অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
মুখে একগাল হাসি। রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তখন সবে ঢুকেছে তাঁর গাড়ি। সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ির সামনে ভিড় জমালেন সাংবাদিকেরা। সেই সময়ই গাড়ি থেকে নামার ঠিক মুখে একেবারে ফুরফুরে মেজাজে ধরা দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের আগেই নিজেই কবিতার দু’লাইন শোনালেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। যে দুই লাইন তাঁর গ্রেফতারি এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে বেশ অর্থবহ। পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসাও শোনা গেল তাঁর গলায়।
সোমবার আলিপুরে সিবিআইয়ে বিশেষ আদালত চত্বরে গাড়িতে বসেই পার্থ শোনালেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতার দুই লাইন। একগাল হেসে বললেন, ‘‘আমি শুধু একটা কবিতার লাইন বলব।’’ এর পরই বললেন, ‘‘মসী লেপি দিল তবু ছবি ঢাকিল না। অগ্নি দিল তবুও তো গলিল না সোনা।’’ আগামী কাল ২৫ বৈশাখ। বিশ্বকবির জন্মদিন। ঠিক তার আগের দিনই আদালতে হাজিরা দিতে এসে পার্থ-কণ্ঠে রবিঠাকুরের এই কবিতার লাইন আলাদা নজর কেড়েছে।
‘মসী’ শব্দের অর্থ কলঙ্ক বা কালি। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গত ২৩ জুলাই গ্রেফতার করা হয়েছিল পার্থকে। তার পর যত তদন্ত এগিয়েছে, ততই তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বর্তমানে পার্থের ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার। গ্রেফতারের পর মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন পার্থ। পাশাপাশি তৃণমূল থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সব কিছু হারিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছেন তিনি। অতীতে তাঁর গলায় আক্ষেপের সুরও শোনা গিয়েছে। তবে সোমবার একেবারে হাসিমুখে প্রকাশ্যে দেখা গেল পার্থকে। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইন শুনিয়ে জনমানসে বিশেষ বার্তা দিলেন তিনি। নিয়োগ দুর্নীতির ‘কলঙ্ক’ সরিয়ে তবে কি নিজেকে সোনার সঙ্গে তুলনা করলেন পার্থ?
রবীন্দ্রকবিতা শোনানোর পর তৃণমূলের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন পার্থ। তিনি বলেন, ‘‘১০০ শতাংশ সফল এই কর্মসূচি।’’ শুধু তা-ই নয়, তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘নবজোয়ারে জনজোয়ার এসেছে।’’ পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। যার মূল মাথা অভিষেক। গত সপ্তাহে মালদহের ইংরেজবাজারে গিয়ে এই কর্মসূচির প্রশংসা শোনা গিয়েছিল তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। বলেছিলেন, ‘‘মানুষ এই কর্মসূচিকে সমর্থন করেছে।’’ এ বার পার্থের গলাতেও সেই একই সুর শোনা গেল।
এর আগে, এই কর্মসূচি শুরুর আগে আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে অভিষেককে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন একদা তৃণমূলের মহাসচিব। বলেছিলেন, ‘‘আমি চাই অভিষেক সফল হোক।’’ অথচ, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর গ্রেফতারির পর পার্থকে ‘শাস্তি’ দিয়েছিল তাঁর দল। পার্থকে দলের সব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক। তার পর অভিষেক বেশ কিছু সভায় দুর্নীতি সম্পর্কে দলের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রসঙ্গে ‘দোষী প্রমাণিত হলে’ শাস্তি দেওয়ার কথা বললেও অভিষেক সম্পর্কে পার্থ প্রকাশ্যে বিশেষ মন্তব্য করেননি। বরং প্রশ্ন করা হলে চুপ করে থেকেছেন বা এড়িয়ে গিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। আদালতের ভিতরে ঘনিষ্ঠ মহলে এক বার তিনি অভিষেককে নিয়ে মন্তব্য করেছেন বলে শোনা গেলেও প্রকাশ্যে অভিষেককে নিয়ে একটি কথাও বলেননি। বরং অভিষেককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন তিনি। সোমবার আবার অভিষেকের প্রশংসা করলেন পার্থ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy