গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত অধিকাংশ রোগী উপসর্গ ধরা পড়ার পরে দেরি করে হাসপাতালে গিয়েছেন বলে দাবি করল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাজ্যের মোট করোনা সংক্রমিতের মধ্যে মাত্র ২.২% মারা গিয়েছেন। এঁদের মধ্যে আবার ৮৭% রোগীর আনুষঙ্গিক রোগবালাই (কোমর্বিডিটি) ছিল। প্রতিটি মৃত্যু বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, মৃতদের ৭০% দেরি করে হাসপাতালে যাওয়ায় বিপত্তি বেড়েছে। এঁদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরে অবহেলা ছিল। সেই কারণে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যায়নি।’’
মুখ্যসচিবের পরামর্শ, প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা মাপুন। যদি অক্সিজেন সম্পৃক্ততার হার ৯০-এর নীচে নেমে যায়, তা হলে অবিলম্বে হাসপাতালে আসুন। তবে জ্বর হলেই হাসপাতালের শয্যা দখল করার যে প্রবণতা কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সেটাও এড়িয়ে চলতে বলেছেন মুখ্যসচিব।
এই পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেরই প্রশ্ন, সামান্য উপসর্গ দেখা দিলে সরকারই তো বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকার কথা বলেছে। সেই অবস্থায় কখন অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবে, তা কি সবার পক্ষে সর্বক্ষণ নজরদারি করা সম্ভব? তা ছাড়া, অক্সিজেন সম্পৃক্ততা কমলে যে হাসপাতালে শয্যা পাওয়া যাবে, তারই বা নিশ্চয়তা কী? সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মূলত এই কারণেই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসা মাত্র সংক্রমিতের পরিবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিতে চাইছেন। ফলে কলকাতা ও তার লাগোয়া এলাকায় ‘ক্যাচ পেশেন্টের’ সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
মুখ্যসচিবের অবশ্য দাবি, ‘‘শয্যা, পরিকাঠামো, চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই। তবে সরকার আত্মতুষ্টও নয়। প্রতিদিনই সঙ্কট মোকাবিলায় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর মতে, কলকাতা ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের হাসপাতালে ভর্তি করে ভাল মানের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু অনেকেই নিজের পছন্দের হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছেন। সেটা এখন সম্ভব নয়।
মুখ্যসচিব জানান, টেলিমেডিসিন, সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং, অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা, সব নিরিখেই রাজ্যের করোনা চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে উদ্বেগের কিছু নেই। তবে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে, তাই সংক্রমিতের সংখ্যাও আগামী দিনে বাড়তে থাকবে।
করোনা পরিসংখ্যান
• নমুনা পরীক্ষা: ২১ জুলাই- ১৩০৬৪। ৬ অগস্ট- ২৫ হাজার।
• শয্যা সংখ্যা: ২১ জুলাই- ১১২৩৯। ৬ অগস্ট- ১১৫৬০।
• করোনা রোগীদের প্রতিক্ষণের নজরদারিতে কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস।
• টেলিমেডিসিন নম্বর ১৮০০-৩১৩-৪৪৪-২২২, ২৩৫৭-৬০০১।
• এ পর্যন্ত পরামর্শ পেয়েছেন ৪২,৫৮৪ জন
• এই নম্বরেই মিলবে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং।
• অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার নম্বর ৪০৯০২৯২৯।
• এ পর্যন্ত পরিষেবা পেয়েছেন ৫৪,৫৭১ জন
• ৬ অগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত ১১৪৪ জন রোগী সঙ্কটজনক।
• ১১৩৪ জনের কোনও উপসর্গ নেই, তবু তাঁরা হাসপাতাল ছাড়তে নারাজ।
মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, নমুনা পরীক্ষা করে রোগীদের চিহ্নিত করলেই তাঁদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে আলাদা করে দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে দ্রুত রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। শহরের বয়স্ক মানুষদের উপর নজরদারি চালানোর জন্য পুলিশ ও পুরসভাকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। কোভিড যোদ্ধাদের নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি কোভিড হেল্পিং হ্যান্ড, প্লাজমা ব্যাঙ্ক এবং কর্ডব্লাড ব্যাঙ্কের মাধ্যমেও করোনা চিকিৎসার সহায়ক কিছু উপায় বের করার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্য জুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউনের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা প্রশাসন স্থানীয় ভিত্তিতে লকডাউন করছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, সম্পূর্ণ লকডাউন করার ক্ষমতা একমাত্র রাজ্যের হাতেই রয়েছে। জেলাতে কোনও একটি এলাকায় অনেক কেস পাওয়া গেলে প্রশাসন স্থানীয় ভাবে কন্টেনমেন্ট জ়োনে লকডাউন করতে পারে। কিন্তু সেটাও টানা করা যাবে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ-শৃঙ্খলে ছেদ তৈরির জন্য বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই রাজ্য জুড়ে মাঝে মাঝে এক-দু’দিন লকডাউন করা হচ্ছে। জেলাগুলিকে টানা লকডাউনের রাস্তা থেকে সরে আসার নির্দেশ দেন তিনি।
কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এ বার রেড রোডে আড়ম্বরহীন ভাবে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। কয়েক জন কোভিড যোদ্ধার উপস্থিতিতে তিনি পতাকা তুলবেন।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy