রাজ্যের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিকে বাগে আনার ব্যবস্থা চলছে কিছু দিন ধরে। এ বার বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির কর্মপদ্ধতি নিয়ে সরব হলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কেরানির চাকরির জন্য আবেদন করছেন পড়ুয়ারা। এটা ঠিক হচ্ছে না।’’
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির সংগঠন ‘আপাই’-এর অনুষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগ তোলেন, অধিকাংশ বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে চাকরি পাওয়া যায় না। এর জন্য দু’দিক থেকে কলেজগুলির সমালোচনা করেন। তাঁর বক্তব্য, এক দিকে ওই সব কলেজে পরিকাঠামো অপ্রতুল। অথচ নিছক বাহ্যিক ঠাটবাটের সীমাপরিসীমা নেই।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘শুধু একটা বাড়ি তুলে দিলেই কিন্তু শিক্ষা শেষ হয়ে যায় না। দেখতে হবে, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো উৎকর্ষ আছে কি না। তাঁরা চাকরি পাচ্ছেন কি না।’’ তাঁর মতে, চাই পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো, চাই যথাযথ পাঠ্যক্রম। আর দরকার পর্যাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী।
প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না-গড়ে শুধু দেখনদারি ঠাটবাটে যে কাজের কাজ হবে না, বারবার সেটা মনে করিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের কাঁধে ল্যাপটপ ঝুলিয়ে দিলেই কিন্তু শিক্ষা এগিয়ে গেল না! অনেকে এতে আকৃষ্ট হয়। ভাবে, কেমন টাই-জ্যাকেট পরলাম! কেমন ল্যাপটপ ঝোলালাম!! অনেক কলেজ সিঙ্গাপুরেও পাঠাচ্ছে। ও-সবে হয় না। পড়াশোনার মান বাড়াতে হবে।’’
অনেক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র নিয়ম মানা হয় না এবং শিক্ষকদের বেতনে সমতা রাখা হয় না বলেও অভিযোগ তোলেন পার্থবাবু। তিনি জানান, তাঁদের কাছে এই বিষয়ে বিশেষ করে দুর্গাপুর এবং আসানসোল অঞ্চলের কলেজগুলি থেকে অভিযোগ আসছে। মন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এই সব কলেজ চালাতে হলে পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো থাকতে হবে। শিক্ষকদের তালিকা জানাতে হবে। শিক্ষকদের বেতনে কোনও রকম বৈষম্য থাকলে চলবে না। প্রতিটি কলেজে সক্রিয় প্লেসমেন্ট অফিসার রাখার পরামর্শও দেন শিক্ষামন্ত্রী। জানিয়ে দেন, এই সব কলেজের মানোন্নয়নের বিষয়টি দেখতে হবে আপাই-এর কর্তাদেরই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈকত মৈত্রকেও এই বিষয়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, মানের বিষয়টি দেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আছে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজসমূহের পরিদর্শকের।
বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পরিকাঠামোর অভাব এবং সেখান থেকে পাশ করে চাকরি না-পাওয়ার অভিযোগ উঠছে বেশ কয়েক বছর ধরে। কাজ না-জোটায় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এই সব কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন পড়ুয়ারা। ফলে আসন ফাঁকা পড়ে থাকছে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, সূচনা পর্বে এই সব কলেজ যতটা আগ্রহ দেখায়, চালু হয়ে গেলে সেই আগ্রহ থাকে না। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিনের অনুষ্ঠানে জানান, নয়া মার্কিন নীতির জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও এ রাজ্যে এখনও তার ছাপ পড়েনি।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে ভর্তির জন্য এ দিন ই-কাউন্সেলিংয়ের তালিম দিতে শুরু করল আপাই। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ওই সংগঠনের আর্জি, ই-কাউন্সেলিংয়ের তৃতীয় রাউন্ডটা ‘ম্যানুয়ালি’ অর্থাৎ মুখোমুখি বসিয়ে সেরে ফেলার ব্যবস্থা হোক। ‘‘এর ফলে কাউন্সেলিং আরও দ্রুত হবে,’’ আপাই-এর তরফে বলেন সত্যম রায়চৌধুরী। মন্ত্রী জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষে এটা সম্ভব হবে না। পরের বছর বিষয়টি দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy