Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Kunal Ghosh Parambrata Chatterjee

‘মুম্বই করে বলে আমাদেরও করতে হবে?’ টালিগঞ্জ নিয়ে কুণালের ‘আফসোসের’ জবাব দিলেন পরমব্রত

‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ডায়েরি’ মুক্তির দিন টালিগঞ্জের শিল্পীদের কটাক্ষ করেছিলেন কুণাল ঘোষ। কেন বাংলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছবি তৈরি হয় না, প্রশ্ন তুলেছিলেন। পরমব্রত তার জবাব দিলেন।

(বাঁ দিকে) তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। টলিউড অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। টলিউড অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৯
Share: Save:

সুসময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে হাত নাড়েন, কিন্তু দলের দুঃসময়ে কাউকে পাওয়া যায় না— টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের নিয়ে এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। উদাহরণ টেনেছিলেন মুম্বইয়ের। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বলিউডে একাধিক ছবি নির্মিত হলেও বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কেন তা হয় না, প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। কুণালের সেই বক্তব্যের জবাব এ বার দিলেন টালিগঞ্জের প্রথম সারির অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, মুম্বইয়ের কিছু অভিনেতা যে কাজ করেন, বাংলাতেও তা করতে হবে কেন?

কুণালের মন্তব্য প্রসঙ্গে পরমব্রত বলেছেন, ‘‘মুম্বইয়ের কিছু মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কেন্দ্রের শাসকদলের নির্লজ্জ প্রোপাগান্ডা করেন তাঁদের কাজের মধ্যে দিয়ে, যার ফলে তাঁদের শিল্পীর সম্মানটাই নষ্ট হয়। আপনি কি চাইছেন যে, আপনাদের দলের লোকেরাও তা-ই করুক? সিনেমার জগৎ এমনিতেই দলীয় রাজনীতির রঙে একেবারে রই রই করে রঙিন, তাতে হচ্ছে না? এ বার এটাও করতে হবে?’’

তবে কুণালের বক্তব্যকে একেবারে উড়িয়ে দেননি পরম। তিনি স্বীকার করেছেন, বাংলাকে নিয়ে উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যে ভুয়ো খবর এবং ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হয় এবং তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই। বলেছেন, ‘‘ঠিক কথা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হয় উত্তর ভারতে, আমি নিজে তা চাক্ষুষ করেছি। পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক বৈচিত্র এবং কেন্দ্রের সঙ্গে দীর্ঘ রাজনৈতিক বিরোধিতার ইতিহাস হয়তো এর জন্য দায়ী! কুপ্রচার করার জন্য কিছু ছবিও তৈরি হয়, কিন্তু সেগুলিকে আটকানোর চেষ্টা করে আপনারাই এই অজানা, গুরুত্বহীন ছবিগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন!’’

উল্লেখ্য, কুণালের বার্তা ছিল ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নামক ছবিটি নিয়ে। সনোজকুমার মিশ্র পরিচালিত ছবিটি বাংলায় মুক্তি পায়নি। ওই ছবিতে তৃণমূল সরকারের আমলে একাধিক বিতর্কিত পর্ব তুলে ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ। কুণাল প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই রাজ্যে তৃণমূলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মমতার পাশে দাঁড়িয়ে টালিগঞ্জের যে তারকারা ছবি তোলেন, তাঁরা এই ধরনের পাল্টা ছবি তৈরির কথা কেন ভাবেন না? কেন বাংলায় মমতার বায়োপিক তৈরি করতে এগিয়ে আসেন না কোনও তারকা? এই প্রশ্নের জবাবে পরমের বক্তব্য, টালিগঞ্জের যে কলাকুশলীদের তৃণমূল নেতা বানিয়েছে, দলের তরফেই তাঁদের রাজনৈতিক মনস্কতার দায়িত্বও নেওয়া উচিত। পরমের কথায়, ‘‘যদি মনে করেন আপনার দলের নেতা বা পদাধিকারীরা কেন ভুয়ো নিউজ়ের বুদবুদ ফাটাচ্ছেন না, তা হলে যে ভাবে তাঁদের ধরে দলে নিয়োগ করে নেতা বা নেত্রী বানিয়েছেন, একই ভাবে তাঁদের রাজনৈতিক মনস্কতা বা পলিটিকাল ম্যাচিওরিটির দায়িত্ব নিন দলের পক্ষ থেকে!’’ পরম এ-ও জানিয়েছেন, তৃণমূলের উচিত এমন কোনও সংস্থাকে নিয়োগ করা, যারা তাদের দলের বিরুদ্ধে প্রচার করা মিথ্যাগুলির পর্দাফাঁস করে দেবে। তা না করে উল্টে বিপরীত প্রোপাগান্ডার নিদান দিচ্ছেন কেন কুণাল, প্রশ্ন পরমের।

আরজি করের ঘটনার প্রসঙ্গও টেনেছেন পরম। তাঁর মতে, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। যা ঘটেছে, মানুষ তার জবাব চাইছে। এই পরিস্থিতিতে দলের মুখপাত্রদের আরও সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘যে গাফিলতির জন্য ৯ অগস্টের ঘটনা ঘটতে পেরেছে , মানুষ তার জবাবদিহি চাইছে। দায় স্বীকার এবং যদি ঘুণ ধরে থাকে পরিকাঠামোয়, তা হলে তা চিহ্নিত করে সাফ করা হোক— অধিকাংশ লোকের দাবি এটাই! সময়টা স্পর্শকাতর, মুখপাত্র হিসাবে কী বলছেন, কী লিখছেন, একটু ভেবেচিন্তে করলে হয় না?’’

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক সমাজের ভূমিকাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পরমব্রত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভুয়ো খবর বাতিল করা, সম্প্রীতি-সৌহার্দ্য রক্ষা করা, অন্যায় হলে প্রতিবাদ করা বা বিচার চাওয়া—অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলি সুশীল সমাজই করে! সেই সুশীল সমাজ, যারা কঠিন সময়ে আপনাদের সমর্থন করা সত্ত্বেও এখন আরজি করের ঘটনায় আপনাদের সমালোচনা করছে। তাই আপনারা অবলীলায় তাদের বিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশীদার হওয়ার আখ্যা দিচ্ছেন! যেমন নন্দীগ্রামের সময় তৎকালীন শাসকদল এই সুশীল সমাজকে তৃণমূলপন্থী বলেছিল বা এনআরসি ও সিএএ-র প্রতিবাদের সময়ে কেন্দ্রের শাসকদল আমাদের দেশবিরোধী বলে! নিজেদের বিন্দুমাত্র সমালোচনা শুনে প্রতিক্রিয়া জানানোর বেলায় বর্তমান শাসক, অতীতের শাসক , বড় বিরোধী, মেজো বিরোধী, হবু শাসক, কেন্দ্র, রাজ্য সবার ন্যারেটিভ এক! দাগিয়ে দাও। হয় এই রং, নইলে ওই রং! মাঝখান থেকে আসল বিষয় পিছনের সারিতে।’’ পরম আরও বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের ফলাফল, শাসক-বিরোধী বাইনারি, ক্ষমতার মসনদে বসার সঙ্কীর্ণ পরিসর, লাল-কমলা-হলদে-সবুজ ছাড়াও একটা রাজনীতি হয়। সেই রাজনীতি বৃহৎ বিশ্বভাবনার, বৃহত্তর দর্শনচিন্তার এবং সর্বোপরি মানবিকতার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE