প্রতিবাদী মিছিলে নেই কেন? মুখ খুললেন অরিজিৎ সিংহ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ধারাবাহিক ভাবে পথে নামছেন সর্ব স্তরের মানুষ। বহু মানুষের মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিল, এই ঘটনায় অরিজিৎ সিংহ চুপ কেন? অনুরাগীরা তাঁকে ‘ঘরের ছেলে’ মনে করেন। তাই প্রতিবাদমুখর পরিস্থিতিতে তাঁর অনুপস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছিল শ্রোতাদের। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির অভিনেতা, সঙ্গীতশিল্পীরাও পথে নেমেছিলেন। ছিলেন না তিনি। অবশেষে এই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন গায়ক। সোমবার এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) থেকে লাইভে এসেছিলেন অরিজিৎ সিংহ। সেখানে সরাসরি তিনি বললেন, “পথে নেমে গেলেই তো হল না। বিশৃঙ্খলা হলে মুশকিল। সবাই তো নামছে পথে। আমরা রয়েছি পাশে। হিতে বিপরীত হলে হবে না। কেউ যদি ভাবে সুযোগ নেবে, নিতে পারে। যারা রাগাচ্ছে, তোমরা তাদের কথায় রেগে যেয়ো না। তারাও কষ্টের জায়গা থেকে এই কথাগুলো বলছে।”
তিনি জানালেন, অনেক চিন্তাভাবনা করে পদক্ষেপ করতে হয় শিল্পীকে। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে হলে, তাঁকে এত ভাবতে হত না। তাঁর কথায়, “তোমাদের মতো স্বাধীনতা নেই আমার। তোমরা প্রতি দিন রাস্তায় বেরোতে পারো। আমি তা পারি না। তোমরা যে ভাবে বিচরণ করো, আমাকে তা করতে দেওয়া হয় না। আমি পথে নামলে নিজস্বী তোলার ভিড় হবে। অনেকে ভাবছে আমি বেরোলে আমার সঙ্গে ওঁরাও হাঁটবে। অত ভিড় বাড়িয়ে কী হবে?” তবে এ সবের মধ্যেও ইতিবাচক দিক খুঁজে নিয়েছেন তিনি। “আমি পথে নামব কি না, তা নিয়ে রাজনীতি করার কোনও মানে হয় না। খুব তুচ্ছ ব্যাপার। যাঁরা কথা বলছেন বলুন। এতেও জনমত তৈরি হবে। বিতর্ক হলেও ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা তো হবে”, বললেন সঙ্গীতশিল্পী।
সমাজ হয়তো বদলাচ্ছে, কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে এখনও, মত গায়কের। ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাঁরও। তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই সে সব প্রশ্ন প্রকাশ্য এসেছে। কিন্তু সেই সব প্রশ্নের উত্তর নেই। অন্য ভাবে উত্তর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই উত্তর সন্তোষজনক নয়। “আমরা ব্যর্থ, না হলে কি এ ভাবে কারও মৃত্যু হয়?” প্রশ্ন তুললেন গায়ক।
একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, নাগরিক হিসাবে যা কর্তব্য তা পালন করতে হবে। আইন হাতে নেওয়ার অধিকার নেই নাগরিকদের। তবে যাঁরা আইন সংক্রান্ত দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা যদি ঠিকঠাক কাজ না করেন তা হলে সমস্যা। “তাঁরা ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করছেন না বলেই আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছি না”, বললেন অরিজিৎ। তাঁর মতে, এই ঘটনার প্রতিবাদের অর্থ কোনও রাজনৈতিক দল বা সরকারের বিরোধিতা করা নয়।
তিনি আরও যোগ করলেন, “‘যে যায় লঙ্কায়, সে-ই হয় রাবণ’ এই প্রবাদ শুনে এসেছি। আমরা যে আওয়াজ তোলা শুরু করেছি এটা তো সবে শুরু। বিশ্বাস ভেঙে গেলে প্রতিক্রিয়া জানায় মানুষ। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। অসহায় লাগছে। একজন নেতাজি, একজন স্বামী বিবেকানন্দকে দরকার, নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য।” তিনি জানালেন, গ্রামাঞ্চলে হামেশাই এই ধরনের ঘটনা শোনা যায়। তবে এত বড় করে প্রকাশ্যে আসে না। মানুষ উপেক্ষা করে যান সাধারণত। তবে এই ঘটনার প্রতিবাদ চোখ খুলে দিয়েছে সকলের। তাঁর দাবি, সবার বুদ্ধি আছে, সকলে সবটা দেখতে পাচ্ছে।
তাঁর আশা, ঘটনার সত্যতা প্রকাশ্যে আসবে। যদি না আসে, সময় কথা বলবে। মানুষ তো দেখছেন সব। “কেমন যেন মনে হচ্ছে অন্য ধরনের কথা বলা হবে। মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। যথেষ্ট ভাবাচ্ছে বিষয়টি। বিশদে দেখার সাহস হয়নি। খারাপ লাগছে, কষ্ট হচ্ছে”, বললেন তিনি। নাগরিকদের পিটিশন নিয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন শিল্পী। চিকিৎসক তো বটেই, প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা দরকার। তবে তাঁর এই লাইভ ভিডিয়োকে ভাইরাল না করার আর্জি জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষ বলে পরিচয় দিলেন নিজেকে। বললেন, “এই বিষয়টিকে ভাইরাল করে বিরাট কিছু করে দিয়ো না তোমরা। আমি মত প্রকাশ করি না সাধারণত। কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে বলতে বাধ্য হলাম কারণ আমি ভয় পেয়েছি, কেঁপে উঠেছি। ঘটনাটি নাড়িয়ে দিয়েছে আমাকে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy