Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পরেশ বাহিনীর হাতে হেনস্থা সাধনের

খাস কলকাতায় আক্রান্ত মন্ত্রী! তা-ও আবার শাসক দলের লোকেদের হাতেই। ঘটনাস্থল: কাঁকুড়গাছির শিবকৃষ্ণ দাঁ লেন। সময়: সোমবার বেলা বারোটা। আক্রান্ত মন্ত্রী: সাধন পাণ্ডে। কাঠগড়ায়: বেলেঘাটার তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল।

জখম তৃণমূল নেতা অর্ণব দাস। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

জখম তৃণমূল নেতা অর্ণব দাস। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৯:৩৫
Share: Save:

খাস কলকাতায় আক্রান্ত মন্ত্রী! তা-ও আবার শাসক দলের লোকেদের হাতেই।

ঘটনাস্থল: কাঁকুড়গাছির শিবকৃষ্ণ দাঁ লেন। সময়: সোমবার বেলা বারোটা। আক্রান্ত মন্ত্রী: সাধন পাণ্ডে। কাঠগড়ায়: বেলেঘাটার তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল।

পূর্ব কলকাতায় শাসক দলে গোষ্ঠী কোন্দলের রোগ বহুদিনের। বিশেষ করে বেলেঘাটা-মানিকতলায়। এ বার সেই জলই গড়াল অনেক দূর। নিজের নির্বাচন কেন্দ্র মানিকতলায় সোমবার তাঁর দলের কিছু সমর্থকের হাতে হেনস্তা হলেন ক্রেতা-সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। মন্ত্রী গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় আচমকা পথ আটকে চড়াও হয় তারা। সাধনবাবু ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি গাড়ির চালককে মারধর করা হয়। মন্ত্রীর নিজেরই অভিযোগ, হামলাকারীরা পরেশ পালের অনুগামী। তাদের নেতৃত্ব দিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কাঁকুড়গাছি সংলগ্ন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুনন্দা গুহ।

ইএম বাইপাস সংলগ্ন ক্যানাল সার্কুলার রোডে নিকাশি ব্যবস্থা অনেক দিন বেহাল হয়ে পড়েছিল। বিষয়টি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলেন সাধনবাবু। ভোটের আগেই সংস্কারের কাজ অনুমোদন করেছিলেন মেয়র। তবে নির্বাচনী বিধি কার্যকর ছিল বলে কাজ শুরু করা যায়নি। সম্প্রতি কাজ শুরু করা নিয়ে পুর কতৃর্পক্ষের সঙ্গে সাধনবাবুর কথা হয়। ঠিক হয় এ দিন পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা সেখানে যাবেন। মন্ত্রীও থাকবেন। সোমবার সরকারি গাড়িতে ওই এলাকায় যাচ্ছিলেন সাধনবাবু।

তাঁর চালক শেখ মেহেতুল্লার কথায়, ‘‘যোগোদ্যান মন্দিরের কাছে অপরিসর রাস্তায় গাড়ি ধীরে চলছিল। হঠাৎই কয়েক জন লাফিয়ে পড়ে জানলায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চুলের মুঠি ধরে টানতে থাকে। মন্ত্রী তখন আমার পাশেই বসে। আত্মরক্ষার জন্য ঝটকা মারি।’’ তত ক্ষণে গাড়ির ভিতরে থাকা মন্ত্রীর দেহরক্ষীরা নেমে পড়েন। মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেয়ে শ্রেয়া পাণ্ডে এবং অনুগামী অর্ণব দাস। সাধনবাবুর গাড়ির উপরে হামলা হচ্ছে দেখে অর্ণব এগিয়ে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। শ্রেয়া মানিকতলা থানায় ফোন করেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ঠিকই। কিন্তু বাবা গাড়ি থেকে নেমে ক্যানাল সার্কুলার রোডের দিকে এগোলে সুনন্দার নেতৃত্বে এক দল লোক পথ আটকায়। সুনন্দা বলতে থাকেন তিনি কাউন্সিলর, তিনিই এলাকার কাজ করবেন।’’

রীতিমতো অসন্তুষ্ট সাধনবাবুর বক্তব্য, তিনি স্থানীয় বিধায়ক। তাঁকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হবে কোন যুক্তিতে? বিশেষ করে যখন মেয়রের সঙ্গে কথা বলেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। সাধনবাবুর অভিযোগের জবাব অবশ্য পরেশ পাল দেননি। তিনি ফোন তোলেননি। টেক্সট মেসেজেরও উত্তর দেননি। তবে পরেশ-অনুগামী বলে পরিচিত সুনন্দা পাল্টা অভিযোগ করেন সাধনবাবুর বিরুদ্ধে। বলেন, ‘‘মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা শ’খানেক সশস্ত্র সমর্থক আমাদের মারধর করেছে।’’

সেই দাবি উড়িয়ে সাধনবাবুর বক্তব্য, আগে থেকেই হামলার আশঙ্কা করেছিলেন তিনি। সে জন্য রবিবার রাতে ফুলবাগান থানার পুলিশকে আগাম খবরও দিয়েছিলেন। পুলিশ কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, তা ভেবেই অবাক সাধনবাবু। তবে ফুলবাগান থানার তরফে বলা হয়, মন্ত্রীর ফোন পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু হামলার ঘটনাটি রাস্তায় ঘটে। পরে খবর পেয়ে সেখানেও পুলিশ পাঠানো হয়।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে জটিল আকার নিয়েছে সন্দেহ নেই। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, গত শনিবার পরেশ পাল মহা-সংবর্ধনা দিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। তার পরে পরেশ-অনুগামীদের ধারণা হয়েছে, শোভনবাবু তাঁদের নেতারই পক্ষ নেবেন। শোভনবাবু তৃণমূলের কলকাতা জেলা সভাপতিও বটে। এ দিন প্রশ্ন করা হলে মেয়র শুধু বলেন, ‘‘আমি কিছু জানি না।’’ কিন্তু তৃণমূল সূত্রের মতে, মেয়র বিরক্ত। আসলে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কার থাকবে তা নিয়েই সাধন-পরেশ অনুগামীদের মধ্যে রেষারেষি চলছে। সাধনবাবুর প্রাধান্য বাড়ছে দেখে আশঙ্কায় সুনন্দারা। দলীয় নেতৃত্বের মতে, সেই কোন্দল যে স্তরে পৌঁছেছে, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ অনিবার্য। ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই কড়া হাতে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দমনের বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলনেত্রী। কাঁকুড়গাছির ঘটনার পরে তিনি কী ব্যবস্থা নেন, সেটাই দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC sadhan pandey Paresh Pal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE