Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্রাম রক্ষায় নন্দীগ্রামের ধাঁচে কমিটি, অন্য জেলায় সংযুক্তি নয়, দাবিতে অনড় মায়াচর

প্রসঙ্গত, বছরখানেক আগের থেকে মায়াচরকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে সরিয়ে হাওড়া জেলার অন্তর্ভুক্ত করার জল্পনা শুরু হয়েছিল। মায়াচরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মহিষাদলের পরিবর্তে হাওড়ার শ্যামপুরে একটি হাইস্কুলে পরীক্ষা কেন্দ্র বদল করা হয়েছিল।

 জেলায় থাকার দাবিতে সভায় মায়াচরবাসী। মঙ্গলবার মায়াচর হাইস্কুল মাঠে। নিজস্ব চিত্র

জেলায় থাকার দাবিতে সভায় মায়াচরবাসী। মঙ্গলবার মায়াচর হাইস্কুল মাঠে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মহিষাদল শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২৫
Share: Save:

পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর মায়াচর নিয়ে মন্তব্যের পর থেকেই চাপা উত্তেজনা ছিল পূর্ব মেদিনীপুরেরম এই দ্বীপ এলাকায়। এ বার নন্দীগ্রামের ধাঁচে গ্রামরক্ষা কমিটি গড়ে আন্দোলনের পথে নামলেন মায়াচরের বাসিন্দারা। সোমবার গ্রাম রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে মায়াচরে প্রতিবাদ মিছিল বেরোয়। পরে মায়াচর হাইস্কুল মাঠে একটি জনসভাও হয়। কমিটির দাবি, মায়াচরকে পূর্ব মেদিনীপুরে সঙ্গেই রাখতে হবে। তাকে হাওড়া জেলার অন্তর্ভুক্তিকরণ তাঁরা মানবেন না।

প্রসঙ্গত, বছরখানেক আগের থেকে মায়াচরকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে সরিয়ে হাওড়া জেলার অন্তর্ভুক্ত করার জল্পনা শুরু হয়েছিল। মায়াচরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মহিষাদলের পরিবর্তে হাওড়ার শ্যামপুরে একটি হাইস্কুলে পরীক্ষা কেন্দ্র বদল করা হয়েছিল। তারপর এই নিয়ে আর কোনও আলোচনা শোনা যায়নি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মায়াচরে নৌকাডুবিতে দু’জনের মৃত্যর ঘটনায় ফের আলোচনায় উঠে আসে মায়াচর। তা আরও গুরুত্ব পায় ৫ অক্টোবর নন্দকুমারে দুর্গাপুজোর একটি অনুষ্ঠানে জেলার তৃণমূল নেতা ও পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর একটি মন্তব্যে। শুভেন্দু বলেন, ‘‘মায়াচরকে হাওড়া জেলার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসনকে একটি প্রস্তাব পুজোর ছুটির পর পাঠানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। যদিও যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখ্যমন্ত্রীই নেবেন।’’ মন্ত্রীর এ হেন কথায় বিচলিত হয়ে পড়েন মায়াচরের মানুষ। দেখা দেয় ক্ষোভ। নৌকাডুবির জেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া মায়াচর থেকে মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়া পর্যন্ত নৌকা চলাচল ফের চালু করার দাবি জানিয়ে বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। কিন্তু তা না হওয়ায় বাড়তে থাকে ক্ষোভ। স্থানীয়দের ক্ষোভ আঁচ করতে পেরে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন মায়াচরে শাসক দলের নেতৃত্ব। এমনকী প্রতিবাদে পঞ্চায়েত এবং দলের যাবতীয় পদ থেকে গণ ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। যদিও পরে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আসেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু মায়াচর নিয়ে রাজ্য সরকার এখনও স্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করায় সেখানকার মানুষে আতঙ্ক, ক্ষোভ থেকেই গিয়েছে। কোনওভাবেই যাতে মায়াচরকে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে আলাদা করা না হয় সেই দাবিতে সেখানকার মানু‌ষজন তৈরি করেছেন মায়াচর গ্রাম রক্ষা কমিটি।

কমিটির নেতৃত্বে থাকা শঙ্কর মাইতি এবং শ্রীনিবাস গুড়িয়া বলেন, ‘‘মায়াচরকে কোনও অবস্থাতেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে সরিয়ে হাওড়া জেলার অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। সেইসঙ্গে মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়ার সঙ্গে মায়াচরের মধ্যে অবিলম্বে নৌকা চলাচল শুরু করতে হবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে জেলাশাসক সহ পূর্ব মেদিনীপুরের প্রশাসনের সর্বস্তরে আমরা আমাদের দাবি পৌঁছে দেব।’’ কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিনের কর্মসূচিতে হাজার তিনেক বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন। সকলেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মধ্যে মায়াচরকে রাখার পক্ষে। তাই ঠিক হয়েছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে তাঁদের দাবি পূর্ব মেদিনীপুর জেলাশাসকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

জেলাশাসক পার্থ ঘোষ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এদিন প্রতিবাদ মিছিল এবং জনসভায় দলের কেউ ছিল না বলে দাবি অমৃতবেড়িয়া অঞ্চল যুব তৃণমূল নেতা প্রবীর প্রামাণিকের। তিনি বলেন, ‘‘মায়াচরকে পূর্ব মেদিনীপুরে রাখার ব্যাপারে সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী এবং জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী সঙ্গে দেখা করে আমাদের দাবি জানিয়েছি। তাঁরা আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই এই কর্মসূচিতে আমাদের দলের কেউ ছিল না।’’ যদিও কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে সকলেই হাজির ছিলেন বলে দবি কমিটির নেতা শঙ্কর মাইতির। সমস্ত বিষয়টি জানার পর শিশিরবাবু বলেন, ‘‘মায়াচরকে হাওড়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, তা নিয়ে রাজ্য সরকার একেবারেই প্রাথমিক স্তরে চিন্তা ভাবনা করছে। আর নৌকা চলাচল শুরু হবে কি না তা সংশ্লিষ্ট দফতর বলতে পারবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Committee Mayachar Nandigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy