অনড়: কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বুথ আগলে গ্রামবাসীরা। শনিবার, রাজারহাটের বালিগড়িতে। ছবি: সুমন বল্লভ।
দশের লাঠি একের বোঝা। পুরনো এই প্রবাদ সত্যি হল নিউ টাউনের বালিগড়িতে।
রাতভর এলাকায় বোমা পড়েছে। এসেছে শাসানি, হুমকি। সকাল থেকে খবর এসেছে, পার্শ্ববর্তী নিউ টাউনে ভোটারদের বুথে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। আশপাশের গ্রামে তৃণমূল সমর্থকেরা বুথ দখলের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রেখে তাঁরা লোকজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ঘুরছেন। একই পঞ্চায়েতের অন্য একটি ভোটকেন্দ্রের ভিতরে গুলি ও বোমা চলার খবরও এসেছিল তত ক্ষণে। তবুও জল ও দেশলাই নিয়ে রাত পর্যন্ত প্রবল চাপের সামনে লড়ে নজির গড়ল নিউ টাউনের বালিগড়ি গ্রাম।
পঞ্চায়েত ভোটের সকালটা অন্য ঝাঁঝ নিয়েই শুরু করেছিলেন বাসিন্দারা। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে প্রায় বসে মার খেয়েছেন বলে তাঁদের দাবি। ভোট লুটেরও সাক্ষী থাকতে হয়েছিল। তাই এ দিন সকাল থেকে অন্য মেজাজে ছিলেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া ভোট হবে না, এই দাবিতে গ্রামবাসীরা বালিগড়ি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাথরঘাটা পঞ্চায়েতের অধীন পাঁচটি বুথে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁদের অভিযোগ, ভোট পরিচালনার জন্য সেখানে কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে রাখা হয়েছিল। যা দেখে বিরোধী দলের প্রার্থীরা আপত্তি করেন। প্রতিবাদে শামিল হন বালিগড়ির বাসিন্দারা।
সূত্রের খবর, ভোট শুরু করাতে তৃণমূল পুলিশে আবেদন করে। তখন স্থানীয় টেকনো সিটি থানার ওসি-সহ বিধাননগর পুলিশের কয়েক জন কর্তা ওই স্কুলে পৌঁছন। তত ক্ষণে বুথের বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে ধর্নায় বসেন নুর ইসলাম, জসিমউদ্দিন, হাফিজুল ইসলামের মতো বিরোধী দলের প্রার্থীরা। পুলিশ গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও তাঁরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি থেকে সরতে চাননি।
আসগর আলি নামে এক বৃদ্ধ গ্রামবাসী বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত এবং বিধানসভায় ভোট লুট করে নিয়ে গিয়েছে। গ্রামের মানুষকে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়েছে। ছোট ছেলেরা বয়স্কদের মেরে মুখচোখ ফাটিয়ে দিয়েছে। সেই পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে জন্যই গ্রামবাসীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে অনড় ছিলেন।’’
চাপে পড়ে সকাল সাড়ে দশটার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তিন জওয়ানকে পুলিশ বালিগড়ি অবৈতনিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে নিয়ে এলে ভোট শুরু হয়। গ্রামবাসীদের দাবি, জওয়ানদের এলাকা টহলদারির কাজে লাগানো হয়েছিল। রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির ১২ নম্বর আসনের সিপিএম প্রার্থী আখতার আলি মোল্লার কথায়, ‘‘শুক্রবার যে জওয়ানেরা এলাকায় ঘুরলেন, ভোটের সকালে তাঁদের না দেখে লোক খেপে ওঠেন।’’
এ দিন ভোট চলাকালীন ওই কেন্দ্রে গেলে লোকজন বলেন, ‘‘তৃণমূলের একাধিক নেতা এই কেন্দ্রে হামলা চালাতে ছক কষছেন। তৈরি রয়েছি দেশলাই আর জল নিয়ে। ছাপ্পা করতে এলে হয় ব্যালট ভিজিয়ে দেব, নয়তো জ্বালিয়ে দেব। ভোট লুট হতে দেব না।’’
অবশ্য দুপুরে ওই পাথরঘাটা পঞ্চায়েতেরই পাথরঘাটা হাইস্কুলে বোমাবাজি হয়। তাজা বোমাও উদ্ধার হয়। গুলি চালানোর অভিযোগ করেন ভোটকর্মী ও স্থানীয়েরা। সেখানে ৯৮ ও ৯৯ নম্বর বুথে ঢুকে সিসি ক্যামেরা ভেঙে ছাপ্পা দেওয়া হয় এবং বিরোধী দলগুলির স্লিপ ছেঁড়া হয় বলে অভিযোগ।
এক ভোটকর্মীর কথায়, ‘‘দরজায় লাথি মেরে লোক ঢুকে পড়ে। এমনকি, ব্যালট বাক্সে জল ঢেলে চলে যায়।’’ অন্য দিকে, জ্যাংড়া-হাতিয়াড়ার একটি বুথে প্রার্থীদের মারধর ও হেনস্থা করা হচ্ছে বলে ব্যালট বাক্স তুলে নিয়ে খালে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে।
নিউ টাউনের শহর ও গ্রামে ছাপ্পা ভোট বা বুথ জ্যামের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী পর্যাপ্ত না থাকায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে পুলিশ গোলমালের খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy