Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
বর্ষণের আশঙ্কা আজও

বৃষ্টির বাউন্সার সামলে উৎসবে জয় জনতারই

একার বাগড়ায় কাজ হচ্ছে না বুঝেই বুঝি অসুর নম্বর টু-কে তলব করেছিল ঘূর্ণাসুর! সে-ও সমানে হেনে গিয়েছে বরুণবাণ। পদে পদে দিয়েছে বাউন্সার। কিন্তু উৎসব-পাগল বাঙালিকে সামলানো যে জোড়া অসুরেরও কম্মো নয়, বুঝিয়ে দিয়েছে মহানবমী। তাই রাতশেষে ঘূর্ণাসুরের দাপট নয়, জয়ী জনগণেশই।

আজ বিজয়া দশমী: জল ভেঙে ঠাকুর দেখা। নবমী সন্ধের বৃষ্টিতে জলমগ্ন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। সোমবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

আজ বিজয়া দশমী: জল ভেঙে ঠাকুর দেখা। নবমী সন্ধের বৃষ্টিতে জলমগ্ন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। সোমবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৬ ০২:১১
Share: Save:

একার বাগড়ায় কাজ হচ্ছে না বুঝেই বুঝি অসুর নম্বর টু-কে তলব করেছিল ঘূর্ণাসুর! সে-ও সমানে হেনে গিয়েছে বরুণবাণ। পদে পদে দিয়েছে বাউন্সার। কিন্তু উৎসব-পাগল বাঙালিকে সামলানো যে জোড়া অসুরেরও কম্মো নয়, বুঝিয়ে দিয়েছে মহানবমী। তাই রাতশেষে ঘূর্ণাসুরের দাপট নয়, জয়ী জনগণেশই।

নমুনা ১: বৃষ্টি একটু ধরেছে কি ধরেনি, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে এল ভিড়টা! জল-কাদা পেরিয়ে সোজা হাঁটা দিল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দিকে।

নমুনা ২: চেতলা অগ্রণী দেখে নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘে যাওয়ার পথেই আচমকা হানা দিল বৃষ্টি। একটা ছাউনি খোঁজার আগেই ভিজে গেলেন তিন বান্ধবী। কুছ পরোয়া নেহি! বৃষ্টি কমতে ভিজে পোশাকেই ফের শুরু হয়ে গেল ঠাকুর দেখা।

সহজে ময়দান ছাড়ার পাত্র নয় ঘূর্ণাসুরও। সোমবার, নবমী-সন্ধ্যার ভারী বৃষ্টিতেও শেষ হয়নি হামলা। কখনও ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি হয়েছে, কখনও বা ঝমঝমিয়ে। মাঝেমধ্যে গুড়গুড় শব্দে ডেকে উঠেছে মেঘ। কিন্তু বাঙালিকে দমিয়ে রাখবে কে? বাউন্সারের পর বাউন্সারে একটু টাল খেয়ে গেলেও শেষমেশ চার হাঁকিয়েই পুজোর ইনিংস শেষ করেছে বাংলা।

চেষ্টায় ত্রুটি রাখেনি ঘূর্ণাসুর। বোধনের দুপুর থেকেই ওড়িশায় ঘাঁটি গেড়ে সপ্তমী-অষ্টমীর উৎসবে বাগড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু তার উৎপাতকে বিশেষ আমল দেয়নি ‘উৎসব-পাগল’ বাঙালি। উল্টে দুর্গার মানবসন্তানদের হাতে বেদম ঠেঙানি খেয়ে দম হারিয়ে ফেলেছে সে। আবহবিদদের ধারণা ছিল, নবমীতে এ রাজ্যে ঢুকে থানা গাড়বে ঘূর্ণাসুর। ভারী বৃষ্টিতে ধুয়ে দেবে মহানগরকে। কিন্তু হাওয়া অফিসের খবর, দিশাহারা ঘূর্ণাসুর ওড়িশা ছেড়ে সরে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের দিকে।

তা হলে এ দিন বৃষ্টি হল কেন?

এই বর্ষণের মূলে আছে ঘূর্ণাসুর নম্বর টু। এ দিনই রাজ্যের উপকূলে ঠাঁই নিয়েছে নতুন একটি ঘূর্ণাবর্ত।

রেডার-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা বলছেন, নতুন ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবেই শহরের পরিমণ্ডলে থাকা জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বজ্রগর্ভ উল্লম্ব মেঘ তৈরি করেছে। সেই মেঘ থেকেই সন্ধ্যায় ভারী বৃষ্টি নামে। দুপুরের দিকে এমনই একটি বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়েছিল উত্তর শহরতলিতে। ভারী বৃষ্টি নামিয়েছে সে-ও। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আজ বিজয়াদশমীতেও বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের আশঙ্কাও আছে।

সপ্তমী থেকে যানজটকে মোটামুটি বাগে আনলেও দেশপ্রিয় পার্ক এ বারেও কাবু করেছে পুলিশকে। ভিড় সামলানোর পুলিশি পরিকল্পনায় সমস্যায় পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। সন্ধ্যার বৃষ্টির পরে ফের যানজট। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বিধান সরণিতে গাড়ি নড়ছিল না। গাড়ি আটকে পড়ছিল আশুতোষ মুখার্জি রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, নিউ আলিপুর রোডেও। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘যানজটকে মোটামুটি বাগে এনে ফেলেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির জন্যই ফের জট পাকিয়ে গেল গাড়ির!’’

পুলিশ কাবু হলেও সন্ধ্যার পরে নবমীর ভিড়ে তেমন ভাটা পড়েনি। দুপুরে মেঘ দেখে একটু দমে যান মধ্যমগ্রামের রুম্পা ভট্টাচার্য। কিন্তু বৃষ্টি ধরতেই ট্রেন ধরে সোজা শিয়ালদহ! ট্রেন থেকে নামতে না-নামতেই ফের শুরু হয়ে যায় বর্ষণ। থমকে যেতে হল ঠিকই। তবে বৃষ্টি থামতেই সোজা স্টেশন লাগোয়া রেলওয়ে অ্যাথলেটিক্সের মণ্ডপ। দশমীর ভোরে ঠাকুর দেখা শেষ করেছেন এক়ডালিয়ায়! সন্ধ্যার প্রবল বৃষ্টির পরেও মহম্মদ আলি পার্ক, কলেজ স্কোয়ারে লম্বা লাইন। শ্যামবাজার থেকে লম্বা লাইন ঢুকেছে হাতিবাগানে। সিকদারবাগানের প্রতিমা দেখে তারিফ মুখে মুখে। ভিড় ঢুকেছে হরি ঘোষ স্ট্রিট, বিডন স্ট্রিটের পুজোগুলিতেও।

শোভাবাজারে নামা মেট্রোর ভিড় চলে গিয়েছে ওই এলাকার বিভিন্ন পুজোয়। কুমোরটুলি সর্বজনীন, আহিরীটোলা সর্বজনীন বা যুবকবৃন্দ, কাঁসারিবাড়ির পাশাপাশি মানুষ ভিড় করেছেন শোভাবাজার বড়তলা সর্বজনীনের পুজোতেও। সেখান থেকে ভিড়ের একাংশ ঢুকেছে পোস্তার দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিটে। সেখানে গোয়ালিনী দুর্গা প্রশংসা কুড়িয়েছে।

শহরতলি থেকে এ দিনও দমদম পার্ক, লেক টাউনে ঢুকে পড়েছে ভিড়। দমদম পার্ক তরুণ দল, শ্রীভূমি স্পোর্টিং দেখে ভিড়ের একাংশ চলে এসেছে উল্টোডাঙায়। আগেভাগে শহরের পুজো দেখে ফেলা অনেকেই এ দিন ঢুকে প়়ড়েছেন সল্টলেকের পুজোগুলিতে। ‘এ-ই পার্ট ওয়ান’-এর ঘরোয়া দুর্গা কিংবা বি-জে ব্লকের আফ্রিকার উপজাতিদের শিল্প দেখে তারিফ করেছেন দর্শকেরা। সল্টলেকে নজর কেড়েছে রাজস্থানের চৌকিধানির শিল্পকর্মও। কাঁকুড়গাছির মিতালি, যুবকবৃন্দ, ১৪-র পল্লি থেকে লোকের ভিড় সোজা হাজির হয়েছে লালাবাগান নবাঙ্কুরে। সেখান থেকে বৃন্দাবন মাতৃমন্দিরে ঢুকেছে ভিড়।

সল্টলেকের পুজো দেখে ভিড়ের অনেকটাই চলে এসেছে রাসবিহারী কানেক্টরে। কসবা, রাজডাঙার পুজো দেখে ঢুকে পড়েছে গড়িয়াহাট-চত্বরে। একডালিয়া, সিংহি পার্কে এমনিতেই ভিড় হয়। নজর কাড়ছে বাবুবাগান, বান্ধব সম্মিলনী, ৯৫ পল্লির মতো পুজোগুলিও। হিন্দুস্থান পার্কেও সন্ধ্যায় বেশ ভিড়। তার পর ভিড় চলে গিয়েছে সমাজসেবীর দিকে। বৃষ্টি হোক বা যানজট, সব বাধা উড়িয়ে মাতন দেশপ্রিয় পার্কেও। সেখানকার ভিড়কে সোজা ত্রিধারা সম্মিলনীতে চালান করে দিয়েছে পুলিশ।

নবমীর রাত শেষে দশমীর ভোর। তখনও একডালিয়া, বাগবাজার, ম্যাডক্স স্কোয়ার ছাড়ছেন লোকজন। ভিড় বেরোচ্ছে সুরুচি সঙ্ঘ, অবসর, কাশী বোস লেন, তেলেঙ্গাবাগান থেকে। শিয়ালদহ স্টেশনে বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরার জন্য থিকথিকে ভিড়। বাসে বসে ঢুলছেন অনেকেই।

দশমীর ভোরে বাড়িমুখো এই ভিড়ই বলে দিচ্ছে, ঘূর্ণাসুরের হানা এবং যানজটকে হারিয়ে উৎসব কাপ উঠেছে সেই জনতার হাতেই!

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Weather
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy