Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশ হেফাজত শুনেই গম্ভীর রুইয়া

গাড়ি থেকে নেমে আদালতের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময়েও মুখে লেগে ছিল মিটিমিটি হাসি। কিন্তু আদালত থেকে বেরনোর পরে হাসি উধাও শিল্পপতি পবন রুইয়ার। জেসপ-কাণ্ডে আদালত রবিবার তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে।

ব্যারাকপুর আদালতে যাওয়ার পথে। রবিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

ব্যারাকপুর আদালতে যাওয়ার পথে। রবিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৬
Share: Save:

গাড়ি থেকে নেমে আদালতের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময়েও মুখে লেগে ছিল মিটিমিটি হাসি। কিন্তু আদালত থেকে বেরনোর পরে হাসি উধাও শিল্পপতি পবন রুইয়ার। জেসপ-কাণ্ডে আদালত রবিবার তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। রেলের দায়ের করা একটি প্রতারণা সংক্রান্ত অভিযোগে শনিবার পবনকে দিল্লির সুন্দরনগরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। রবিবার দুপুরে তাঁকে ব্যারাকপুর আদালতে হাজির করা হয়। সরকারি কৌঁসুলি এবং রুইয়ার আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পরে সিআইডি’র আর্জি মেনে ধৃতকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন ব্যারাকপুরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট শেরিং‌ ইয়ানচেন লেপচা। সিআইডি কর্তারা বলছেন, রুইয়ার কাছ থেকে জেসপ-কাণ্ডের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে।

ছুটির দিনে ব্যারাকপুর আদালতে লোক থাকে না বললেই চলে। এ দিন অবশ্য সকাল থেকেই পুলিশ-র‌্যাফে ছয়লাপ। তত্ত্বাবধানে হাজির খোদ সিআইডির স্পেশ্যাল-সুপার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য। ভিআইপি অভিযুক্তকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতেই এমন ঘেরাটোপের বন্দোবস্ত।

বেলা একটা নাগাদ সিআইডি-র গাড়ি এসে পৌঁছয় সোজা কোর্ট লক-আপের সামনে। মাঝের সিট থেকে দুই গোয়েন্দা অফিসারের ঘেরাটোপে গাড়ি থেকে নামেন শিল্পপতি পবন রুইয়া। গায়ে কালচে-নীল জ্যাকেট, ছাই রঙা টি-শার্ট এবং কালচে-নীল ট্রাউজার্স। এ দিন এজলাসে হাজির করানো হয়নি তাঁকে। কোর্ট লক-আপেই ছিলেন। গাড়ি থেকে কোর্ট লক-আপের পথে সাংবাদিকরা অনেক প্রশ্ন করলেও কোনও উত্তর দেননি তিনি। শুধু মিটিমিটি হেসেছেন।

রেলের অভিযোগ, ২০১২ সালে জেসপকে ৭টি রেক এবং আরও কিছু সরঞ্জাম তৈরির জন্য ৫০ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হয়েছিল। তার জন্য কাঁচামালও দেওয়া হয়। কিন্তু চুক্তি মেনে রেক তৈরি করেনি জেসপ। কাঁচামালেরও হিসেব দেয়নি। পুজোর আগে জেসপে আগ্নিকাণ্ডের পরে বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়। নভেম্বরের শেষে দমদম থানায় অভিযোগ দায়ের করে রেল। সেই মামলাতেই রুইয়াকে খোঁজা হচ্ছিল। সুন্দরনগরের বাড়িতে তিনি রয়েছেন, এই খবর পেয়ে দিল্লি পৌঁছে বিস্তর নাটকের পর শনিবার সিআইডি কর্তারা তাঁকে গ্রেফতার করেন।

এ দিন আদালতে রুইয়ার হয়ে সওয়াল করেন অয়ন ভট্টাচার্য এবং রঞ্জন দাস-সহ পাঁচ জন আইনজীবী। আদালতে তাঁরা জানান, ২০০৮ সালের মার্চ মাসে জেসপের ডিরেক্টর পদ ছেড়ে দিয়েছেন পবন রুইয়া। ২০১২ সালের চুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর দায় নেই। এ নিয়ে রেল ধৃতকে চিঠি দিলে তিনি তা জেসপ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেন। ধৃতের কৌঁসুলিদের অভিযোগ, রেলের সঙ্গে এই বিরোধ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টেও মামলা চলছে। সেখানেও রেলের কোনও প্রতিনিধি হাজিরা দেননি। শনিবার সিআইডি কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে যায়নি। নিজেদের বক্তব্যের সপক্ষে কিছু নথিপত্রও আদালতে জমা দেন
ওই আইনজীবীরা।

সরকারি কৌঁসুলি পল্লব চৌধুরী আদালতে পাল্টা জানান, পবন রুইয়া জেসপের ডিরেক্টর পদে নেই। কিন্তু তিনি জেসপের মালিক সংস্থা রুইয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান। ফলে, জেসপ সংক্রান্ত অভিযোগের দায় এড়াতে পারেন না। সরকারি কৌঁসুলির অভিযোগ, জেসপের কাছে বারবার হিসেব চেয়েও পায়নি রেল। সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে কারখানায় গিয়ে রেলকর্তারা দেখেন, সেখানে কোনও মালপত্র নেই! জেসপ কারখানায় আগুন লাগার ফলে ওই চুক্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র কী ভাবে পুড়ল, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। এ জন্য রুইয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং আগুন লাগিয়ে দুষ্কর্ম করার ধারাও যুক্ত করা হয়েছে।

এ দিন ব্যারাকপুর আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পবন রুইয়ার দাদা দীপক রুইয়া ও ছেলে রাঘব। বাবার গ্রেফতারি এবং পুলিশি হেফাজতের নির্দেশের পর দৃশ্যতই হতাশ রাঘব বললেন, ‘‘জানি না কী হবে!’’ আর দীপকের মন্তব্য, ‘‘আমাদের বক্তব্য আইনজীবীরা আদালতকে বলেছেন।’’ আইনজীবী রঞ্জন দাসের দাবি, রাজ্য প্রশাসন ও রেল ছক কষে রুইয়াকে ফাঁসিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Pawan Ruia Arrest Police Custody
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE