—ফাইল চিত্র
নিজেকে সরকারি আবাস যোজনার সুবিধাপ্রাপক বলে দাবি করে বহু দিন আগে টাকা নিয়েও অনেকে বাড়ি করেননি। আবার বাড়ি তৈরির টাকা নেওয়ার পর থেকে অনেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন। এই ধরনের ‘ভুয়ো’ প্রাপকের কাছ থেকে টাকা ফেরত নিয়ে আবাস যোজনার উপভোক্তার তালিকা ‘বেনোজলমুক্ত’ করার কাজ শুরু করল প্রশাসন। ‘বেনোজল’ ঠেকাতে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, যে-সব ‘অবৈধ’ উপভোক্তা টাকা ফেরাতে রাজি নন, তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার কাজও শুরু হয়েছে জেলায় জেলায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে অনেকে পরে যেমন তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, একই ভাবে সরকারি টাকার ‘অপব্যবহার’ করলে শাস্তির হুঁশিয়ারি দেওয়ায় টাকা ফেরত দিতে চাইছেন অনেকেই। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে অন্তত ২৫০ জন টাকা ফেরত দিয়েছেন। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ এক কোটিরও বেশি।
প্রশাসন জানিয়েছে, বাড়ি তৈরির লক্ষণ নেই, এমন সব উপভোক্তার টাকা ফেরত নেওয়ার পাশাপাশি প্রকল্পের তথ্য ভান্ডার থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামও বাদ দেওয়া হবে। কিন্তু বহু গ্রাহকের খোঁজ না-মেলায় উপভোক্তা-তালিকা সংশোধনের কাজে কার্যত নাজেহাল অবস্থা জেলা প্রশাসনগুলির। যাঁরা টাকা ব্যবহার করেননি, তাঁদের কাছ থেকে তা ফেরত নিয়ে বরাদ্দ বাতিল করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “অনেকেই আছেন, যাঁরা ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ সালে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছিলেন, কিন্তু এখনও বাড়ির কাজ শুরু করেননি। ফলে ধরে নিতে হবে, তাঁদের বাড়ির প্রয়োজন ছিল না। অনেক উপভোক্তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হতে পারে, তাঁরা কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে গিয়েছেন। এই দুই ধরনের উপভোক্তাদেরই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া দরকার।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ঘূর্ণিঝড় আমপানের দাপটের পরেও বেআইনি ভাবে আর্থিক সাহায্য নেওয়া অনেককেই পরে টাকা ফেরত দিতে হয়েছিল। স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, ছাত্র-ঋণ কার্ড ইত্যাদি প্রকল্পে বিপুল বরাদ্দ করতে হচ্ছে সরকারকে। ‘জলে’ দেওয়ার মতো টাকা নেই। ভুয়ো উপভোক্তা বার করতে আগেই স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্প যাচাই করেছে রাজ্য।
গত ১৮ নভেম্বর হাওড়ার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্তাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, “প্রকল্পের কাজ সরাসরি করবে, যাতে কেউ এখান থেকে টাকাপয়সা নিতে না-পারে। যার প্রয়োজন আছে, একমাত্র সে-ই টাকা পাবে। যার চারতলা বাড়ি রয়েছে, সে বাড়ি পেয়ে গেল আর যার কিছু নেই, সে পেল না— এটা চলবে না।”
গৃহহীনদের পাকা বাড়ি তৈরির জন্য আবাস যোজনায় টাকা দেয় সরকার। ২০১১ সালের ‘সোশিও ইকনমিক কাস্ট সেনসাস’ মেনে উপভোক্তাদের তথ্য ভান্ডার তৈরি করা হয়। প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পাওয়ার পরে কাজের অগ্রগতির প্রমাণ পেলে দ্বিতীয় কিস্তির ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। একই ভাবে পাওয়া যায় তৃতীয় কিস্তির ১০ হাজার টাকা। এ ভাবে তিন কিস্তিতে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা মেলে। অভিযোগ, অনেকে প্রথম কিস্তির টাকা নিয়েও কাজ শুরু করেননি। বাড়ি তৈরির প্রমাণ দেখাতে না-পারায় দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাননি তাঁরা। প্রশাসনের অন্দরের ব্যাখ্যা, আবাস যোজনার আওতায় ২০১৬-১৭ আর্থিক বছর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৪.৫৬ লক্ষ বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বাড়ি তৈরি সম্পূর্ণ হয়েছে কমবেশি ৩০.৩৭ লক্ষ, শতাংশের হিসেবে তা ৮৭.৮৭%।
জেলা প্রশাসনগুলি জানাচ্ছে, চলতি প্রকল্পের নির্বাচিত তালিকার কাজ সম্পূর্ণ না-হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের ‘আবাস-প্লাস’ শুরু করা সম্ভব নয়। প্রথম তালিকার কাজ শেষ করতে মূলত দু’টি সমস্যা দেখা দিয়েছে। ১) টাকা নিয়েও যাঁরা বাড়ি
তৈরি করেননি, টাকা ফেরত দেওয়ার আগে তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। ২) গ্রামসভার সম্মতি অথবা গ্রাম পঞ্চায়েতের ‘রেজ়োলিউশন’ বা প্রস্তাব না-থাকলে অবৈধ উপভোক্তার নাম বাদ
দেওয়া যায় না। রাজনৈতিক কারণে অনেকে এই ‘অপ্রিয়’ কাজটা করতে রাজি হন না। তাই তালিকা পরিমার্জনের কাজ ধাক্কা খাচ্ছিল। “এই কারণে তালিকা থেকে কাউকে বাদ দিতে গেলে বিডিও-র রিপোর্টকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার,” বলেন এক জেলা-কর্তা।
মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে জানান, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৫১ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েতসচিব এমভি রাও মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ৫৪ লক্ষ বাড়ি তালিকাভুক্ত হয়েছে। সেই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, “আগে যারা নাম লিখিয়েছে, তাদেরটা দেখে নিয়ে যোগ্য উপভোক্তাদের কাজ আগে করতে হবে। তালিকাভুক্তদের কাজ আগে শেষ করো। পরের দফায় বাকিটা দেখা যাবে। এই ভাবে অগ্রাধিকার স্থির করতে হবে।”
সরকারের সিদ্ধান্ত, আদিবাসী, তফসিলি, সংখ্যালঘু, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির পাশাপাশি যাদের ঘর মাটির, তাদের পাকা বাড়ি তৈরির বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখতে হবে। ইতিমধ্যে তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত ন্যায্য উপভোক্তাদের ২০ লক্ষ বাড়ি তৈরির বিষয়টিও অগ্রাধিকারে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy