(বাঁ দিকে) মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে ‘ছাত্র সমাজ’। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত এক বারের জন্যও বেরোননি ওঁরা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝেমধ্যেই টিভির পর্দায় চোখে রেখেছেন প্রৌঢ় দম্পতি। দেখেছেন নবান্ন অভিযানের খণ্ড খণ্ড চিত্র। যত দেখেছেন ততই ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষিতা এবং নিহত চিকিৎসকের বাবা-মায়ের মন। সন্তানহারা দম্পতি চান, বিচারের দাবিতে এই আন্দোলন যেন চলতেই থাকে। তাঁদের আশঙ্কা, প্রতিবাদ থেমে গেলে বিচারপ্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে যেতে পারে।
মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল ‘ছাত্র সমাজ’। কলকাতা এবং হাওড়ার প্রায় সব রাস্তাতেই নেমে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সেই সময় নিজেদের বাড়িতেই ছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। কিন্তু, ঘটনার ১৭ দিন পরেও বাবা-মা জানতে পারেননি তাঁদের মেয়ের ধর্ষক এবং খুনি ঠিক কে বা কারা! তদন্তের গতিপ্রক্রিয়া সম্পর্কেও সন্দিহান তাঁরা। তার মধ্যেই নবান্ন অভিযানের খোঁজখবর রেখেছেন মঙ্গলবার। আনন্দবাজার অনলাইনকে নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা ফোনে বলেন, ‘‘গতকাল (সোমবার) স্টুডেন্টরা (পড়ুয়ারা) আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। যা বলার ওঁদের বলে দিয়েছি।’’
তাঁদের মেয়েকে নিয়ে যাতে রাজনীতি না হয়, তা নিয়েও চিন্তায় প্রৌঢ় ওই দম্পতি। ছাত্র এবং নাগরিক আন্দোলনের মাধ্যমে মেয়ের ধর্ষণ এবং খুনের বিচার আদায় করা যাবে বলেও আশাবাদী তাঁরা। নির্যাতিতার মা আগেই জানিয়েছিলেন, মেয়েকে হারানোর পর যে ভাবে জুনিয়র চিকিৎসক থেকে ছাত্র-যুবরা পথে নেমেছেন, তাতে আস্থাশীল তাঁরা। রাজ্য প্রশাসনের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নির্যাতিতার বাবা-মা আশাবাদী হলেও নিশ্চিন্ত নন।
নির্যাতিতার বাড়ির কাছেই একটি প্রতিবাদ মঞ্চ তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে কয়েক জন প্রতিনিধি মঙ্গলবার সকালে ওই দম্পতির কাছে এসেছিলেন। তাঁদের প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তবে তাঁরা ওই প্রতিবাদ মঞ্চে যাবেন না বলে জানিয়ে দেন। পারিবারিক সূত্রে খবর, নির্যাতিতার বাবা-মায়ের চাওয়া এবং আশা, এই আন্দোলন যেন না থামে। মেয়ের ধর্ষণ এবং খুনের বিচার যত দিন না হচ্ছে, তত দিন এই আন্দোলন চলতে থাকুক, এটাই তাঁদের চাওয়া। নির্যাতিতার বাবার কথায়, ‘‘ভয় পাচ্ছি, আন্দোলন থেমে গেলে বিচার পাবে না আমার মেয়ে।’’
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষিতা এবং নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা চাইছেন, যত দিন না বিচার হয় তত দিন আন্দোলন আরও তীব্র হোক। কয়েক দিন আগে নির্যাতিতার মা বলেছিলেন, ‘‘সিবিআইয়ের উপর আস্থা রেখেই বলছি, কিনারা করুক। ওরা (রাজ্য প্রশাসন) তো কিনারা করতে পারেনি। মূলত ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা থাকতে চাই। আমরা এক মেয়ে হারিয়েছি। কিন্তু আন্দোলনকারী সকলেই আজ আমাদের সন্তানের জন্য বিচার চাইছে। ওদের আমরা ছেলেমেয়ে মনে করছি।’’
অন্য দিকে, নবান্ন অভিযান ঘিরে দফায় দফায় জায়গায় জায়গায় পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। হাওড়া ফোরশোর রোড থেকে হাওড়া ময়দান, শরৎ চ্যাটার্জি রোড থেকে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল (পিটিএস) সর্বত্রই বিক্ষোভকারীদের হটাতে জলকামান চলেছে, ফাটানো হয়েছে কাঁদানে গ্যাসের শেল।
সেই আবহেই মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ২৮ জুলাই, বুধবার ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করেছে। ছাত্র সমাজ নিজেদের ক্ষমতায় এই আন্দোলন করেছে।’’
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, বুধবার কোনও বাংলা বন্ধ হবে না। তিনি বাংলার মানুষকে বন্ধে সাড়া না দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। নবান্ন অভিযান নিয়ে ওই তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘কিছু দুষ্কৃতী হামলাকারী পুলিশকে ইট-পাথর মেরেছে। ওরা ভেবেছিল কোনও বাধা ছাড়া হেঁটে হেঁটে নবান্নে ঢুকে যাবে! এরা ছাত্র? অরাজকতার চেষ্টা করেছে বিজেপির গুন্ডা এবং সিপিএমের কিছু ক্যাডার।’’
বিজেপির বন্ধ ডাকা নিয়ে কুণাল আরও বলেন, ‘‘মুখোশ খসে পড়েছে। বিচার নয়, চেয়ারের লক্ষ্যে এই সব আক্রমণ চলছে।’’ পাশাপাশি পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘‘ওরা গায়ে রক্ত মেখেও সংযমের পরিচয় দিয়েছে। গুলি চালায়নি পুলিশ। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে যেটুকু করার দরকার, সেটাই করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy