পিছনে মাথা তুলেছে জিন্দলদের সিমেন্ট কারখানা। প্রকল্পের বাকি জমি পড়ে রয়েছে। সেখানেই ছাগল চরাচ্ছেন গোপেন মাহাতো। শনিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কামব্যাক’ ক্রিকেট রাজ্যে প্রবাদপ্রতীম। এ বারে তাঁর সেই ভাবমূর্তির উপরে ভরসা রাখছে গোপেন মাহাতোরা।
বড় মাপের ইস্পাত কারখানার প্রতিশ্রুতি সেই বাম আমল থেকে শুনছে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জিন্দল গোষ্ঠীকে জমি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তার পর দেড় দশক অতিক্রান্ত। ইস্পাত কারখানা হয়নি। শালবনি পেয়েছে শুধু জিন্দলদের সিমেন্ট কারখানা। প্রকল্পের জন্য নেওয়া জমির অনেকটা পড়ে রয়েছে।
সেখানে ছাগল চরাতে যাচ্ছিলেন গোপেন মাহাতো। কয়েক মাসের মধ্যেই শালবনিতে ইস্পাত কারখানা হবে— স্পেনের মাদ্রিদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে সৌরভের সেই ঘোষণার কথা শুনেছেন গোপেন। তাঁর বিশ্বাস, ‘‘সৌরভ যখন হবে বলেছেন, তখন নিশ্চয়ই হবে।’’ জিন্দলদের কারখানার জন্য গোপেনও জমি দিয়েছেন। তিনি আর স্ত্রী আলপনা দিনমজুরি করেন। ছেলে সৌমেন পরিযায়ী শ্রমিক, থাকেন চেন্নাইতে। মেয়ে পায়েল কলেজে পড়ছে। আসনাশুলির বাসিন্দা গোপেন বলছিলেন, ‘‘কারখানাটা হলে যেন এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। তা হলে আমার ছেলেটাও ফিরতে পারবে।’’ স্থানীয় অবনী মাহাতো জুড়লেন, ‘‘দাদা ফাঁকা কথার লোক নন। উনি ঠিক করে দেখাবেন।’’ আদিত্য মাহাতো জানালেন, ‘‘জিন্দলরা প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। আমরা কয়েক জন কর্নাটকে গিয়েছিলাম। তবে আমি এখন ব্যবসা করি।’’
সৌরভ জানিয়েছেন, এর আগে তিনি দু’টি ইস্পাত কারখানা করেছেন। তৃতীয়টি খুলতে চলেছেন শালবনিতে। ইতিমধ্যে রাজ্যের ছাড়পত্র মিলেছে। সংবাদ সংস্থার খবর, সৌরভের হাত ধরে শালবনিতে ইস্পাত শিল্পে লগ্নি করছে ক্যাপ্টেন স্টিল সংস্থা। সংস্থাটির ডিরেক্টর সঞ্জয় গুপ্ত বলেন, ‘‘সৌরভ আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু। ওঁর সহযোগিতায় রাজ্যে একটি ইস্পাত কারখানা গড়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে ন্যূনতম ৬০০-৭০০ একর জমির আর্জি জানিয়েছিলাম। ১০ লক্ষ টনের একটি সার্বিক (ইন্টিগ্রেটেড) ইস্পাত কারখানা গড়াই আমাদের লক্ষ্য। সম্ভাব্য লগ্নির পরিমাণ ২৫০০ কোটি টাকা।’’ সঞ্জয় জানান, প্রকল্পের মূল লগ্নিকারী হবে তাঁদের সংস্থাই। তাঁর আশা, শীঘ্রই তাঁরা প্রকল্পের প্রয়োজনীয় লাইসেন্স পাবেন। আড়াই বছরের মধ্যে প্রকল্পের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্র রয়েছে তাঁদের।
বাম আমলে শালবনিতে প্রায় ৪,৩০০ একর জমি দেওয়া হয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠীকে। এর বেশিরভাগই ছিল সরকারি জমি। আর কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছিল। জমি দিয়েছিলেন প্রায় ৪৯০ জন। জমিদাতা পরিবারের একজনকে কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। ২০০৮ সালের নভেম্বরে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে সে দিনই ফেরার পথে তাঁর কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ হয়। শুরু হয় মাওবাদী-পর্ব। জিন্দলরা ইস্পাত কারখানার পরিকল্পনা বাতিল করে। বদলে সিমেন্ট কারখানা গড়ার প্রস্তুতি দেয়। পরিবর্তনের পরে, ২০১৮ সালে সেই কারখানার উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা এ-ও স্পষ্ট করেছিলেন, শিল্পের জমি ফেলে রাখা যাবে না। কয়েক মাস আগে শালবনিতে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘জিন্দলদের শিল্পের জন্য কিছু জমি লেগেছে। বাদবাকি জমি ওঁরা ফেরত দিচ্ছেন। সেখানে বড় কারখানা তৈরি হবে।’’ ইতিমধ্যে জিন্দলদের সিমেন্ট কারখানার সম্প্রসারণ হয়েছে। রঙের কারখানা গড়া হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, প্রায় দেড় হাজার একর বা তার কিছু বেশি জমি রেখে বাকিটা ফিরিয়ে দিতে পারে জিন্দল গোষ্ঠী। সেখানেই মাথা তুলবে সৌরভের ইস্পাত কারখানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy