাইওয়াক। মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েই স্কাইওয়াকে উঠে পড়েছেন অনেকে। ঝকঝকে নতুন স্কাইওয়াকের চলমান সিঁড়ি দিয়ে বার বার ওঠানামা, উপর থেকে নিজস্বীর পাশাপাশি আশপাশের ছবি তোলা— এ সবেই যেন মজে রইলেন সকলে। স্কাইওয়াকের কোন রাস্তা কোথা দিয়ে নেমেছে, ঘুরে দেখছিলেন অনেকে। অনেকেই স্বীকার করলেন, স্কাইওয়াক তৈরি হওয়ায় বড় রাস্তা থেকে মন্দিরে পৌঁছে যাওয়া অনেক নির্ঝঞ্ঝাট হয়েছে।

কিন্তু মাথায় হাত পড়েছে স্কাইওয়াকের নীচে বসা ব্যবসায়ীদের। তাঁরা জানালেন, পয়লা
বৈশাখেও বিক্রিবাট্টা তেমন নেই। এমনই এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘সকাল থেকে দোকান খুলে বসে আছি। কার্যত মাছি তাড়ানো ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। তা-ও গত কয়েক বছরে বাজার মন্দা ও রাস্তা খারাপ থাকা সত্ত্বেও দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে
দর্শনার্থীরা টুকটাক নানা জিনিসপত্র কিনতেন। কিন্তু এ বছর তার সিকিভাগও বিক্রি নেই। দর্শনার্থীরা সকলেই স্কাইওয়াক দিয়ে যাতায়াত করছেন। নীচের দিকে কারও নজর নেই। স্কাইওয়াক নির্মাণের জন্য আমাদের দোকান তুলে দেওয়া হয়নি। ভালই ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতাই তো নেই। ব্যবসা হচ্ছে না। সারা বছর যে কেমন কাটবে, তা তো এখনই বোঝা যাচ্ছে।’’ মন্দিরের কাছে ফুল ও মিষ্টি ব্যবসায়ীদেরও একই অবস্থা। তাঁদের কথায়, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, পয়লা বৈশাখে মন্দিরে ভক্তদের ভিড় কমছে। তার উপরে তীব্র গরম। তাই অনেকেই মন্দিরমুখো হননি।’’

এ দিন সকালে কালীঘাট মন্দির চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, শামিয়ানা টাঙিয়ে ভোর থেকে বসে
রয়েছেন পুরোহিতেরা। কিন্তু হালখাতা নিয়ে এসে পুজো করানোর যজমানের দেখা নেই। মন্দিরে লোকজন আসছেন। কিন্তু তাঁরা অধিকাংশই হালখাতার পুজোয় আগ্রহী নন। সাধারণ দর্শনার্থী। সকাল ১০টার পরেও মন্দিরের ভিতরে দর্শনার্থীর সংখ্যা শতাধিক ছিল
না বলে জানালেন কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী। তবে, খুব ভোরে অল্প ভিড় হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে সেবায়েতরা বললেন, ‘‘ওই ভিড় প্রতি মঙ্গল ও শনিবারই হয়। ওটা পয়লা বৈশাখের ভিড় নয়।’’

এ দিন দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য কলকাতা পুলিশের তরফে অতিরিক্ত
পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু দর্শনার্থীদেরই সে ভাবে দেখা মিলল না। তাই দেখা গেল, কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা গল্পগাছা করতে বা নিজেদের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। মন্দিরের পাঁচটি গেটে চার-পাঁচ জন করে পুলিশকর্মী ছিলেন। কিন্তু ভিড় বা ধাক্কাধাক্কির কোনও ব্যাপারই ছিল না। মন্দিরের একাধিক সেবায়েতের কথায়, ‘‘সকালের ও দুপুরের তীব্র গরম এড়াতে অনেকেই সোমবার গভীর রাতে এসে হালখাতা পুজো করিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। সকালে অবশ্য দূর-দূরান্ত থেকে আসা কিছু ব্যবসায়ী হালখাতা পুজো করিয়েছেন।’’

একাধিক সেবায়েতের বক্তব্য, প্রায় সব ব্যবসার অবস্থাই খারাপ। এটা অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। পয়লা বৈশাখে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার দর্শনার্থীর লম্বা লাইন ভবিষ্যতেও আর চোখে পড়বে না বলেই তাঁরা মনে করছেন। তবে, এ দিন বিকেলের পরে অল্প ভিড় হয়েছিল। কিন্তু প্রসাদী মিষ্টি বা ফুল-মালার বিক্রি তেমন হয়নি বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।’’ এক ফুল ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘জবার মালার দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। অনেকেই এখন মালা কিনছেন‌ না। শুধু প্রসাদ দিয়ে পুজো করে চলে যাচ্ছেন। প্রসাদের সঙ্গে দু’একটা জবা হয়তো দিচ্ছেন। বাজার খুবই মন্দা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kalighat Skywalk

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}