Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Sitrang

ঠাঁইনাড়া হতে হয় বার বার, হারায় ঘরবাড়িও

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দাদের সোমবার থেকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। তাঁদেরই এক জন বাগপাড়া গ্রামের মণিমালা মাইতি।

ফ্লাড শেল্টারে। নিজস্ব চিত্র।

ফ্লাড শেল্টারে। নিজস্ব চিত্র।

সমরেশ মণ্ডল
ঘোড়ামারা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৫৯
Share: Save:

তাড়াহুড়ো করে বাক্স-প্যাঁটরা গোছাচ্ছিলেন মণিমালা। মুখে একরাশ বিরক্তি। বললেন, ‘‘বছরে কত বার যে এই দুর্ভোগ সহ্য করতে হয় আমাদের!’’ প্লাস্টিকে মোড়া কয়েকটা কাগজ দেখিয়ে বললেন, ‘‘এই দেখুন না, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডের মতো জিনিসপত্র এক জায়গায় করে গুছিয়ে রাখি। কখন ভিটে ছাড়তে হবে, বলা যায় না।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দাদের সোমবার থেকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। তাঁদেরই এক জন বাগপাড়া গ্রামের মণিমালা মাইতি। স্থানীয় মিলন বিদ্যাপীঠের পাশে ফ্লাড শেল্টারে আশ্রয় পেয়েছেন সপরিবার। জানালেন, গত বছর ইয়াসে ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছিল। কোনও মতে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

তিন দিকে নদী, এক দিকে সমুদ্রে ঘেরা এলাকা ঘোড়ামারা। প্রতিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাসে ছোট হয়ে আসছে দ্বীপের পরিধি। অনেকেরই ভিটেমাটি জলে তলিয়েছে। বার বার ঠাঁইনাড়া হতে হতে বিরক্ত মানুষজন। হতাশ মণিমালা বলেন, ‘‘সরকার আর কী করতে পারে। প্রকৃতি যদি এই আচরণ করে, তবে মানুষ পালাবে কোথায়!’’

গত কয়েক বার ঝড়ের আগে ঘোড়ামারা দ্বীপ থেকে বাসিন্দাদের সাগরদ্বীপের বামনখালি ফ্লাড শেল্টারে আনা হত। এ বার ওই দ্বীপেই ফ্লাড শেল্টার তৈরি হয়েছে। বাসিন্দারা অনেকেই দ্বীপ ছাড়তে রাজি হন না বলে প্রশাসনের অভিজ্ঞতা। এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘গ্রামের বাইরে ফ্লাড শেল্টারে গিয়ে দেখেছি, ফিরে এসে বাড়িঘরের কিছু জিনিস আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সব লুটেপুটে নেয়। প্রতিবার ঝড় এলে যখন বাড়ি ছাড়তেই হবে, তখন গ্রামের কোথাও আশ্রয় নেওয়াই ভাল। আবহাওয়া একটু ভাল থাকলে অন্তত দিনে এক বার ভিটেটা নিজের চোখে দেখে তো যেতে পারব!’’

ফ্লাড শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া বছর পঞ্চাশের আমিন খাঁ বলেন, “ইয়াসে ঘরবাড়ি ডুবে গিয়েছিল। এখন রাস্তার ধারে ছিটে বেড়ার ঘরে ত্রিপল টাঙিয়ে কোনওমতে থাকি। জানি না, এ বার ঝড় এলে সেটুকুও থাকবে কি না। বয়স বাড়ছে। প্রকৃতির সঙ্গে এই লড়াইটা আর কত দিন চালিয়ে যেতে পারব, কে জানে!’’

ত্রাণ শিবিরে বসে নিয়মিত রেডিয়োয় কান পেতে রেখেছেন আমিন। পাশে বসেছিলেন খাসিমারা গ্রামের মৌমিতা মণ্ডল। বাচ্চা নিয়ে ত্রাণ শিবিরে এসে উঠেছেন। মৌমিতাও জানালেন, গত বছর ইয়াসে ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, “নদীর ধারে বসবাস করলে ঘর হারানোর চিন্তা লেগেই থাকে। দুর্যোগের জন্য বছরে তিন-চার বার ত্রাণ শিবিরে আসতে হয়।’’

মণিমালা বলেন, “স্বামী দিনমজুরি করেন। সংসার চালাতে মাঝেমধ্যে ভিন্‌ রাজ্যে যেতে হয়। তাতেও সংসারের হাল ফেরে না।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘শান্তিতে সংসার করা আমাদের কপালে নেই।”

ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জীব সাগর বলেন, ‘‘ছোট্ট দ্বীপ। বিপদ লেগেই থাকে। দুর্যোগের খবর পাওয়া মাত্র বাসিন্দাদের দ্বীপের ফ্লাড শেল্টারে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের রাতে খাবার ব্যবস্থা থাকছে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া, জেনারেটর লাগানো হয়েছে।’’

সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল জানালেন, সোমবার বিকেল পর্যন্ত ঘোড়ামারা দ্বীপের ২৮০০ জন বাসিন্দা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতি খারাপ হলে তাঁদের সাগরে সরিয়ে আনা হবে।

আশ্রয় শিবিরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, প্রকৃতির সঙ্গে অসম লড়াইটা চালিয়ে যেতে যেতে ভয় কাটিয়ে উঠেছেন। এখন একরাশ বিরক্তি আর হতাশা গ্রাস করেছে তাঁদের। মণিমালার কথায়, ‘‘আমাদের এই দুর্দশা ঘোচার নয়, বুঝে গিয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Sitrang South 24 Pargana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy