ছন্দে: বসিরহাটের নতুন বাজারে কেনাকাটা চলছে। —নিজস্ব চিত্র।
উত্তেজিত জনতাকে শান্ত হতে বলে বার বার হাতজোড় করতে দেখা যাচ্ছিল যাঁদের, সেই আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদেরই বুটের মশমশ শব্দ আর কড়া চাহনিতে শনিবার অন্য ছবি বসিরহাটে। ভয়ে দরজা-জানলা এঁটে যে গেরস্থ বসে কেঁপেছেন এ ক’দিন, তিনিই বাজারের থলে হাতে বেরিয়ে পড়লেন শহরে।
পুলিশ-প্রশাসনের ভরসায় শনিবার থেকে এ ভাবেই চেনা ছন্দে ফিরতে শুরু করল অশান্তির ভরকেন্দ্র, বসিরহাট। প্রশাসনের ডাকা শান্তি বৈঠক, পাড়ায় পাড়ায় সাদা পতাকা নিয়ে মিছিল, রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের ছবি হাতে হেঁটে যাওয়া ছোট ছোট ছেলেমেয়ের দল— সব মিলিয়ে শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। বাজার বসেছে। চেনা ভিড়ে উপচে পড়েছে লোকাল ট্রেন।
আরও পড়ুন: বাদুড়িয়া নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন রাজ্যের
সোমবার থেকে শুরু হওয়া অশান্তি এ ক’দিনে বসিরহাটের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। শুক্রবারও বসিরহাটের নানা প্রান্তে রাতপাহারায় ছিলেন অনেকে। মাঝে মধ্যেই কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, ‘‘ওই, ওরা আসছে।’’ এ ক’দিনে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে আতঙ্ক বাসা বেঁধেছিল শহরবাসীর মধ্যে।
শনিবার অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা বলেছেন, ‘‘কোনও ভয় নেই। আপনারা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোন। সব দায়িত্ব আমাদের।’’ এক প্রবীণ নাগরিকের কথায়, ‘‘এটাই তো আমরা শুনতে চাইছিলাম। কিন্তু কেউ ভরসা দিচ্ছিল না।’’
দেবেই বা কী করে? পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাই হোন কিংবা কমব্যাট ফোর্সের জওয়ান, সকলকেই হাতজোড় করে কথা বলতে দেখা গিয়েছে উত্তেজিত জনতার সামনে। গোলমাল থামানোর অনুরোধ-উপরোধই ছিল পুলিশের প্রধান অস্ত্র। মাঝে মধ্যে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গেলেও জনতার ইট-পাটকেলের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি তারা। পুলিশ-র্যাফের কাঁদানে গ্যাসের উত্তরে যখন দুষ্কৃতীরা বোমা-গুলি চালিয়েছে, বার বার পিছু হঠতে হয়েছে আইনরক্ষকদের।
শনিবার ৪ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনীর ঘনঘন টহলদারি দেখা গিয়েছে। কোথাও সামান্যতম বেগড়বাই দেখলে হাত খুলে ঠেঙিয়েছেন জওয়ানেরা। শান্তি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এ দিন মহকুমাশাসকের অফিসে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন কর্তারা। ছিলেন পুরপ্রধান তপন সরকার। বাদুড়িয়াতেও শান্তি বৈঠক করেছেন পুরপ্রধান তুষার সিংহ। ৃশান্তি কমিটিও গড়া হয়েছে। পাইকপাড়ায় গোলমাল চরমে পৌঁছেছিল। সেখানে এ দিন শান্তি বৈঠকে বসেন ব্যবসায়ীরা। স্টেশন এলাকায় বাজার কমিটিও আলোচনায় বসে।
বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘কেউ যেন গুজবে কান না দেন। গুজব না ছড়ান।’’ সাংসদ ইদ্রিশ আলি আবার বলেন, ‘‘সকলে মিলেমিশে বাস করুন। এটাই বসিরহাটের ঐতিহ্য।’’
কয়েক দিনের আতঙ্ক ভুলে এ দিন বিকেলের পর থেকে শহরের রাস্তাঘাটে বেরিয়ে পড়েন অনেকে। এক মহিলার কথায়, ‘‘ক’দিন কী ভাবে যে কেটেছে। আজ একটু খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিতে বেরিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy