Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal News

সাংসদ-বিধায়কদের বাড়িতে ডেকে দীর্ঘ বৈঠক পার্থর, ‘পাল্টা’ মতুয়া সমাবেশের তোড়জোড়

শনিবার কৃষ্ণগঞ্জের স্বর্ণখালি মাঠে সভা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির অত্যন্ত কট্টরবাদী মুখ হিসেবে পরিচিত গিরিরাজ সিংহ। মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিয়েই মূলত সভার আয়োজন হয়েছিল।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৩৯
Share: Save:

রক্তচাপ সম্ভবত বাড়িয়েছিল একটা অডিয়ো ক্লিপ। মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসানোর ছক যে বিজেপি জোরকদমে কষছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের শাসক দলের কাছে। এ বার মতুয়াদের নিয়ে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে বিজেপির সভা চাপ আরও বাড়িয়ে দিল। নদিয়া থেকে তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত তফসিলি জাতিভুক্ত সাংসদ-বিধায়কদের তড়িঘড়ি নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠালেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ‘পাল্টা’ সভার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল কৃষ্ণগঞ্জে।

শনিবার কৃষ্ণগঞ্জের স্বর্ণখালি মাঠে সভা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির অত্যন্ত কট্টরবাদী মুখ হিসেবে পরিচিত গিরিরাজ সিংহ। মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিয়েই মূলত সভার আয়োজন হয়েছিল। মতুয়া মহাসঙ্ঘের কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক শাখার ব্যানারে সভার ডাক দেওয়া হয়েছিল। ছিলেন মতুয়া গুরু হরিচাঁদের বংশধর শান্তনু ঠাকুর। ছিলেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এক নেতাও।

সভার পরে বিজেপি উচ্ছ্বসিত। কৃষ্ণগঞ্জের স্বর্ণখালি স্কুল ময়দানে আয়োজিত সভায় মতুয়াদের জমায়েত যে চেহারা নিয়েছিল, তা বিজেপি নেতাদের অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। অন্তত হাজার তিরিশেক লোক হয়েছিল, বলছে নদিয়া জেলার তৃণমূল সূত্রই।

বিজেপির এই মতুয়া সমাবেশের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পরে জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাই আর একেবারেই সময় নষ্ট করতে চাননি। রবিবারই তিনি কলকাতায় ডেকে পাঠান জেলার তফসিলি জাতিভুক্ত সাংসদ ও বিধায়কদের। রানাঘাটের সাংসদ তাপস মণ্ডল, রানাঘাট উত্তর-পূর্বের বিধায়ক সমীর পোদ্দার, হরিণঘাটার বিধায়ক নীলিমা নাগ, কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস, কল্যাণীর বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং তেহট্টের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে তিনি ডেকে পাঠান বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।

জেলা সভাপতি, সাংসদ ও বিধায়কদের নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় রবিবার ম্যারাথন বৈঠক করেছেন বলেও খবর। সকাল সকালই সাংসদ-বিধায়কদের হাজির হতে বলা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। বৈঠক চলেছে বেলা সাড়ে তিনটে পর্যন্ত। সেই বৈঠকেই স্থির হয়েছে যে, ৩ নভেম্বর কৃষ্ণগঞ্জে পাল্টা সভা হবে। তবে জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, ‘‘তৃণমূলের সভা নয়। মতুয়াদের সভা হবে। আমরা পাশে থেকে তাঁদের বক্তব্যকে সমর্থন করব।’’

আরও পড়ুন: পুলিশ সুপার ছেলেকে স্যালুট করে গর্বিত লখনউয়ের কনস্টেবল বাবা

মতুয়াদের ‘বড়মা’ বীণাপাণি দেবীর ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর এক সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। কিন্তু বীণাপাণি দেবীর বড়ছেলে প্রয়াত কপিলকৃষ্ণের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে যে দিন তৃণমূলের টিকিট পেয়েছিলেন, সে দিন থেকেই মঞ্জুল শিবিরের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। মঞ্জুলের ছেলে সুব্রত ঠাকুর বিজেপির টিকিটে জেঠিমার বিরুদ্ধে সে বার ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েন। আর চলতি বছরে মঞ্জুলের আর এক ছেলে শান্তনু ঠাকুর আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেন। পরে দুই বিজেপি নেতার মধ্যে কথোপকথনের একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসে। শান্তনু ঠাকুরকে কাজে লাগিয়ে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসানোর ছক নিয়ে আলোচনা শোনা যায় সেই অডিয়োয়। শনিবার সেই শান্তনু ঠাকুরকে পাশে নিয়েই কৃষ্ণগঞ্জে জনসভা করেন গিরিরাজ সিংহ।

কৃষ্ণগঞ্জের জনসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ।

কৃষ্ণগঞ্জের জনসভায় গিরিরাজ বলেন, ‘‘যত দিন সরকারে বিজেপি আছে, যত দিন নরেন্দ্র মোদী আছেন, তত দিন মতুয়াদের কেউ কিছু করতে পারবে না। কেউ তাঁদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে পারবে না।’’ মতুয়া সমাবেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী প্রকাশিত হওয়ার পরে মতুয়াদের আসরে নামিয়ে বিজেপি-কে এ রাজ্যে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। মতুয়া মহাসঙ্ঘের যে শিবির মমতাবালা ঠাকুরের অনুগামী, তাঁদের ব্যানারে বাংলার বিভিন্ন স্টেশনে রেল অবরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কৃষ্ণগঞ্জের সভার জমায়েত ইঙ্গিত দিয়েছে যে, জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকে ইস্যুতে রাজ্যের গোটা মতুয়া সমাজকে বিজেপি-বিরোধী করে তোলা যায়নি। বরং মতুয়াদের নাগরিকত্বের পক্ষে গিরিরাজ সিংহের সওয়াল ও আশ্বাস মতুয়াদের আরও স্বস্তি দিয়েছে।

এমনিতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে নদিয়ায় তৃণমূলের ফলাফল অপেক্ষাকৃত খারাপ। তার মধ্যে কৃষ্ণগঞ্জে বিজেপির মতুয়া সমাবেশ মোটের উপর অসফল নয়। এর পরে জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষকের পক্ষে আর স্বস্তিতে থাকা সম্ভব ছিল না। তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে ‘পাল্টা’ সমাবেশের তারিখ নির্ধারণ করা সেই অস্বস্তিরই ইঙ্গিত। বলছে বিজেপি।

আরও পড়ুন: শুটআউট এবার টিটাগড়ে, ভরদুপুরে কালীপুজোর প্যান্ডেলের সামনে তৃণমূল নেতাকে গুলি

নদিয়া জেলা তৃণমূল অবশ্য ‘অস্বস্তি’র তত্ত্ব মানতে চাইছে না। জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বললেন, ‘‘বিজেপি নেতারা কৃষ্ণগঞ্জে এসে অনেকগুলো মিথ্যা বলে গিয়েছেন। সেগুলোর জবাব তো দিতেই হবে। সেই কারণেই সভা হচ্ছে।’’ মতুয়াদের নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে গিরিরাজ সিংহ যা বলে গিয়েছেন, তা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর বলে গৌরীশঙ্কর দত্তের দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘৩ নভেম্বর যে সভা হবে, তাতে মতুয়াদের মধ্যে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি দূর করা হবে। তবে শনিবার যে সভা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি লোক তো ৩ নভেম্বরের সভায় হবে। তাই ওই সভা যে মাঠে হয়েছিল, সেখানে এই সভাটা হবে না, কারণ লোক ধরবে না।’’ মাজদিয়ায় ‘অনেক বড় একটা মাঠে’ হবে ‘পাল্টা সভা’, জানিয়েছেন গৌরীশঙ্কর।

অন্য দিকে, আগামী ১৫ নভেম্বর বড়মা বীণাপানি দেবীর শততম জন্মদিন। সেই উপলক্ষে ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজনও হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের কথা মাথা রেখে সোমবার ঠাকুরবাড়িতে যান রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, পুলিশ সুপার সি সুধাকর এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা ঠাকুরবাড়ির নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।

(দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের খবর পেয়ে জান আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE