Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫
RG Kar Case Verdict

লড়াইটা জোরদার হল, বলছেন বাবা

তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার বাবা বলেন, “আইনি লড়াই আরও জোরদার ভাবে শুরু হল। পরবর্তী ধাপগুলিতে পৌঁছনোর জন্য বিচারক সহযোগিতা করবেন বলেই আশা রাখছি।”

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৭
Share: Save:

তাঁদের মেয়ের খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে অসংখ্য প্রশ্ন ও ধোঁয়াশা থাকলেও, তা কাটাতে পারেনি সিবিআই। আদালতেও সেগুলি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই কারণেই আর জি কর মামলাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা বলে বিচারক মনে করেননি— সোমবার এমনই অভিযোগ করলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। মা বললেন, “সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত অবস্থায় আমাদের মেয়ের এমন পরিণতি। যা বিশ্বে বিরলতম ঘটনা বলেই মনে করি। কিন্তু সিবিআই সঠিক ভাবে সব কিছু প্রমাণ করতে পারল না। তাই বিচারক এমন মন্তব্য করলেন।”

তবে বিচারক তাঁদের কষ্ট ও যন্ত্রণাকে সঠিক ভাবে মর্যাদা দিয়েছেন বলে এ দিন জানান নির্যাতিতার পরিজনেরা। তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার বাবা বলেন, “আইনি লড়াই আরও জোরদার ভাবে শুরু হল। পরবর্তী ধাপগুলিতে পৌঁছনোর জন্য বিচারক সহযোগিতা করবেন বলেই আশা রাখছি।”

এ দিন আর জি কর মামলায় সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। এই সিভিক ভলান্টিয়ারকে ফাঁসি বা আমৃত্যু কারাবাস, যা-ই সাজা দেওয়া হোক না কেন, তাতে তাঁদের সন্তুষ্ট কিংবা অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনও ব্যাপার নেই বলে আগেই দাবি করেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এ দিন বাড়ি থেকে আদালতের জন্য বেরোনোর সময়ে তাঁরা বলেছিলেন, “একমাত্র মেয়ে যে দিন আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে, সে দিনই সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের বেঁচে থাকতে হবে লড়াইয়ের পথে থেকে। কারণ সঞ্জয় একা নয়, আরও যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের সকলকে সামনে এনে কঠোরতম শাস্তির দাবিতে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”

এ দিন বিকেলে আদালত থেকে বেরোনোর সময়ে নির্যাতিতার মা বলেন, “স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের দুর্নীতি যত দিন না বন্ধ হচ্ছে, তত দিন আমাদের লড়াই থামবে না। আমার মেয়ে ওই দুর্নীতির প্রতিবাদ করে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল বলেই মনে করছি। কিন্তু সেটা তদন্তকারীরা বুঝছেন না।” তাঁর দাবি, তাঁদের মেয়ের ঘটনা দেখিয়ে দিল, শুধু মেধা নয়, বাবা-মাকে প্রভাবশালীও হতে হয়। নির্যাতিতার পরিজনদের দাবি, “সঞ্জয় একা এই কাজ করেনি, সেটা সকলেই জানেন। তদন্তে একাধিক প্রশ্ন থাকলেও তার উত্তর মিলছে না। যা থেকেই স্পষ্ট, প্রকৃত সত্যকে আড়ালের চেষ্টা চলছে।”

আর জি করের ঘটনার নেপথ্যের কারণ কী, কারা ওই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে জড়িত— সে সব সামনে এনে সব অভিযুক্তের কঠিন শাস্তির দাবিতে এ দিন শিয়ালদহ আদালতের বাইরে উপস্থিত হয়েছিলেন বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন, নার্সেস ইউনিটি ও অভয়া মঞ্চের সদস্যেরা। জুনিয়র ডক্টরস’ ফ্রন্টের সদস্য আশফাকউল্লা নাইয়া বলেন, “এই রকম শাস্তি সমাজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে পারে না। ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনও উদাহরণ তৈরি হল না বলেই আমার ব্যক্তিগত মত। প্রান্তিক স্তরের নির্যাতিতারা কোথায় যাবেন? শুধু সঞ্জয় নয়, ঘটনায় যুক্ত অন্যদেরও সামনে আনার দাবি জানাচ্ছি আমরা।”

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস’-এর সদস্য পুণ্যব্রত গুণ বলেন, “প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে প্রথম থেকেই পুলিশ প্রশাসনের যে প্রচেষ্টা, তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ও বিচার ব্যবস্থাও হয়তো যুক্ত হয়ে গিয়েছে।” আবার, ‘মেডিক্যাল সর্ভিস সেন্টার’-এর রাজ্য সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্রের অভিযোগ, “ইতিমধ্যে সিবিআই আর জি করের ঘটনাকে বিরলতম বলে সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট পেশ করেছে এবং বিচারপতিরাও তা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। আজ সেটা বিরলতম নয় বলে অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা হল না!”

সুটিয়ার বাসিন্দা, নিহত বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা রায় বিশ্বাস এ দিন আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর কথায়, “এক জনকে সাজা দিয়ে সব শেষ করার প্রচেষ্টার নেপথ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যের আঁতাঁত সকলেই বুঝতে পারছে।” চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরী উল্লেখ করেন, প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না গেলে তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থার উপরে মানুষের ভরসা কমতে পারে। নির্যাতিতার বাবাও বলেন, “ন্যায়বিচারের লড়াইয়ের শেষ নয়। বরং দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলাম।”

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Medical College and Hospital Incident RG Kar Case Verdict Sealdah Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy